একদিনে চট্টগ্রাম বন্দরে কমেছে ১২০০ কনটেইনার, রাজস্ব ঘাটতির শঙ্কা

কাস্টমস কর্মকর্তাদের কলম বিরতি কর্মসূচি প্রত্যাহারের পর চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার ডেলিভারি উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। ২০ মে থেকে ২২ মে পর্যন্ত প্রতিদিন গড়ে ৪ হাজার থেকে ৫ হাজারের বেশি কনটেইনার ডেলিভারি হয়েছে, যেখানে কর্মসূচি চলাকালে দৈনিক ডেলিভারির সংখ্যা ছিল ৩ হাজার থেকে ৩৫০০ টিইইউয়ের (কুড়ি-ফুট সমতুল্য ইউনিট) মধ্যে।
বন্দর কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, ১৯ মে ডেলিভারি হয়েছিল ৩ হাজার ৯২০ টিইইউ, ২০ মে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪ হাজার ৩৬৯ টিইইউ, ২১ মে ৪ হাজার ৫০৪ টিইইউ এবং ২২ মে ৫ হাজার ০১০ টিইইউ।
প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে পরদিন সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে এই হিসাব নেওয়া হয়।
২০ মে বন্দরের ইয়ার্ডে জমা ছিল ৪৪,২৩১ টিইইউ কনটেইনার। একদিন পর, ২১ মে তা কমে দাঁড়ায় ৪৩,০১২ টিইইউ—অর্থাৎ মাত্র একদিনেই কমেছে ১,২১৯ টিইইউ। তবে ২২ মে আবার সামান্য বেড়ে তা দাঁড়ায় ৪৩,০৭১ টিইইউ। এর আগে ১১ মে ইয়ার্ডে কনটেইনার ছিল ৩৬,৮০৯ টিইইউ, অর্থাৎ কলম বিরতির ১১ দিনের মধ্যে বন্দরে কনটেইনার বেড়েছে ৬,২৬২ টিইইউ।
চট্টগ্রাম বন্দরের ধারণক্ষমতা ৫৩,৫১৮ টিইইউ হলেও নির্বিঘ্ন বন্দর পরিচালনার জন্য ৩৫ হাজার টিইইউকে আদর্শ ধরা হয়। সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন, সংকট যদি পুরোপুরি সমাধান না হয়, তবে বন্দরে আবারও কনটেইনার জট তৈরি হতে পারে এবং পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে।
চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'কাস্টমস কর্মকর্তাদের আন্দোলনের কারণে আমদানি-রপ্তানি কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছিল। দ্রুত সমাধান না হলে দেশের অর্থনীতিতে এর মারাত্মক প্রভাব পড়বে।'
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা নিয়েও দেখা দিয়েছে শঙ্কা। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮০ হাজার ৪০২ কোটি টাকা। প্রথম দশ মাসের লক্ষ্যমাত্রা ৭০ হাজার ৬৩১ কোটি হলেও এখন পর্যন্ত আদায় হয়েছে ৬২ হাজার ৮১৮ দশমিক ৯২ কোটি টাকা, অর্থাৎ ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ২৯৬ দশমিক ৪৩ কোটি টাকা।
চট্টগ্রাম কাস্টমস এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের প্রথম যুগ্ম মহাসচিব মো. ওবায়দুল হক আলমগীর বলেন, 'কাস্টমস কর্মকর্তাদের কর্মবিরতির কারণে বন্দরে কনটেইনার জট তৈরি হয়েছে। ডকুমেন্ট মূল্যায়ন প্রক্রিয়ায় দেরি হচ্ছে, ফলে আমদানিকারকদের গুদামভাড়া ও সংরক্ষণে অতিরিক্ত খরচ গুনতে হচ্ছে। আমরা চাই দ্রুত স্থায়ী সমাধান।'
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের রাজস্ব আদায়ের পরিসংখ্যানেও কর্মসূচির প্রভাব স্পষ্ট। ১৩ মে আদায় হয়েছে ২৮৭ দশমিক ০৭ কোটি টাকা, ১৪ মে ৩২৭ দশমিক ০৬ কোটি, ১৫ মে ৩৭৪ দশমিক ৪৬ কোটি, ১৬ মে মাত্র ০ দশমিক ৫৪ কোটি, ১৭ মে ২০৫ দশমিক ৯২ কোটি, ১৮ মে ৩৪১ দশমিক ২৫ কোটি, ১৯ মে ২৭৫ দশমিক ৪৭ কোটি, ২০ মে ২৬০ দশমিক ৬৮ কোটি এবং ২১ মে আদায় হয়েছে ৩১৬ দশমিক ৯৭ কোটি টাকা।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের মুখপাত্র ও উপ-কমিশনার সাইদুল ইসলাম জানান, কলম বিরতি কর্মসূচি ৩টা পর্যন্ত থাকলেও অনেক সিএন্ডএফ এজেন্ট পরে আসায় আমরা রাত ৮টা পর্যন্ত কাগজপত্র প্রসেস করেছি। এতে রাজস্বে বড় কোনো প্রভাব পড়েনি।
তবে তিনি দাবি করেন, কিছু পণ্যের খালাস ও মূল্যায়নে বিলম্ব হলেও এখন পর্যন্ত বড় ধরনের কোনো বিপর্যয় ঘটেনি।