Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

Monday
June 02, 2025

Sign In
Subscribe
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
MONDAY, JUNE 02, 2025
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: পূজা নয়, পরিবর্তন দরকার

মতামত

ফিরোজ আহমেদ
01 July, 2021, 02:35 pm
Last modified: 01 July, 2021, 02:59 pm

Related News

  • ঢাবি শিক্ষার্থী সাম্য হত্যা: ৬ আসামিকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ
  • সাম্য হত্যাকাণ্ড: রহস্য উদঘাটনের দাবি পুলিশের, তবে উত্তর মেলেনি অনেক প্রশ্নের
  • সাম্য হত্যা: ঢাবির তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন জমা
  • জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের পরিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে পাবেন বিশেষ সুবিধা 
  • সাম্য হত্যার বিচার চেয়ে ঢাবি সাদা দলের ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: পূজা নয়, পরিবর্তন দরকার

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আজ আপাত আলোড়নহীন, কিন্তু সেটা তো প্রায় গোটা দেশেরই চিত্র। সংকট প্রচুর, কিন্তু এ তো আমাদের অস্তিত্বেরই যাবতীয় সমস্যার প্রতিফলন। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রতি তাচ্ছিল্য আর অবজ্ঞা প্রকাশের কোনো উপায় তাই দেখি না।
ফিরোজ আহমেদ
01 July, 2021, 02:35 pm
Last modified: 01 July, 2021, 02:59 pm

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে পাঁচশতের তালিকাতেও নেই, তাই বাতাসে আহাজারি। এইসব তালিকার আসলে বাস্তব গুরুত্ব কম। যেসব মানদণ্ডে এটা নির্ধারণ হয়, তা সব দেশের জন্য সমগুরুত্বের হতেই পারে না। বরং বিপজ্জনক বিষয় হলো, এমন সম্ভাবনাও প্রচুর যে, গবেষণার মানদণ্ডে মাপা হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আরও পিছিয়ে যেতে পারে; শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও মানবাধিকার এবং মর্যাদাবোধকে বিবেচনায় নিলে এটা যে কোনো ঠিকঠাক তালিকাতে তলানিতে ঠাঁই পাবে। ঘুমাবার জায়গা, খাদ্য পরিস্থিতি ইত্যাদির মানদণ্ডে হিসাব করলে কী হবে, তা বলতে ভরসা করি না।

বিশ্ববিদ্যালয়টির দশা যে অনেক খারাপ, তাতে সন্দেহ করার উপায় সামান্য। এটিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা দেওয়া নিয়ে অনেকের ক্ষোভকে তাই ন্যায্য বললে অত্যুক্তি হবে না। 

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার মাধ্যম নিয়ে আলাপ হচ্ছিল কিছুদিন আগে, জনাকয়েক শিক্ষকের সাথে। শিক্ষকদের একজন বন্ধু নিজার আলম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শনের শিক্ষক। বাকিদের পরিচয় জরুরি না, জরুরি এই যে, আলোচ্য বিষয়টিতে সমাজের কায়েমী ভাবনারই তারা প্রতিনিধিত্ব করেন। আমার প্রস্তাব ছিল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধানতম ব্যর্থতা হলো মাতৃভাষায় শিক্ষাকে রূপান্তরে ব্যর্থতা। দেশের সবচেয়ে পুরনো বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে এই প্রতিষ্ঠানের এটাই কি প্রধানতম কর্তব্য ছিল না? আলাপটার সারসংক্ষেপ মোটামুটিভাবে নিচে দিলাম।

আলোচ্য বিষয়টি নিয়ে বিজ্ঞানের শিক্ষকের অভিমত: মাতৃভাষাকে অবশ্যই শ্রদ্ধা করি, কিন্তু ইউনিভার্সিটি তো ইউনিভার্সাল জ্ঞানের চর্চা করবে! মাতৃভাষার কথা এখানে আসবে কেন?

: কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তো দুনিয়াজুড়েই বৈশ্বিক জ্ঞানের স্থানিকীকরণ করেছে।

: দেখুন, আমি রাইজ অব মেডিভেল য়ুনিভার্সিটিজ পড়াই...

: তাহলে তো আপনার আরও ভালো করে জানা থাকার কথা, মধ্যযুগে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রধানতম অর্জন ছিল লাতিন জ্ঞানকে মাতৃভাষায় রূপান্তরিত করে জাতীয় বিকাশ সম্ভব করা।

এবার ইতিহাসবিদ আপাতত ইস্তফা দিলেন। কিন্তু এগিয়ে এলেন বিজ্ঞানী:

: আমরা যদি জ্ঞানকে একটা সাবান হিসেবে ভাবি, এর মোড়কটা যাই থাকুক, তাতে কিন্তু মোড়কটা বদলায় না।

: শিক্ষার সাথে ভাষার সম্পর্ক যদি সাবানের সাথে মোড়কের মত হতো, তাহলে এই যুক্তি তো খুবই দারুণ হতো। কিন্তু শিক্ষার সাথে ভাষার সম্পর্ক আসলে রক্তমাংসের সাথে ত্বকের মতো। চামড়া ধরে টান দিলে রক্ত বেড়িয়ে আসবে। মোড়ক আর সাবান আসলে দুটো আলাদা পণ্য, পৃথকভাবে উৎপন্ন। সমাজে জ্ঞান আর ভাষা একই অবিচ্ছিন্ন প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন হয়।

আবারো ইতিহাসবিদ: এগুলো তো পুরনো দিনের কথা! বিজ্ঞান তারপর কতদূর এগিয়েছে না...

: চীন আর জাপান কিন্তু সাম্প্রতিককালেই বিজ্ঞানে ওদেরকে ছুঁয়েছে...

: চীন আর জাপানের সাথে আমাদের তুলনা করলে চলবে? চীনে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব হয়েছে, আর জাপানে হলো গিয়ে মেইজি...

: কোরিয়া কিন্তু মাত্র সেদিন পশ্চিমের কাছে গেল, ওরা তো ষাটের দশকেও আমাদের চেয়ে বহুদূর পিছিয়ে ছিল...

: ওরাও তো মঙ্গোলয়েড, ওরা কত সুশৃঙ্খল! আমরা কী করে পারব?

মাতৃভাষায় শিক্ষার বন্দোবস্ত করায় ব্যর্থতা না, এখন মনে হয় এই দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধানতম ব্যর্থতা 'আমরা কি করে পারব' জাতীয় হীনমন্যতার চাষাবাস। সেটার অবশ্য সৎস্বীকারোক্তি দেখা যাবে কমই; কেবল, কেন যা করা উচিত তা করা হচ্ছে না, এই প্রশ্ন নিয়ে চেপে ধরা হলেই এই অসহায়ত্বের প্রকাশ দেখব আমরা।

২.

মানের দিক দিয়ে যতই খারাপ দশা হোক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে অতিকথন প্রচুর, এদের মাঝে রাজনৈতিকতম অতিকথনটি হলো এই বিশ্ববিদ্যালয় একটি জাতির জন্ম দিয়েছে। আসল সত্যটাকে উল্টো করে দেখা হয় এই বর্ণনায়, বরং আমাদের জাতির গঠনের ঐতিহাসিক ছাপটিই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর পড়েছে, এবং সেই ছাপ দিনকে দিন পাকাপোক্ত হচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয় দুনিয়ার সব দেশেই আন্দোলন সংগ্রামে বড় কেন্দ্র হয়ে ওঠে এই কারণে নয় যে, কিছু জ্ঞানী মানুষ এখান থেকে বাকি সবকিছুকে নির্ধারণ করেন, বা তারা বেশি বোঝেন বাকিদের চেয়ে। বরং একদিকে সমাজের, অন্তত মধ্যবিত্ত সমাজের স্বার্থের প্রতিনিধিত্বের ছাপ এখানে থাকে, দ্বিতীয়ত শিক্ষার্থীদের সঙ্ঘবদ্ধতা একটা রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে সহজেই ভূমিকা রাখে।

তবু এই দাবি অতিকথন। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস লেখার সময় যে কারণে ৬৯-৭১ পর্যন্ত কৃষক এবং শ্রমিককের ভূমিকাকে আড়াল করার একটা প্রবণতা প্রাধান্যশীল। বরং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সত্যিকারের জাতিগঠনে নেতৃত্বে থাকলে তার অন্যতম প্রধান দায়িত্ব হতো শ্রমিক ও কৃষকের, বৃহত্তর জনসাধারণের সংগ্রামের, তার সংস্কৃতির ইতিহাস নির্মাণ করা, তাকে আধুনিকতম বিজ্ঞান ও দর্শন চর্চার উপযোগী করা, তার ভবিষ্যতের ইঙ্গিতগুলো প্রদান করার চেষ্টা করা। সেদিক দিয়ে বলা যায়, অসাধারণ সংগ্রামী ঐতিহ্য সত্ত্বেও বর্তমানে এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রায় রাজনৈতিক ভূমিকাশূন্য।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংকট শুধু তো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সীমিতও থাকেনি। এটাই দেশের সবচেয়ে পুরনো সর্বজন বিশ্ববিদ্যালয়। ওই হিসেবে দেশের বাকি সব সর্বজন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরই সন্তান। তাদের নিয়তিও একই পথেরই অনুগামী হয়েছে। ফলত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গোটা দেশের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষারই একটা চিত্ররূপ, বাকিরা কম বেশি তারই অনুলিপি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে পার্থক্য গড়ে দেন উদ্যমী কোনো শিক্ষক তার ব্যক্তিগত কিংবা কয়েকজনের মিলিত উদ্যোগে, পত্রিকা প্রকাশ, গবেষণা বা পাঠপদ্ধতির কোনো নতুন ভাবনা দিয়ে।

অনেকেই যখন তাই প্রকাশ্যে অভিযোগ করেন যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এমন সব উপাচার্যের হাতে পড়েছে, ব্যক্তিগত কারণেই যার প্রকৃত উচ্চশিক্ষা কিংবা গবেষণা নিয়ে আগ্রহ নেই, ফজলুল হালিম চৌধুরীর পর কোন উপাচার্যকে পাওয়া যাবে যার এই আগ্রহ ছিল? উপাচার্য নিয়োগে প্রধান যোগ্যতা যদি হয় আনুগত্য, ভিন্ন কিছু মিলবেই-বা কীভাবে? নিত্যনতুন ভবন নির্মাণ আর নানান বরাদ্দেই, উপরি-উপরি চকচকে রঙের প্রলেপ দেওয়াতেই উপাচার্যদের ষোলআনা স্বার্থ, সেটা তাদের ব্যক্তিগত সীমাবদ্ধতা না। সমাজেরই প্রতিচ্ছবি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক উপাচার্যকে একবার পাপাচার্য বলে অভিহিত করেছিলেন অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদ। ৯০-এর দশকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাবেক ভিসি যৌননিপীড়নবিরোধী আন্দোলনকে গার্মেন্টের মেয়েদের আন্দোলন বলে উপহাস করে নিজেদের স্বরূপ প্রকাশ করেছেন, স্বাভাবিক কারণেই যথাসময়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের প্রধান পদটিতে পদোন্নতিও তিনি পেয়েছেন। আরেক ভিসি মেয়েদের হলে গভীর রাতে পুলিশ পাঠান তাদের পিটিয়ে থানায় ধরে নিয়ে যাবার জন্য; ছাত্ররা বরং তার গদিখানা খান খান করে বিশ্ববিদ্যালয়টির সন্মানই কোনোক্রমে রক্ষা করেছিল।

এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বলবার মতো অজর্ন হিসেবে সুলভে চা-চপ-সিঙ্গারা প্রাপ্তিকে উল্লেখ করেছেন বর্তমান উপাচার্য। আর এই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য চরিত্রটিকে অমর করে রেখেছেন আহমদ ছফা তার 'গাভী বৃত্তান্ত' নামের উপন্যাসটিতে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসগুলো প্রভোস্ট কি হাউসটিউটররা নিয়ন্ত্রণ করেন না, সেগুলো সরকারি মাস্তানদের কর্তৃত্বে থাকে। হাউস টিউটর, প্রভোস্ট ইত্যাদি পদ এবং শিক্ষকদের বাসাগুলো বরাদ্দ পাওয়ার হাল-আমলের পদ্ধতি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ফাহমিদুল হক যে স্মৃতিচারণ করেছেন, তাতে বোঝা যায় বিশ্ববিদ্যালয়টি কোন স্তরে পৌঁছেছে।

৩.

অথচ এই মফস্বলী বিশ্ববিদ্যালয়টিরও যে বহু সম্ভাবনা ছিল! বহু প্রতিবেশীর তুলনায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষায় আমরা সামান্য হলেও এগিয়ে ছিলাম। ১৯৪৪ সালের এক স্মৃতিচারণ করেছিলেন পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সত্যেন বোস। চীনে তখন ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ আর জাপানি দখলদারিত্বের করাল থাবা। বিশ্বযুদ্ধও চলছে। খাদ্যপ্রাণের অভাবে চীনা শিশুদের বিপর্যস্ত দশা। মন্বন্তর আমাদের দেশেও। তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে 'আমার এক ছাত্র সালফোনামাইড নিয়ে নানা গবেষণায় ব্যস্ত। ওদিকে জৈব-রসায়নের গবেষণা কেন্দ্র ডা. কালীপদ বসু নানা প্রকার চাউল ও অন্যান্য খাদ্যদ্রব্যের বিশ্লেষণ করে চলেছেন... সেই সময়ে খবর এলো চীন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জৈব-রসায়নে অভিজ্ঞ পর্যটক এসেছেন ভারত ভ্রমণে।' দক্ষিণ আফ্রিকায় তিনি শিখে এসেছেন মাছের তেল থেকে, লাল চাল থেকে নানান খাদ্যপ্রাণ সংগ্রহের উপায়, 'রাজপুতানা, বোম্বাই, পাঞ্জাব দিল্লি বেড়ানো শেষ হলো, সব শেষে পূর্বপ্রান্তের শহর ঢাকায় তিনি উপস্থিত হলেন।'

বোস জানাচ্ছেন, চীন দেশে আধুনিক রসায়নের তখন সবে পত্তন হয়েছে। প্রাথমিক স্তরের কিছু কারখানা গড়ে উঠেছে, যন্ত্রপাতি কিংবা ঔষধপত্র সব আসছে বিদেশ থেকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সহজেই সালফোনামাইড ও তার নানা যৌগিকের প্রস্তুতি চলছে শুনে চীনা বিজ্ঞানী চ্যাঙ-এর প্রথমে বিশ্বাসই হতে চায় না! তারপর, ''আমাদের নিমন্ত্রণে এসে স্বচক্ষে প্রক্রিয়ার সবগুলো ধাপ অতিক্রম করে শুদ্ধবস্তুতে উপনীত হতে দেখলেন। এই প্রত্যক্ষ জ্ঞানের পরিবর্তে আমরা চাইলাম তার কাছে সয়াবিন থেকে কিভাবে চীনদেশে দুধ তৈরি হয়, তার সন্ধান। কাশ্মীর থেকে আনা অনেক সয়াবিন শ্রীমান কালিপদ যত্ন করে রেখেছিলেন। তা থেকে যথানিয়মে দুধ তৈরি হলো, দুধ থেকে ছানা। চীনা হালুইকরেরা নাকি নানা মিষ্টান্ন এই ছানা থেকেই তৈরি করে।'

সত্যেন বোসের সেদিন মনে হয়েছিল, চীন আর ভারত দুটি জাতিই 'বিরাট প্রাচীন ঐতিহ্যের অধিকারী ও হয়তো প্রাচীনপন্থী, তবে অগ্রগতিতে চীনারা আমাদের চেয়ে একটু পিছিয়ে রয়েছে।' ২৪ বছর বাদে  ভারতের নাগরিক হিসেবে চীন-ভারত যুদ্ধে পরাজয়ের প্রেক্ষাপটে এই ঘটনার স্মৃতিচারণ করেন সত্যেন বোস, লেখেন, 'শত্রুকে অশ্রদ্ধা করলেই বিজয়লক্ষী হস্তগত হন না। আমাদের ২৪ বছরের অগ্রগতির ছবির সঙ্গে চিনের তুলনা করে গর্ব করার মতো কিছু খুঁজে পাই না। এর জন্য ভারতের বিজ্ঞানীরা কতটুকু দায়ী?'

চীনের অগ্রগতির ধারার অজস্র সমালোচনা আছে। কিন্তু কোনো না কোনো উপায়ে সে এমন একটা শক্তি ও আবেগ সৃষ্টি করতে পেরেছিল, ওই চ্যাঙ আসলে একা নন, অজস্র বিজ্ঞানীকে, মানুষকে স্বদেশের পানে, সাধারণ মানুষের প্রয়োজন আর চাহিদার পানে ফিরে তাকাতে উদ্বুদ্ধ করতে পেরেছিল। এর নিদর্শন বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনীতেও পাওয়া যাবে, ১৯৫১ সালে তিনি চীন ভ্রমণে গিয়ে এই নবজাগরণ প্রত্যক্ষ করেছিলেন।

একই পর্যবেক্ষণ সত্যেন বোস জাপান নিয়েও করেছেন, দেশের মানুষের রুদ্ধ সম্ভাবনাকে জাগিয়ে তুলে, তাকে মুক্ত করে কিভাবে বিধ্বস্ত দেশের পুনর্গঠন তারা করেছিল। এই উন্নয়নের নানান রূপ থাকতে পারে, দেশভেদে বস্তবতা ভেদে তার নানান বহিঃপ্রকাশ থাকতে পারে। কিন্তু কোনো না কোনো ধরনে এই আবেগকে জাগাতে হবে।

আমাদের এক প্রণম্য অর্থনীতিবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরই শিক্ষক আনিসুর রহমান এই আবেগের জাগরণ ও তৎপরবর্তী হতাশা নিয়ে একটা বই লিখেছিলেন মুক্তিযুদ্ধের পরেরকার জাগরণ এবং অনতিকালের হতাশা নিয়ে, নাম 'যে আগুন জ্বলেছিল'।

৪.

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পিছু হঁটা কোন মাত্রার, তা বোঝা যাবে বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রকাশনা সংস্থার দিকে তাকালে। প্রতিটি প্রধান বিশ্ববিদ্যালয় জাতি গঠনে ভূমিকা রাখে, মাতৃভাষায় শিক্ষার বিস্তার ঘটায়। প্রাচীন অক্সফোর্ড থেকে শুরু করে হালের টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়, এটি তাদের প্রধান ভূমিকা ছিল।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনা সংস্থাটির দিকে তাকান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনা সংস্থার গ্রন্থতালিকা পাঠে জানা যাবে ১৯২৬ সালে প্রকাশনা সংস্থা যাত্রা শুরু করে। ১৯৭১ সালের আগে পর্যন্ত একটিমাত্র বাংলা বই, মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ অনূদিত বাংলা আদব কি তারিখ প্রকাশ করেছিল ১৯৫৭ সালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনা সংস্থা। এরপর ১৯৭২ সালে একটি, '৭৮ সালে একটি, এভাবে করে করে ২০১২ সাল পর্যন্ত ৫৬টি পুস্তকের বিশাল 'বহর' সাজিয়েছে প্রকাশনা সংস্থাটি। অন্যদিকে ইংরেজি বইয়ের বেলায় ১৯৭১ সালের আগ পর্যন্ত ১৪টি এবং এখন পর্যন্ত মোট ১০৭টি।

দেশের আদিতম বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রকাশনা সংস্থার মোট প্রকাশনা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৮৯ বছরে ১৬৩টি। এর মাঝে গোটা বিশেক বই আবার মুদ্রণ ফুরিয়েছে বছর কয়েক আগে।

৫.

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে এই বাস্তবতায় রাতারাতি সত্যিকারের জ্ঞানকেন্দ্রে পরিণত করা অসম্ভব; কিন্তু সম্ভব জরুরি কিছু সংস্কার পরিচালনা করে কাজ চালানো মান অর্জন করা। এই দেশে উচ্চ শিক্ষায় যে কোনো রূপান্তর এখন তাই সমাজ-রূপান্তরের অনুবর্তী হয়ে পড়েছে, সকল অর্থেই।

এইখানে মেরুদণ্ড প্রতিদিন ক্ষয়ে যায় ছাত্রাবাসে ছাত্রাবাসে বড় ভাইদের সালাম দিতে দিতে। এইখানে জীবনও প্রতিদিন ক্ষয়ে আসে পৃথিবীর নিকৃষ্টতম পুষ্টির সরবরাহে। এইখানে অধিকাংশ মূর্খ এবং হামবড়া শিক্ষকের দাপটে জ্ঞানীরা কোনঠাসা। এইখানে ছাত্রদের প্রতি শিক্ষকরা আমলাসুলভ, দখলবাজদের সাথে তাদের বন্ধুত্ব প্রায় আনুগত্যসুলভ।

পৃথিবীর আর কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এতটা অমানবিক, মর্যাদাহীন আর বিভিষীকায় দিনরাত্রি যাপন করেন না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমাজের দশা সাধারণভাবে এমনই যে, ইতিহাসে এই প্রথমবারের মত আমলাতন্ত্রের সাথে মর্যাদার দ্বন্দ্বে তাদের হাস্যকর পিছুহটা ঘটেছে; উপাচার্যরা এখন একজন সচিবের সমমর্যাদার, এটা কেউ বিশ্বাস করেন না।

একদা জাতীয় স্বার্থের প্রশ্নে, ভাষা আন্দোলনে, মুক্তির সংগ্রামে, গণতন্ত্রের লড়াইয়ে নেতৃত্বে ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এখন তাকে দখলদারিত্বের নাগপাশে আটকে রেখে দিব্যি চলছে দেশজুড়ে লুণ্ঠনের অবাধ রাজত্ব।

তারপরও, এখনও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আজও আশ্রয় দিচ্ছে গ্রাম কিংবা মফস্বল থেকে সদ্য উঠে আসা কৃষক কিংবা শ্রমিকের ছেলেমেয়েদের। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আজ আপাত আলোড়নহীন, কিন্তু সেটা তো প্রায় গোটা দেশেরই চিত্র।

সংকট প্রচুর, কিন্তু এ তো আমাদের অস্তিত্বেরই যাবতীয় সমস্যার প্রতিফলন। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রতি তাচ্ছিল্য আর অবজ্ঞা প্রকাশের কোনো উপায় তাই দেখি না। তাসের দান যদি কোনদিন উলটে যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আবারও নিশ্চয়ই দেশবাসীর আকাঙ্ক্ষাকে ভাষা দেবে। এই ভরসা নিয়েই ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয়কে ভালবাসি, যেমন ভালোবাসি আর সব বিশ্ববিদ্যালয়কেই। আমি বিশ্বাস করি, রাজনীতি আর সমাজ রূপান্তরের রন্ধ্রপথেই বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যার সকল জ্ঞানের ঝরনা মুক্তভাবে প্রবাহের পথ পাবে।

শুভ জন্মদিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।


  • লেখক: প্রাবন্ধিক, অনুবাদক ও রাজনীতিক

Related Topics

টপ নিউজ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • কাল থেকে পাওয়া যাবে নতুন টাকা, সংগ্রহ করবেন যেভাবে
  • ‘মবের নামে আগুন, ভাঙচুরের সুযোগ নেই’: সারজিসকে সেনা কর্মকর্তা
  • দেশের প্রথম মনোরেলের মাধ্যমে চট্টগ্রাম হবে দক্ষিণ এশিয়ার গেটওয়ে: মেয়র শাহাদাত
  • থার্ড টার্মিনাল চালু: সরকারের টার্গেট ডিসেম্বর, জাপানি কনসোর্টিয়াম চায় আরও ২ মাস
  • আগামী বছর থেকে অনলাইনে ট্যাক্স রিটার্ন জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক হচ্ছে
  • জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে ৫০০ কোটি টাকা লোকসান আইএফআইসি ব্যাংকের

Related News

  • ঢাবি শিক্ষার্থী সাম্য হত্যা: ৬ আসামিকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ
  • সাম্য হত্যাকাণ্ড: রহস্য উদঘাটনের দাবি পুলিশের, তবে উত্তর মেলেনি অনেক প্রশ্নের
  • সাম্য হত্যা: ঢাবির তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন জমা
  • জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের পরিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে পাবেন বিশেষ সুবিধা 
  • সাম্য হত্যার বিচার চেয়ে ঢাবি সাদা দলের ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম

Most Read

1
অর্থনীতি

কাল থেকে পাওয়া যাবে নতুন টাকা, সংগ্রহ করবেন যেভাবে

2
বাংলাদেশ

‘মবের নামে আগুন, ভাঙচুরের সুযোগ নেই’: সারজিসকে সেনা কর্মকর্তা

3
বাংলাদেশ

দেশের প্রথম মনোরেলের মাধ্যমে চট্টগ্রাম হবে দক্ষিণ এশিয়ার গেটওয়ে: মেয়র শাহাদাত

4
বাংলাদেশ

থার্ড টার্মিনাল চালু: সরকারের টার্গেট ডিসেম্বর, জাপানি কনসোর্টিয়াম চায় আরও ২ মাস

5
অর্থনীতি

আগামী বছর থেকে অনলাইনে ট্যাক্স রিটার্ন জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক হচ্ছে

6
অর্থনীতি

জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে ৫০০ কোটি টাকা লোকসান আইএফআইসি ব্যাংকের

EMAIL US
contact@tbsnews.net
FOLLOW US
WHATSAPP
+880 1847416158
The Business Standard
  • About Us
  • Contact us
  • Sitemap
  • Privacy Policy
  • Comment Policy
Copyright © 2025
The Business Standard All rights reserved
Technical Partner: RSI Lab

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net