আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও পুলিশি ব্যবস্থা পুনরুদ্ধারই নির্বাচনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ: বদিউল আলম
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, 'অন্তর্বর্তী সরকারের কারো কারো কোনো দলের প্রতি আনুগত্য থাকলেও সরকার দলনিরপেক্ষ। তাই সকল হুমকি ও ঝুঁকি মোকাবেলা করে সরকার গণতন্ত্র উত্তরণের লক্ষ্যে জাতিকে একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দিতে পারবে বলে আশা করি।'
তিনি আরও বলেন, 'বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নির্বাচন উপযোগী রাখা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। ভেঙ্গে পড়া পুলিশি ব্যবস্থা পুনরুদ্ধার করতে হবে। ওসমান হাদি হত্যাচেষ্টার ঘটনায় আসন্ন নির্বাচন আয়োজন নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।'
শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) রাজধানীর এফডিসিতে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত 'আগামী নির্বাচনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহার প্রতিরোধ' নিয়ে এক ছায়া সংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র প্রসঙ্গে সুজন সম্পাদক বলেন, 'পরাজিত শক্তি পালিয়ে গেলেও তাদের দোসররা প্রতিনিয়ত হুমকি ও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করছে। তাই অপশক্তির বিরুদ্ধে সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।'
নির্বাচন কমিশনের সংস্কার ও রাজনৈতিক দলগুলোর দায়িত্ব সম্পর্কে তিনি বলেন, 'একটি ভালো নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা গুরুত্বপূর্ণ। কমিশন নির্বাচনী আইন অনুসরণে কোনো কোনো ক্ষেত্রে অনমনীয়তা দেখাতে পারেনি। নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের অঙ্গ সংগঠন ও বিদেশি শাখা নির্বাচনী আইনের লঙ্ঘন। দলগুলোকে এই ব্যবস্থা বিলুপ্ত করতে হবে। সুশাসনের ব্যর্থতা দূর করতে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে সাংবিধানিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার আবশ্যক। অর্থবিত্তের মালিক হওয়ার যুদ্ধে লিপ্ত না হয়ে রাজনীতিবিদদের সুশাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সুষ্ঠু ধারায় ফিরে আসতে হবে।'
প্রযুক্তির অপব্যবহার নিয়ে সতর্ক করে তিনি বলেন, 'কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) বর্তমান সময়ে একটা বিরাট সমস্যা। এর অপব্যবহার মানুষকে বিভ্রান্ত করে, এমনকি সুষ্ঠু নির্বাচন ও ফলাফলকে প্রভাবিত করতে পারে। তাই নির্বাচন কমিশন ও সরকারকে বিশেষ সেল করে এআই-এর নেতিবাচক প্রভাব মোকাবেলা করা জরুরি।'
ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ সাম্প্রতিক হামলা ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, 'তফসিল ঘোষণার ২৪ ঘন্টার মধ্যে ইনকিলার মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদিকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি প্রমাণ করছে নির্বাচন বানচাল করতে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা সক্রিয়। গণতান্ত্রিক অভিযাত্রাকে বাধাগ্রস্থ করতেই এই হামলা। যে কোনো মূল্যে এই ধরনের হামলার চেষ্টাকে প্রতিহত করতে হবে। হাদির ওপর হামলার ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে ফ্যাসিস্ট বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্য জরুরি। তা না হলে এই ধরনের অনাকাঙ্খিত ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে।'
তিনি আরও বলেন, 'কিছুদিন আগে চট্টগ্রামে বিএনপির একজন প্রার্থীকে ও সর্বশেষ ওসমান হাদিকে টার্গেট করে হত্যার চেষ্টা অপশক্তির চক্রান্ত ছাড়া আর কিছুই নয়। ওসমান হাদি হত্যাচেষ্টার ঘটনার পরপরই বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপি নেতৃবৃন্দের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক ফ্যাসিবাদ বিরোধী জাতীয় ঐক্য আরও সুদৃঢ় করবে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে আসার পর তার নিরাপত্তাকে সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া জরুরি। আমাদের প্রত্যাশা, তার প্রত্যাবর্তনের পর জুলাই অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশ বিনির্মাণে ফ্যাসিস্ট বিরোধী শক্তিগুলো আরও ঐক্যবদ্ধ হবে।'
উল্লেখ্য, অনুষ্ঠিত এই ছায়া সংসদে ঢাকা কমার্স কলেজকে পরাজিত করে বিজয়ী হয় হাজারীবাগ সরকারি কলেজ এর বিতার্কিকরা।
