আশুগঞ্জ মোকামে বেড়েছে ধানের সরবরাহ, কমতে পারে চালের দর

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ মোকামে ধানের সরবরাহ বাড়তে শুরু করেছে। এর ফলে কমতে শুরু করেছে ধানের দাম। গেল এক সপ্তাহে সব জাতের ধানের দাম মণপ্রতি কমেছে ২০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত। এর ফলে চালের বাজারেও ইতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ধানের দাম আরও কমলে চালের বাজারও নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।
আশুগঞ্জের মেঘনা নদীর পাড়ে শত বছরেরও বেশি সময় ধরে ধানের হাট বসছে। এটিকে দেশের পূর্বাঞ্চলের সবচেয়ে বড় ধানের মোকাম হিসেবে ধরা হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়া ছাড়াও হাওরাঞ্চলের অন্তত ৭ জেলার কৃষকের কাছে থেকে ধান কিনে মোকামে এনে বিক্রি করেন ব্যবসায়ীরা। জেলার আড়াইশ চালকলে ধানের যোগান আসে এখান থেকে। যদিও চাহিদা বিবেচনায় দেশের অন্যান্য মোকাম থেকেও ধান আনেন চালকল মালিকরা। জেলার চালকলগুলো থেকে প্রতিদিন অন্তত ১০ কোটি টাকার চাল বাজারজাত করা হয় ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের জেলাগুলোতে।
ধানের মৌসুমে আশুগঞ্জ মোকামে প্রতিদিন গড়ে ১ লাখ মণ ধান কেনাবেচা হয়। আর বাকি সময় বেচাকেনা নামে অর্ধেকে। প্রতিদিন ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত চলে কেনাবেচা। বর্তমানে মোকামে বিআর-২৮, বিআর-২৯ ও মোটা জাতের ধান পাওয়া যাচ্ছে। প্রতিদিন অর্ধশতাধিক ধানবোঝাই নৌকা আসছে মোকামে।
প্রতিমণ বিআর-২৮ ধান ১,৪৪০ টাকা, বিআর-২৯ ধান ১,৩৫০ টাকা এবং মোটা ধান প্রতিমণ কেনাবেচা হচ্ছে ১,১৫০ টাকা দরে।
আর ধানের বাজারদর কিছুটা কমায় স্থিতিশীল হচ্ছে চালের বাজারও। বর্তমানে বিআর-২৮ জাতের চাল প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) ২,৮৬০ টাকা ও বিআর-২৯ চাল কেনাবেচা হচ্ছে ২,৭৬০ টাকায়।
ধান ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, মূলত ঈদুল আজহার পর থেকেই বৈরী আবহাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে মোকামে ধানের আমদানি কমতে থাকে। বিশেষ করে, কৃষকরা দাম বাড়ার অপেক্ষায় ধান বিক্রি কমিয়ে দিয়েছিলেন—যার প্রভাব পড়ে মোকামে ধানের দরে। তখন সব জাতের ধানের দর ছিল চড়া। তবে গত ১০-১২ দিন ধরে ধানের সরবরাহ বেড়েছে মোকামে। এর ফলে ধানের দামও কিছুটা কমেছে।
কিশোরগঞ্জের ধান ব্যবসায়ী হাকিম মিয়া জানান, তিনি দীর্ঘ ১০ বছর ধরে কৃষকের কাছ থেকে ধান কিনে এনে মোকামে বিক্রি করছেন। ঈদুল আজহার আগে থেকেই তিনি চাহিদা মতো ধান কিনতে পারছিলেন না। অন্য ব্যবসায়ীদের অবস্থাও একই রকম ছিল। ফলে মোকামে সংকটের কারণে ধানের দাম ছিল চড়া। তবে এখন ধীরে ধীরে ধানের সরবরাহ বাড়ছে। ফলে দামও কমছে।
নাজমুল হোসেন নামে আশুগঞ্জের এক চাল ব্যবসায়ী জানান, ধানের দরের ওপর চালের দর নির্ভর করে। মোকামে ধানের দাম বেশি হলে, স্বাভাবিকভাবেই চালের বাজারে প্রভাব পড়ে। তবে এখনও যে দরে ধান কেনাবেচা হচ্ছে, তাতে করে চাল বিক্রিতে লোকসান হচ্ছে। চালের দাম কমানোর জন্য বর্তমান বাজারদরের চেয়ে ধানের দাম মণপ্রতি আরও ১০০ টাকা কম হওয়া উচিত।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা চালকল মালিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. ওবায়দুল্লাহ বলেন, চালের দাম এখন যে পর্যায়ে আছে- নতুন করে বাড়ার সম্ভাবনা কম। বাজার এখন স্থিতিশীল হচ্ছে। তবে চালের দাম কমতে হয়তো আরও কিছুদিন সময় লাগবে। এক্ষেত্রে যদি ধানের দর আরও কমে, স্বাভাবিকভাবেই চালের দরও কমবে। মোকামে ধানের সরবরাহ যত বাড়বে, চালের দরে তত ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।