সব বাণিজ্য সংগঠনে সরাসরি ভোট হবে, টানা তিন মেয়াদে নির্বাচিত হতে পারবেন না কেউ

ফেডারেশন অভ বাংলাদেশ চেম্বার অভ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজসহ (এফবিসিসিআই) দেশের সব বাণিজ্য সংগঠনে সভাপতি, সহসভাপতিসহ সমস্ত পদে সরাসরি ভোটে নির্বাচন এবং পরপর দুইবার নির্বাচিত হলে কেউ তৃতীয় মেয়াদে নির্বাচন করতে পারবেন না—এসব বিধান করে বাণিজ্য সংগঠন বিধিমালা, ২০২৫ জারি করেছে সরকার।
নতুন বিধিমালার আওতায় এফবিসিসিআইয়ের পরিচালনা পর্ষদে সভাপতিসহ পরিচালক সংখ্যা ৪৬ জনে নামিয়ে আনা হয়েছে। এর মধ্যে চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশন থেকে ১৫ জন করে মোট ৩০ জন সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হবেন।
এছাড়া এই দুই গ্রুপ থেকে ৫ জন করে মোট ১০ জন মনোনীত পরিচালক নির্বাচন করবেন সরাসরি ভোটে নির্বাচিত পরিচালকরা। এর বাইরে উইমেন চেম্বার অভ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি থেকে একজন এবং উইমেন অ্যাসোসিয়েশন থেকে একজন মনোনীত পরিচালক নির্বাচিত হবেন।
এতদিন এফবিসিসিআইয়ের পরিচালনা পর্ষদে পরিচালক থাকতেন ৮০ জন, যাদের মধ্যে ৩৪ জন মনোনীত হতেন। একজন প্রেসিডেন্ট, একজন সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ছাড়াও চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশন থেকে তিনজন করে মোট ছয়জন ভাইস প্রেসিডেন্ট মনোনীত হতেন। নতুন বিধিমালায় চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশন থেকে একজন করে মোট দুজন ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন।
মনোনীত পরিচালক নির্বাচনের বিষয়ে বিধিমালায় বলা হয়েছে, নির্বাচিত পরিচালনা পর্ষদ তাদের প্রথম সভায় চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশনের বিনিয়োগের পরিমাণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং সরকারি কোষাগারে বছরে কী পরিমাণ রাজস্ব দেয়, তা বিবেচনায় নিয়ে উপস্থিত পরিচালকদের সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে চেম্বারগুলো থেকে ৫ জন এবং অ্যাসোসিয়েশনগুলো থেকে ৫ জন পরিচালকসহ দুই নারী পরিচালক মনোনীত হবেন।
কোনো চেম্বার বা অ্যাসোসিয়েশন থেকে একজনের বেশি পরিচালক মনোনয়ন দেওয়া যাবে না এবং মনোনীত পরিচালকদের অবশ্যই এফবিসিসিআইয়ের সাধারণ পরিষদের সদস্য হতে হবে।
বাণিজ্য সংগঠনের নির্বাচনে প্রক্সির মাধ্যমে ভোটদান নিষিদ্ধ করে নতুন বিধিমালায় বলা হয়েছে, সব বাণিজ্য সংগঠনের নির্বাচনে ভোটদানের অধিকারী ব্যক্তিরা ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত হয়ে ভোট দেবেন।
বিধিমালায় আরও বলা হয়েছে, সব বাণিজ্য সংগঠনের নির্বাহী কমিটি বা পরিচালনা পর্ষদের মেয়াদ হবে দায়িত্ব গ্রহণের তারিখ থেকে ২৪ মাস। পর্ষদের কোনো ব্যক্তি পরপর দুই মেয়াদ শেষে একটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে পরবর্তী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন।
গত বছরের ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর এফবিসিসিআইয়ের প্রেসিডেন্ট পদত্যাগ করলে সরকার সংগঠনটিতে প্রশাসক নিয়োগ করে। তবে বাণিজ্য সংগঠন বিধিমালা চূড়ান্ত হতে দেরি হওয়ায় এখনও সংগঠনটিতে নির্বাচন হয়নি।
এফবিসিসিআইয়ের প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান বুধবার টিবিএসকে বলেন, বাণিজ্য সংগঠন বিধিমালার গেজেট জারি হয়েছে। খুব শিগগিরই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে।
মনোনীত পরিচালকদের নিয়ে বিতর্ক
বিভিন্ন ব্যবসায়িক নেতারা অভিযোগ তুলেছেন, প্রভাবশালী ও সরকারঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীরা নিজেদের সুবিধার্থে ভিন্ন ভিন্ন নামে সংগঠন গঠন করে এনবিআর বোর্ডে মনোনীত পরিচালক পদ দখল করে আসছেন, যার ফলে মনোনীত পরিচালকের সংখ্যা ক্রমাগত বেড়েছে।
ব্যবসায়ী নেতারা স্মরণ করিয়ে দেন, ১৯৯৪ সালে সালমান এফ রহমান সাধারণ পরিষদের ভোটে সরাসরি এফবিসিসিআই সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরে নির্বাচনী কাঠামো কিছুটা বদলে যায়—পরিষদের সদস্যরা ভোটে পরিচালক নির্বাচন করতে থাকেন, আর সভাপতি ও সহসভাপতি নির্বাচিত হতেন পরিচালকদের মাধ্যমে।
২০০১ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত তৎকালীন বাণিজ্যমন্ত্রী আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীর আমলে এক নতুন বিধান চালু হয়। এর আওতায় বড় বাণিজ্য সংগঠনগুলোর নেতারা—যারা সাধারণ পরিষদের ভোটে জিততে পারতেন না—মনোনয়নপ্রাপ্ত পরিচালক হিসেবে এফবিসিসিআই বোর্ডে আসতে শুরু করেন।
সে সময় বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ), বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ), ঢাকা চেম্বার অভ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) ও মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই), ঢাকাসহ আটটি প্রধান বাণিজ্য সংগঠন এই বোর্ডে মনোনয়ন পেয়েছিল। বাকি পরিচালকরা ছিলেন নির্বাচিত।
এরপর প্রতি বছর এক-দুইজন করে মনোনীত পরিচালকের সংখ্যা বাড়তে থাকে। ২০০৮ সালে আনিসুল হক সভাপতি থাকাকালে পরিচালকের সংখ্যা ছিল ৩৮; যা পরে ধাপে ধাপে বাড়তে বাড়তে ৮০-তে পৌঁছে যায়।