চলতি অর্থবছরের জুলাই-মার্চে প্রচলিত বাজারে পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ১০.৮৪ শতাংশ

২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়কালে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক (আরএমজি) রপ্তানি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১০.৮৪ শতাংশ বেড়ে ৩০.২৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। আজ (১৭ এপ্রিল) রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সর্বশেষ তথ্যে এ চিত্র উঠে এসেছে।
এই শক্তিশালী প্রবৃদ্ধির পেছনে মূল অবদান রেখেছে প্রচলিত বাজারগুলো—বিশেষ করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও কানাডা।
এই সময়কালে মোট তৈরি পোশাক রপ্তানির ৪৯.৮২ শতাংশই হয়েছে ইইউতে। এ সময়ে ইইউ থেকে রপ্তানি আয় এসেছে ১৫.০৭ বিলিয়ন ডলার, আগের গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১১.৩১ শতাংশ বেশি।
জুলাই-মার্বাংচ সময়ে লাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক বাজার যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে এরচেয়েও বেশি, ১৭.২৩ শতাংশ। এ সময় দেশটিতে বাংলাদেশের মোট পোশাক রপ্তানি ছিল ৫.৭৪ বিলিয়ন ডলার।
যুক্তরাজ্য ও কানাডায় রপ্তানি হয়েছে যথাক্রমে ৩.৩৬ বিলিয়ন ও ৯৬৩.৮৫ মিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে কানাডায় রপ্তানিতে ১৫.৬৬ শতাংশ ও যুক্তরাজ্যে ৪.১৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ-এর সাবেক সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, 'এই প্রবৃদ্ধি আমাদের শিল্পের দৃঢ়তা এবং দীর্ঘমেয়াদি প্রস্তুতিরই প্রতিফলন।
'আমাদের কারখানাগুলো উদ্ভাবন, সাসটেইনেবিলিটি ও দক্ষতায় বিনিয়োগ করছে—এতেই ক্রেতারা অর্ডার বাড়াতে আস্থা পাচ্ছেন। এছাড়া বৈশ্বিক সোর্সিংয়ে পরিবর্তনের ফলে, বিশেষ করে চীনের ওপর নির্ভরতা কমাতে গিয়ে ক্রেতাদের প্রচেষ্টার ফলেও আমরা লাভবান হচ্ছি।'
ইইউয়ের প্রধান বাজারগুলোতে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এ বাজার থেকে জার্মানি ৩.৮০ বিলিয়ন ডলারের পোশাক আমদানি করেছে। এছাড়া স্পেন ২.৬৫ বিলিয়ন ডলার, ফ্রান্স ১.৬৫ বিলিয়ন ডলার, নেদারল্যান্ডস ১.৬১ বিলিয়ন ডলার ও পোল্যান্ড ১.২৬ বিলিয়ন ডলারের পোশাক আমদানি করেছে।
নেদারল্যান্ডসে তৈরি পোশাকের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ২৩.১৫ শতাংশ, সুইডেনে প্রবৃদ্ধি ১৯.৯৬ শতাংশ, ডেনমার্কে প্রবৃদ্ধি ১২.৮০ শতাংশ ও ফ্রান্সে প্রবৃদ্ধি ১০.৭৫ শতাংশ।
রপ্তানি বেড়েছে অপ্রচলিত বাজারেও
পোশাক রপ্তানির বড় অংশই প্রচলিত বাজারে হলেও অপ্রচলিত বাজারগুলোতেও ৬.৬৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। জুলাই-মার্চ সময়কালে অপ্রচলিত বাজারে মোট ৫.১২ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে, যা মোট রপ্তানির ১৬.৯৩ শতাংশ।
এর মধ্যে জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও ভারত বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। জাপানে রপ্তানি হয়েছে ৯৬০.৪৫ মিলিয়ন ডলার, অস্ট্রেলিয়ায় ৬৫৩.৬৪ মিলিয়ন ডলার ও ভারতে ৫৩৫.১৫ মিলিয়ন ডলারের পোশাক।
ল্যাটিন আমেরিকা ও ইউরেশিয়াতেও বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি বাড়ছে। মেক্সিকো ও তুরস্কে রপ্তানিতে যথাক্রমে ২৩.৪৪ শতাংশ ও ৩২.৫৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
তবে এই সময়কালে রাশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) ও মালয়েশিয়ায় রপ্তানি কমেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব দেশে রপ্তানি কমার অন্যতম কারণ ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং বাণিজ্যনীতির পরিবর্তন।
রাশিয়ায় রপ্তানি কমার মূল কারণ ইউক্রেনের সঙ্গে চলমান যুদ্ধ। অন্যদিকে আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়ায় রপ্তানি হ্রাস পাওয়ায় বোঝা যাচ্ছে, এই বাজারগুলোতে আরও কৌশলী পদক্ষেপ নিতে হবে।
এই সময়কালে একাধিক সমন্বিত উন্নয়ন উদ্যোগের প্রভাব পড়েছে রপ্তানিতে। পরিবেশবান্ধব উৎপাদনের জন্য বিশ্বজুড়ে সুনাম অর্জন করেছে বাংলাদেশ। দেশে এখন লিড সনদপ্রাপ্ত সবুজ কারখানার সংখ্যা ২০০-র বেশি।
ক্রেতারা কেবল কম দামের জন্য নয়, নৈতিক উৎপাদন এবং সামাজিক ও পরিবেশগত মানদণ্ড মেনে চলার কারণেও বাংলাদেশ থেকে পণ্য কেনা বাড়াচ্ছে।
এছাড়া দক্ষতা বৃদ্ধি, কর্মীদের প্রশিক্ষণ এবং আধুনিক প্রযুক্তিতে বিনিয়োগও বড় অর্ডার দ্রুত সময়ের মধ্যে সামাল দিতে সাহায্য করছে।ফারুক বলেন, 'ক্রেতারা এখন শুধু দাম দেখে না—সাসটেইনেবিলিটি, নির্ভরযোগ্যতা ও সোশ্যাল কমপ্লায়েন্সের ওপর বেশি গুরুত্ব দেয়। বাংলাদেশ এই তিনটিতেই এগিয়ে—এটাই দীর্ঘমেয়াদি প্রবৃদ্ধির দিকে এগিয়ে নিচ্ছে।'