ড্রেস কোড বিতর্ক: বাংলাদেশ ব্যাংক কি জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে?

ড্রেস কোড সম্পর্কিত বিতর্কিত নির্দেশনাটি নিয়ে তীব্র সমালোচনার মুখে বাংলাদেশ ব্যাংক অবশেষে সেটি প্রত্যাহার করেছে। সার্কুলারে নারী কর্মীদের ছোট হাতার জামা, ছোট দৈর্ঘ্যের পোশাক ও লেগিংস পরা নিরুৎসাহিত করা হয় এবং তাদের সাদামাটা হিজাব বা মাথার ওড়না পরার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল।
২১ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মন্সুরের অনুপস্থিতিতে এবং তাঁর অনুমোদন ছাড়াই এ নির্দেশনাটি জারি করা হয়েছিল। দেশের বাইরে থাকা গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) ভোররাতে ফোনে বলেন, 'আমি সংবাদটি দেখে বিস্মিত হয়েছি। আমি বর্তমানে দেশের বাইরে আছি। ফিরে এসে অবশ্যই বিষয়টি দেখব।'
তবে এই নির্দেশনার কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হলেও এবং সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় ওঠার পরও এখন পর্যন্ত ওই বিতর্কিত সিদ্ধান্তে জড়িত কারও বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
ড্রেস কোড সংক্রান্ত এই নির্দেশনাটি বাংলাদেশ ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ডেপুটি গভর্নর মো. জাকির হোসেন চৌধুরীর অনুমোদনে জারি করা হয়। এই বিভাগের পরিচালক পদে আছেন নাসিমা সুলতানা এবং নির্বাহী পরিচালক হিসেবে আছেন মো. সিরাজুল ইসলাম।
সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনার পর বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দেন, যেটিও সমালোচনার জন্ম দেয়।
২৪ জুলাই প্রথমে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে দেওয়া এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, 'পরামর্শমূলক এই নির্দেশনার মাধ্যমে অফিসে অতিশয় কারুকার্যময় পোশাককে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে এবং বোরখা ও হিজাব পরাকে বৈধতা দেওয়া হয়েছে।'
তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি সেই বিবৃতির সংশোধিত সংস্করণ প্রকাশ করেন, যেখানে বোরকা বা হিজাব পরার অনুমতি সম্পর্কিত বক্তব্য বাদ দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের সঙ্গে কথা বলার সময় নারী কর্মীদের পোশাক সংক্রান্ত নির্দেশনা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। তারা বলেন, কর্মক্ষেত্রে শুধু ফরমাল পোশাক পরার পরামর্শ দিলেই যথেষ্ট ছিল।
যা ছিল সেই নির্দেশনায়
নারী কর্মীদের জন্য শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ ও ওড়না বা অনুরূপ মার্জিত ও পেশাদার পোশাক পরার পরামর্শ দেওয়া হয়। ছোট হাতা জামা, ছোট দৈর্ঘ্যের পোশাক ও লেগিংস পরা নিরুৎসাহিত করা হয়। তাদের ফরমাল জুতা বা স্যান্ডেল পরার অনুমতি দেওয়া হয় এবং ইচ্ছা করলে সাদামাটা হিজাব বা মাথার ওড়না পরার বিষয়টিও উল্লিখিত হয়।
পুরুষ কর্মীদের জন্য জিন্স ও গ্যাবার্ডিন পরা নিরুৎসাহিত করা হয় এবং ফুলস্লিভ বা হাফস্লিভ ফরমাল শার্ট ও ফরমাল প্যান্ট পরার নির্দেশনা দেওয়া হয়। নির্দেশনায় বলা হয়, ড্রেস কোড লঙ্ঘনকে শৃঙ্খলা ভঙ্গ হিসেবে গণ্য করা হতে পারে।
মুখপাত্র আরিফ হোসেন বলেন, 'এ নির্দেশনার লক্ষ্য হলো কর্মস্থলে সামঞ্জস্য ও ঐক্য রক্ষা করা এবং কোনো মানসিক অস্বস্তি এড়ানোই এর উদ্দেশ্য।'
তাছাড়া, যেকোনো পেশাদার পরিবেশে পুরুষ ও নারী কর্মীদের জন্য মার্জিত পোশাক বাধ্যতামূলক।"
তিনি আরও বলেন, "নারী কর্মীদের ক্ষেত্রে, ছোট হাতা জামা, ছোট দৈর্ঘ্যের পোশাক ও লেগিংস পরা নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। তবে কাউকে হিজাব পরতে বাধ্য করা হয়নি।"
তবে এই নির্দেশনার আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের কেউ কি অশোভন পোশাক পরেছিলেন—এমন প্রশ্নে মুখপাত্র বলেন, 'না, কেউ পরেননি।'
তাহলে এই নির্দেশনার প্রয়োজনীয়তা কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রতি ব্যাচে ২০০-২৫০ নতুন কর্মকর্তা যোগ দেন, যারা সদ্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে আসেন। তাদের অনেকের আচরণে এখনো বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের ছাপ দেখা যায়। তাই সিনিয়র ও জুনিয়র কর্মকর্তাদের মধ্যে বন্ধন গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে এই নির্দেশনা জারি করা হয়।'
তবে পরবর্তীতে সার্কুলার প্রত্যাহারের পর আরিফ হোসেন বলেন, 'বাংলাদেশ ব্যাংকে কর্মরত সকল স্তরের কর্মকর্তাদের সামাজিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় বৈঠকে পেশাদার ও মার্জিত পোশাক পরার পরামর্শ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।'
'তবে এ বিষয়ে কোনো নীতিগত সিদ্ধান্ত কিংবা কোনো নির্দেশনা জারি করা হয়নি,' বিবৃতিতে বলেন তিনি।