কার্কি না ঘিসিং? নেপালের জেন-জিরা অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বে কাকে বেছে নেবে

নেপালে চলমান আন্দোলন ও সহিংসতায় এখন পর্যন্ত অন্তত ৩১ জন নিহত হয়েছেন। পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষের জেরে প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি পদত্যাগ করেছেন। এখন আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা তরুণ প্রজন্মের সামনে গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশ্ন হলো- অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বে কাকে চাইছেন তারা?
বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) কাঠমান্ডু থেকে আসা বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়, আন্দোলনকারীরা সাবেক প্রধান বিচারপতি ও দুর্নীতিবিরোধী কর্মী সুশীলা কার্কিকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে নির্বাচিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
জানা যায়, অস্থায়ীভাবে দেশ ও সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া সেনাবাহিনীর সঙ্গেও কার্কির আলোচনা শুরু হয়েছে।
এই খবরে আন্দোলনকারীদের একাংশ উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। কার্কি নিজেও অবশ্য অন্তর্বর্তী প্রশাসনিক দায়িত্ব নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।
তবে ২৪ ঘণ্টা না যেতেই আন্দোলনকারীদের একটি অংশ নতুন প্রস্তাব দেয়। তারা বিদ্যুৎ সংকট নিরসনের জন্য নেপালে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা প্রকৌশলী কুলমান ঘিসিংকে অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী করার দাবি জানিয়েছেন।
এক বিবৃতিতে তারা জানায়, ৭৩ বছর বয়সী সাবেক প্রধান বিচারপতি কার্কি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হতে পারবেন না, কারণ সংবিধান অনুযায়ী অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিরা বিচার বিভাগের বাইরে কোনো পদে নিয়োগ পেতে পারেন না। এছাড়া তার বয়স নিয়েও আপত্তি তোলা হয়।
অন্যদিকে ঘিসিংকে দেশপ্রেমিক এবং সেনাবাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করতে পারবে বলে মতামত দেন তারা।
এ নিয়ে আন্দোলনকারীদের মধ্যেই বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) বিকেলে সংঘর্ষ বেধে যায়।
২০১৫ সালে কার্যকর হওয়া নেপালের সংবিধানে এমন বিধান রয়েছে, যা কার্কি বা দেশটির সংসদ সদস্য নন এমন কারও অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথে বাধা হতে পারে। তবে সেই বাধা কাটানোর উপায় খোঁজা হচ্ছে বলে জানা যাচ্ছে।
অবশ্য প্রেসিডেন্ট রামচন্দ্র পৌডেলের বার্তাতেও সেই ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। তবে অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, আন্দোলনকারীদের বড় অংশই সুশীলা কার্কির পক্ষে।
এদিকে নেপালের অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বে সম্ভাব্য ঐকমত্য প্রার্থী হিসেবে উঠে আসছে কাঠমান্ডুর মেয়র বালেন্দ্র শাহের নাম। ৩৫ বছর বয়সী এই প্রকৌশলী ও রাজনীতিক তরুণ প্রজন্মের কাছে বেশ জনপ্রিয়।
তবে তিনি নেতৃত্ব নেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহী নন এবং প্রকাশ্যেই কার্কিকে অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সমর্থন জানিয়েছেন।
আবার বিক্ষোভকারীদের একটি ছোট অংশ কুশি প্রদেশের ছোট একটি শহরের মেয়র হিসেবে দুইবার নির্বাচিত হওয়া সামাজিক ও দুর্নীতিবিরোধী কর্মী হার্কা সাম্পাংয়ের নামও সামনে আনেন। তবে তার প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছে।
দেশটিতে অন্তর্বর্তী সরকারের কাঠামো এখনও নিশ্চিত নয়। নেপালের সংবিধানে অন্তর্বর্তী বা অস্থায়ী প্রশাসনের কোনো উল্লেখ নেই। ফলে কার্কি ও ঘিসিংয়ের প্রার্থিতার পথে এটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তবে যদি সংসদীয় বিকল্প না থাকে, তাহলে প্রেসিডেন্ট নিজের পছন্দে কাউকে মনোনীত করতে পারেন, অথবা যেকোনো সংসদ সদস্যকে প্রস্তাবিত করে আস্থা ভোটে দাঁড় করাতে পারেন। আস্থা ভোটে ব্যর্থ হলে সংসদ ভেঙে নতুন নির্বাচন আয়োজনের বিধান রয়েছে।
দেশটির পুরোনো রাজনৈতিক নেতাদের অদৃশ্য হয়ে যাওয়া অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের ক্ষেত্রে আরেকটি জটিলতা তৈরি করেছে ।
এই পরিস্থিতিতে আন্দোলনকারীদের স্পষ্ট বার্তা হলো- নতুন সরকার সেটা অন্তর্বর্তী হোক বা স্থায়ী , পুরোনো রাজনৈতিক নেতাদের দ্বারা প্রভাবিত করা যাবে না। কারণ দেশের বর্তমান দুর্দশার জন্য তারাই দায়ী।
সুশীলা কার্কিকে সমর্থনকারী জেন-জিরা অবশ্য সংবিধান পুরোপুরি পরিবর্তনের পক্ষে না।
অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী কে হবে সেটা নিয়ে তাদের মধ্যে মতভেদ থাকলেও তারা দেশটির নতুন এই পরিস্থিতিতে মৌলিক কিছু পরিবর্তন চান এটা স্পষ্ট।
এদিকে কাঠমান্ডুর রাস্তায় এখনো টহল দিচ্ছে সেনাবাহিনী। যদিও এতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি।
বিক্ষোভ শুরুর পর থেকে দেশটিতে অন্তত ৩১ জন নিহত হয়েছেন এবং প্রায় এক হাজার ৪০০ জন আহত হয়েছেন। বিক্ষোভকারীরা সংসদ ভবন এবং ঐতিহাসিক সরকারি কার্যালয় 'সিংহ দরবার'-এ হামলা চালিয়ে অগ্নিসংযোগও করেছে।