ডাকসু নির্বাচন: শিক্ষার্থীদের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য কাজ করতে চান কাদের

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী আব্দুল কাদের। চলতি বছর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে 'বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ' প্যানেল থেকে সহ সভাপতি (ভিপি) প্রার্থী হয়েছেন। নির্বাচন সংক্রান্ত নানা বিষয়ে কথা বলেছেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন তাহমিদুল আলম জায়িফ
নির্বাচনের পরিস্থিতি এখন পর্যন্ত কেমন দেখছেন?
ডাকসু নিয়ে ৫ আগষ্টের পর থেকেই গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। বিভিন্ন প্রার্থীর মধ্যে প্রতিযোগিতা চলছে কে কার চেয়ে বেশি নিয়ম ভঙ্গ করবেন। অনলাইন কেন্দ্রিক বুলিং চলছে, একটা সংঘবদ্ধ শক্তি অনলাইনে নারীদের হেনাস্তা করছে। নির্বাচন কমিশনের নানা পদক্ষেপে মনে হচ্ছে তারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের ভোট বিমুখ করার চেষ্টা করছে। অন্যথায়, সুস্থ-স্বাভাবিক পরিবেশে তারা সেনা মোতায়েনের কথা বলতেন না।
প্রশাসন শিক্ষার্থীদের ভোট বিমুখ করার চেষ্টা করছে—বিষয়টি আরেকটু ব্যাখ্যা করবেন কি?
ভোটকেন্দ্রগুলো এমনভাবে সাজানো হয়েছে যেন শিক্ষার্থীরা ভোট দিতে অনুৎসাহিত হয়। যেমন, হলপাড়ার [কলা, বাণিজ্য অনুষদ এলাকা] হলগুলোর কেন্দ্র ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদে দেওয়া যেত। কিন্তু সেটা দেওয়া হয়েছে আরও দূরে—উদয়ন স্কুলে। নারী শিক্ষার্থীদের তিনটি হলের ১৪ হাজার ভোটারের জন্য কেন্দ্র তৈরি করা হয়েছে টিএসসিতে। এছাড়া, বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হল ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হলের শিক্ষার্থীদের জন্য চাইলেই পাশে অবস্থিত সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটকে কেন্দ্র করা যেত। কিন্তু তাদের জন্য কেন্দ্র হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবকে নির্ধারণ করা হয়েছে। স্পষ্ট বোঝা যায়, এগুলো নারী শিক্ষার্থীদেরকে ভোট প্রদান করা থেকে বিরত রাখার পরিকল্পনা।
আপনার সংগঠন বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ থেকে প্যানেলের বাইরেও একাধিক প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর ফলে নির্বাচনে কি আপনাদের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে না?
এটা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। আমাদের ২৮ টি পদে সংগঠন থেকে ৭৯ জন প্রার্থী পদ প্রত্যাশী ছিলেন। যেহেতু অনেক দিন পর ডাকসু নির্বাচন, একইসাথে একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া; তাই সার্বিক বিবেচনায় আমরা প্রার্থীতার সুযোগ রেখেছি। তবে আমরা একসাথে থাকতে পারলে ভালো হতো।
আপনাদের প্যানেলের শক্তির জায়গা কোনটি?
আমরা নতুন করে ডাকসুর জন্য কমিটমেন্ট নিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছে যাচ্ছি না। আমরা আমাদের পূর্বের কাজের লিগ্যাসি ধরে তাদের কাছে যাচ্ছি। আমরা ২০১৯ সালেই ক্যাম্পাসে এসে শিক্ষার্থীদের কাছে আস্থার জায়গা তৈরি করেছি। তাদের গণরুম-গেস্টরুম সংস্কৃতির বিরুদ্ধে, নিপীড়ন-নির্যাতনের প্রতিবাদ করে, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে—প্রত্যেকটা সংকটে আমরা পাশে দাড়িয়েছি। হলে থাকতে না দেওয়া কিংবা ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে না দেওয়া জাতীয় কোনো অজুহাত আমরা দেইনি। আমরা সকালে ছাত্রলীগের মারধরের শিকার হয়েছি, বিকেলে আবার এসে প্রতিবাদ কর্মসূচীতে অংশ নিয়েছি। পরিবারের মায়া, নিজের ক্যারিয়ারের মায়া কোনো কিছু চিন্তা না করে শিক্ষার্থীদের পাশে থেকেছি। এই জায়গাটাই শিক্ষার্থীদের আমাদের সাথে এটাচমেন্ট ফিল করছে। ফলে তারা অন্য প্রার্থীদের তুলনায় আমাদের প্রতি আস্থা রাখতে পারছে।
নারী শিক্ষার্থীদের অনলাইনে হয়রানির বিষয়টি বেশ আলোচিত হচ্ছে। নারীদের নিরাপত্তা কিভাবে নিশ্চিত করবেন?
বিভিন্ন সংগঠন যখন কোনো কিছু নিজেদের রাজনৈতিক বা মতাদর্শগত সীমার বাইরে যায়, তখনই নারীদের মানবাধিকার লঙ্ঘন, শারীরিক আক্রমণ, সাইবার বুলিং করে। এ ধরনের মানসিকতা সমাজে বিষফোঁড়া। এটিকে থামানোর দুটি পথ রয়েছে: সচেতনতা তৈরি এবং আইনগত দিক থেকে সঠিক ব্যবস্থা নেওয়া।
পাশাপাশি, ক্যাম্পাসে অনেক নারী শিক্ষার্থী শিক্ষকদের অনৈতিক প্রস্তাব বা হয়রানির শিকার হলেও কোনো বিচার হয় না। নিপীড়নবিরোধী সেল'কে সম্পূর্ণভাবে অকার্যকর করে রাখা হয়েছে। আমরা একে কার্যকর করে এমন পরিবেশ তৈরি করতে চাই যাতে নারী শিক্ষার্থীরা নির্ভয়ে ক্যাম্পাসে আসতে পারে এবং তাদের পরিবারও নিশ্চিন্ত থাকে।
শিক্ষার্থীরা আপনাদের কাছে প্রত্যাশার কথা কি জানাচ্ছে?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর মধ্যে আশঙ্কা আবার গণরুম-গেস্টরুম সংস্কৃতি চালু হতে পারে। তারা আবাসনের বিষয় নিশ্চিত হতে চায়। প্রশাসনিক হয়রানি থেকে মুক্তি চায়। অর্থনৈতিক মুক্তি চায়, টিউশনের বাইরে ক্যাম্পাসে পার্ট টাইম জব ও ঋণের ব্যবস্থা চায়। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের কাছ থেকে স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতা চায় শিক্ষার্থীরা।
নির্বাচিত হলে আপনার প্রধান লক্ষ্য কি থাকবে?
প্রথমত, ছাত্ররাজনীতি ও শিক্ষকরাজনীতির কাঠামোটা ঠিক করতে চাই। শিক্ষার্থীদের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য কাজ করতে চাই। 'ওয়ান সিট ওয়ান বেড'এর পাশাপাশি তাদের জন্য বিভিন্ন বৃত্তি ও শিক্ষা ঋণের ব্যবস্থা করতে চাই। টিচার্স এসিস্ট্যান্ট ও রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে শিক্ষার্থীদের কাজ করার সুযোগ তৈরি করতে চাই। একইসাথে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মধ্যে দূরত্ব কমিয়ে সেতুবন্ধন তৈরি করতে চাই।
জয়ের বিষয়ে কতটা আশাবাদী?
আমরা অবশ্যই ভালো করব। আমাদের প্রতিটি ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষার্থীদের পাশে ছিলেন। শিক্ষার্থীবান্ধব কাজগুলো অব্যাহত রাখতে চাই আমরা। শিক্ষার্থীরা আমাদের অতীতের কাজ বিবেচনা করেই নির্বাচিত করবেন বলে প্রত্যাশা।