আমরা আগাম উদযাপন করছি: মার্কিন শুল্ক নিয়ে ব্যবসায়ী নেতারা

ব্যবসায়ী নেতারা মার্কিন শুল্ক হ্রাসকে ঘিরে উদযাপনকে আগাম উদযাপন বলে অভিহিত করেছেন এবং অতিরিক্ত আত্মতুষ্টিতে না ভোগার আহ্বান জানিয়েছেন।
মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই)–এর সাবেক সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, 'আমি মনে করি মার্কিন শুল্ক ইস্যুতে এটি একটি আগাম উদযাপন, কারণ আমাদের প্রতিযোগী দেশগুলোর ওপর কী হারে শুল্ক আরোপ করা হবে, তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।'
আজ (১৪ আগস্ট) রাজধানীর একটি হোটেলে ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স বাংলাদেশ আয়োজিত 'এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন: সাম অপশন্স ফর বাংলাদেশ' শীর্ষক সেমিনারে তিনি এ মন্তব্য করেন।
গত এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া কয়েক দফা আলোচনার পর ৩১ জুলাই বাংলাদেশ থেকে আমদানিকৃত পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত ৩৭ শতাংশ শুল্ক কমিয়ে ২০ শতাংশে-এ আনা হয়।
এছাড়া, ৬ আগস্ট অর্থ উপদেষ্টা সালাহউদ্দিন আহমেদ ইঙ্গিত দেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে পাল্টা এই শুল্ক আরও কমানোর চেষ্টা করা হবে, যেহেতু এ বিষয়ে চূড়ান্ত চুক্তি এখনও সই হয়নি।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)–এর সভাপতি তাসকিন আহমেদ বলেন, 'এখানে আত্মতুষ্ট হওয়ার কিছু নেই, কারণ আলোচনা এখনো চলছে।'
তিনি আরও বলেন, 'সম্ভবত ভারত ভবিষ্যতে তাদের বর্তমান ৫০ শতাংশ শুল্ক কমিয়ে ১৫ শতাংশে-এ নামিয়ে আনতে সক্ষম হবে, যা তাদের বাংলাদেশ থেকে বেশি প্রতিযোগিতামূলক করে তুলবে।'
আলোচনায় অংশ নেওয়া ব্যবসায়ী নেতারা আরও বলেন, 'বাংলাদেশ এখনও স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বের হওয়ার জন্য প্রস্তুত নয়।' এখন এলডিসি থেকে বের হয়ে আসা দেশের জন্য 'আত্মঘাতী' হবে বলে মন্তব্য করেন তারা।
তারা সরকারের প্রতি এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন ৩ থেকে ৬ বছর পিছিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান।
বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই)–এর সাবেক সভাপতি একে আজাদ বলেন, '২০২৬ সালের নভেম্বরে নির্ধারিত সময়ে এলডিসি থেকে বের হলে তা আত্মঘাতী হবে। আমরা এমন কোনো সিদ্ধান্ত চাই না যা অর্থনীতিতে চাপ সৃষ্টি করবে বা রপ্তানিতে ক্ষতি ডেকে আনবে।'
তিনি আরও বলেন, 'আমাদের অর্থনীতি এখনও নাজুক অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়ায়নি। খেলাপি ঋণ বর্তমানে ৫.৩০ লাখ কোটি টাকা, যা আরও বাড়বে। প্রায় ১ হাজার ২০০ কারখানা ঋণ পুনঃতফসিলের আবেদন করেছে। ইউরোপ, কানাডা ও জাপানের মতো গুরুত্বপূর্ণ বাজারে আমাদের শুল্কও বেড়ে যাবে।'
সরকারের এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের পর প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ (এফডিআই) বাড়ার বক্তব্যের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'গ্যাস সংকটের মতো চলমান সমস্যা থাকলে আমরা যদি টিকেই না থাকতে পারি, তাহলে এফডিআই আসবে কীভাবে?'
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আইসিসি বাংলাদেশের সভাপতি মো. মাহবুবুর রহমান। বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু, অর্থনীতিবিদ ও অন্যান্য ব্যবসায়ী নেতারা আলোচনায় অংশ নেন।