আগামী বাজেট হবে কল্যাণধর্মী, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা-ভাতা বাড়বে: অর্থ উপদেষ্টা

আগামী ২০২৫–২৬ অর্থবছরের বাজেট সমতাভিত্তিক ও কল্যাণধর্মী হবে জানিয়ে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা ও ভাতার পরিমাণ বাড়ানো হবে।
বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে অযৌক্তিক ও বড় প্রকল্প নেওয়া হবে না। এমনভাবে বাজেট প্রণয়ন করা হবে, যাতে পরবর্তী রাজনৈতিক সরকার একে অগ্রাহ্য করতে না পারে।
বুধবার (১৯ মার্চ) অর্থ বিভাগের মাল্টিপারপাস হলরুমে বাজেট প্রণয়নের নীতিগত বিষয় নিয়ে ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সম্পাদক ও সিনিয়র সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।
অর্থ উপদেষ্টা জানান, প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের সংক্ষিপ্ত সময়ে সমতাভিত্তিক ও কল্যাণমুখী রাষ্ট্র গড়ে তোলা সম্ভব নয়। তবে এ সময়ের মধ্যেই অর্থনীতিতে কিছু সংস্কার আনা হবে, যা বাজেটে বাস্তবায়নের চেষ্টা থাকবে।
'বাজেটে স্বল্পমেয়াদে এর ভিত্তি স্থাপন করা হবে, তবে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি কোনো উদ্যোগ নেওয়া হবে না। এটি নির্বাচনি রাজনৈতিক সরকারের কাজ।'
তিনি আরও বলেন, বাজেটে কিছু তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেওয়া হবে, যাতে সরকারের একটি দৃশ্যমান অবদান থাকে।
'যেমন, সামাজিক সুরক্ষার আওতা ও ভাতার পরিমাণ বাড়ানো হবে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও প্রযুক্তি খাতে বাড়তি নজর দেওয়া হবে। পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণেও উদ্যোগ নেওয়া হবে।'
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) সংস্কার আনার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, 'ক্যাশলেস সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য কর ব্যবস্থায় এমন পরিবর্তন আনা হবে, যাতে করদাতাদের কর কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করার প্রয়োজন না পড়ে।'
পাশাপাশি গৃহস্থ নারীদের কর্মের অবদান জিডিপিতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে বলে জানান অর্থ উপদেষ্টা।
অর্থ সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার জানান, আগামী বাজেটেও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।
'ইতোমধ্যে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ও সরকারি ব্যয় সাশ্রয়ের কারণে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে। সরকার আশা করছে, আগামী জুন শেষে পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশে নেমে আসবে,' বলেন তিনি।
ফাইন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস-এর সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ বলেন, আগামী জুনের আগেই নির্বাচন হলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের রেখে যাওয়া বাজেট রাজনৈতিক সরকার কতটুকু গ্রহণ করবে, সেটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
প্রথম আলোর হেড অব অনলাইন শওকত হোসেন বাজেটে এক বছরে কত কর্মসংস্থান হয়েছে, তা উল্লেখ করার প্রস্তাব দেন।
পাশাপাশি নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য সুস্পষ্ট কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরার তাগিদ দেন। তিনি বাজেট বক্তব্য সংক্ষিপ্ত করারও পরামর্শ দেন।
এ প্রসঙ্গে অর্থ উপদেষ্টা জানান, আগামী বাজেট বক্তব্য খুব বড় হবে না। এটি ২০০-৩০০ পৃষ্ঠা থেকে কমিয়ে ৫০-৬০ পৃষ্ঠায় আনা হবে।
সমকালের সহযোগী সম্পাদক জাকির হোসেন বলেন, সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় বেশ কয়েকটি কর্মসূচিতে মাসিক ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা ভাতা দেওয়া হয়, যা একজন ব্যক্তির ন্যূনতম চাহিদা মেটাতে যথেষ্ট নয়।
এ ভাতা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ানো প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন তিনি। একইসঙ্গে তিনি নিউজপ্রিন্ট আমদানিতে শুল্ক ও ভ্যাট ছাড় এবং সংবাদপত্র শিল্পের অন্যান্য কর কমানোর প্রস্তাব করেন।