ঋণের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে আইএমএফের সঙ্গে সন্ধ্যা ৬টায় বৈঠক

বৈদেশিক মুদ্রা বা ডলারের বিনিময় হারে আরও উদারীকরণের দিকে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে আজ সোমবার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
এদিন সন্ধ্যা ৬টায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কার্যালয়েই এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে চলেছে।
বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধিত্ব করবেন গভর্নর আহসান এইচ মনসুর এবং এবিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর দুজন ডেপুটি গভর্নর।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, 'আজকের বৈঠকের ওপরই নির্ভর করছে (আইএমএফের ঋণ কর্মসূচির) পরবর্তী কিস্তি ছাড়। কারণ এর আগে ওয়াশিংটনে আইএমএফ-বিশ্বব্যাংকের বসন্তকালীন বৈঠকে এনিয়ে কোনো ঐকমত্যে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি।'
নমনীয় মুদ্রা বিনিময় হার চালুর বিষয় নিয়েই আইএমএফের সঙ্গে ঋণের কিস্তি ছাড়ের আলোচনায় অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে, এতে আটকে রয়েছে ১৩০ কোটি ডলার ছাড়। আইএমএফের মোট ঋণ কর্মসূচির আকার ৪৭০ কোটি ডলার।
আইএমএফ ফ্রি ফ্লোটিং বিনিময় হার গ্রহণের কথা বলছে। ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত বৈঠকেও সংস্থাটির পক্ষ থেকে এধরনের আহ্বান জানানো হয়, যা মেনে নেননি গভর্নর মনসুর।
বর্তমানে দেশের মোট রিজার্ভ ২১ বিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি, যা দিয়ে মাত্র চার মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে। তবে আইএমএফ রিজার্ভ থেকে বেশকিছু দায় বাদ দিয়ে নেট বা প্রকৃত আন্তর্জাতিক রিজার্ভ (এনআইআর) হিসাব করে, যা একটি প্রধান মানদণ্ড-ও।
ঢাকায় আইএমএফের সাম্প্রতিক পর্যালোচনা মিশনের সফরকালে, বাংলাদেশ ব্যাংক একটি তহবিল তৈরির জন্য এনআইআর ফ্লোর বাতিলের প্রস্তাব দেয়। এবিষয়ে আইএমএফ এখনো সাড়া না দিলেও, এবিষয়ে জুন নাগাদ একটি সমঝোতায় পৌঁছানোর আশা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা সতর্ক করে বলেছিলেন, হঠাৎ করে ফ্রি ফ্লোটিং বিনিময় হার চালু হলে বাজার বিঘ্নিত হবে। কারণ তখন বাড়তি দরে ডলার কিনে কিনে দাম বাড়িয়ে দেবে অ্যাগ্রিগেটররা।
তিনি বলেন, "মূল্যস্ফীতি এখনো উচ্চ, এরমধ্যে আমাদের অস্থিতিশীলতা এড়াতে হবে। ওই তহবিল গঠন করা গেলে আমরা বাজারে ডলার দিতে পারব এবং দরের কারসাজি রোধ করতে পারব।"
এক্ষেত্রে ভারতের মডেলের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, পুজির বহির্গমন ও বাণিজ্য নিয়ে অনিশ্চিয়তার মধ্যে—- রুপির দর স্থিতিশীল রাখতে ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া প্রায়ই বৈদেশিক মুদ্রা বাজারে হস্তক্ষেপ করে।
সাম্প্রতিক একটি ঘটনারও উদাহরণ দেন তিনি, যখন খোলা মুদ্রাবাজারকে পাশ কাটিয়ে সরাসরি কাতার থেকে জ্বালানি আমদানির মূল্য পরিশোধ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে যারা ডলার জমা করে রেখেছিল— তারা কম দরেই বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছে। ফলে ডলারের বিনিময় হার ৫০ থেকে ৬০ পয়সা পর্যন্ত কমে।
গত শনিবার প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেন, আইএমএফ ঋণের পরবর্তী কিস্তি ছাড়ের জন্য অতিরিক্ত শর্ত চাপিয়ে দিলে বাংলাদেশ সরে আসবে।
তিনি বলেন, "আইএমএফ যদি অতিরিক্ত শর্ত দেয়, তবে বাংলাদেশ আর এই ঋণ নিতে আগ্রহী থাকবে না। কারণ সব শর্ত মানতে গেলে দেশের অর্থনীতি আরও দুর্বল হয়ে পড়বে।"