আমদানি বাড়ার পরও চালের দাম চড়া

গত নভেম্বর থেকে চাল আমদানি চালু হয়েছে, বাজারে এসেছে আমন মৌসুমের নতুন চাল, তবু চালের দাম এখনও চড়া। নভেম্বর থেকে এ পর্যন্ত ৮ লাখ ২০ হাজার টন চাল আমদানি হয়েছে, তবু খুচরা বাজারে দাম ইতিহাসের অন্যতম সর্বোচ্চ।
ঢাকার বাজারে মোটা গুটিস্বর্ণা বিক্রি হচ্ছে ৫৪ থেকে ৫৬ টাকা কেজি, মাঝারি পাইজাম ও ব্রি-২৮ চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৬ থেকে ৬৪ টাকায়, আর মিনিকেটের মতো সরু চালের দাম ৮২ থেকে ৯০ টাকা কেজি। গত রমজান থেকে এই দামে বিক্রি হচ্ছে চাল।
ট্রেডিং কর্পোরেশন অভ বাংলাদেশ-এর (টিসিবি) তথ্য বলছে, গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এখন সরু চালের দাম ১১.৩৫ শতাংশ বেশি। মাঝারি ও মোটা চালের দাম বেড়েছে যথাক্রমে ৮.৮৫ শতাংশ ও ২.৯৪ শতাংশ।
পাইকাররা আশা করছেন, বোরো মৌসুমের চাল বাজারে এলে দামে কিছুটা স্বস্তি মিলতে পারে।
কারওয়ান বাজারের পাইকারি বিক্রেতা মো. শাওন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড কে বলেন, 'রমজানে দাম সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে, এরপর আর কমেনি। এখন বোরোর চাল আসছে, সামনে হয়তো দাম কমবে।'
২০২৩-২৪ অর্থবছরে চাল আমদানি না হলেও এর আগের বছরগুলোতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে আমদানি হয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১০.৫৬ লাখ টন, ২০২১-২২ অর্থবছরে ৯.৮৮ লাখ টন ও ২০২০-২১ অর্থবছরে ১৩.৫৯ লাখ টন চাল আমদানি হয়েছিল।
তবে আমদানিকারকরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেশি হওয়ায় দেশের বাজারে আমদানির প্রভাব কম পড়ছে। চাল আমদানিকারক ও মিলার চিত্ত মজুমদার বলেন, 'চাল আমদানি করে লাভ হয় না। স্বর্ণা চাল আমদানি করতেই কেজিতে ৫০-৫১ টাকা খরচ পড়ে। তার সঙ্গে পরিবহনসহ নানা খরচ মিলিয়ে লাভ থাকে না। বিশেষ করে মাঝারি বা মোটা চালের ক্ষেত্রে কোনো লাভই থাকে না।'
চলতি মৌসুমে সরকার ধানের সংগ্রহমূল্য কেজিপ্রতি ৪ টাকা বাড়িয়ে ধানের জন্য ৩৬ টাকা এবং সিদ্ধ চালের জন্য ৪৯ টাকা নির্ধারণ করেছে। সংগ্রহের লক্ষ্য ৩.৫ লাখ টন ধান ও ১৪ লাখ টন চাল।
প্রথাতভাবেই ফসল কাটার সময় চালের দাম কমে। কিন্তু কিছু ব্যবসায়ী আশঙ্কা করছেন, সরকারের ক্রয়মূল্য বাড়ায় এ বছর চালের দাম বেশিই থাকবে।
কারওয়ান বাজারের আরেক পাইকার মোশাররফ হোসেন বলেন, 'সরকার দাম বাড়িয়েছে, তাই বোরোর চালও দাম খুব একটা কমাতে পারবে না।'
গত কয়েক মৌসুমে রেকর্ড পরিমাণ ধানের ফলন হলেও—আমন মৌসুমে ১.৭১ কোটি টন ও বোরো মৌসুমে ২.১০ কোটি টন—ভোক্তারা মানুষ এর সুফল পায়নি। বিশ্লেষকরা বলছেন, বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকারি মজুতের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।
গত নভেম্বরে সরকারিভাবে মজুত কমে যাওয়ায় বাজার অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে। পরে আমদানি শুরু হলেও আন্তর্জাতিক বাজারে দাম চড়া থাকায় দেশের বাজারে এই আমদানির প্রভাব পড়েনি। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে সরকারি মজুত ৯.৪৯ লাখ টনে দাঁড়িয়েছে।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাগ্রিবিজনেস অ্যান্ড মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম টিবিএস কে বলেন,
'সরকারি মজুত কমলে মিল পর্যায়ে দাম বেড়ে যায়। আমদানি যদি আরও আগে শুরু হতো, তাহলে এতটা দাম বাড়ত না। টাইমিংটাই আসল।'
বাড়তি দামে ইলিশ
পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে চাহিদা বাড়ায় ঢাকার বাজারে ইলিশের দাম হয়েছে আকাশচুম্বী।
শুক্রবার (১১ এপ্রিল) রাজধানীর মহাখালী, উত্তর বাড্ডা কাঁচাবাজার, শাহজাদপুর ও কারওয়ানবাজার ঘুরে ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ৪৫০ গ্রাম থেকে ৫০০ গ্রাম ওজনের প্রতি কেজি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকায়। ৫৫০ গ্রাম থেকে ৬৫০ গ্রাম ওজনের মাছ ১ হাজার ৭০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা এবং এক কেজি কিংবা তার থেকে একটু বেশি ওজনের প্রতি কেজি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৩০০ টাকায়।
বেড়েছে সবজির দামেও
এদিকে রোজাজুড়ে স্বস্তি দেওয়া সবজির দামও বেড়েছে। অধিকাংশ সবজির দাম কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি সবজি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়।
কাঁকরোলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকায়। লতি-বরবটি বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়। প্রতি কেজি বেগুন-করলা বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা। কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। এছাড়া প্রতি কেজি পটল বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা, ভেন্ডি ৭০ টাকায়। সবচেয়ে কাম দামের সবজি পেঁপে বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়, আলু ২৫-৩০ টাকা ও প্রতি কেজি কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়।