Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

Sunday
December 21, 2025

Sign In
Subscribe
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
SUNDAY, DECEMBER 21, 2025
শুধু একটি সেতু নয়, তার চেয়েও বেশি কিছু

বাংলাদেশ

টিটু দত্ত গুপ্ত
25 June, 2022, 12:05 am
Last modified: 25 June, 2022, 11:43 am

Related News

  • পদ্মা সেতু–এক্সপ্রেসওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে; রাজধানীর সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের যান চলাচল স্বাভাবিক
  • ডিসেম্বরে উৎপাদনের জন্য প্রস্তুত নয় রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র: আইএমইডি
  • স্বাস্থ্য-শিক্ষায় অগ্রাধিকার দিয়ে ৩৬ প্রকল্পে বিদেশি অর্থায়নের পরিকল্পনা সরকারের
  • পদ্মা সেতুতে চালু হলো ইলেকট্রনিক টোল, গাড়ি না থামিয়েই যেভাবে দিতে হবে
  • পদ্মা সেতুতে নন-স্টপ ইলেকট্রনিক টোল কালেকশন চালু হচ্ছে আগামীকাল

শুধু একটি সেতু নয়, তার চেয়েও বেশি কিছু

রাজধানী ঢাকা ও প্রধান বন্দর চট্টগ্রামের সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপন করতে স্বাধীনতার পর ৫১ বছর লেগে গেল। এবার সবার আগে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবে যাত্রী ও পরিবহন পরিচালকরা। ফেরির জন্য তাদের অনিশ্চিত অপেক্ষার অবসান ঘটাচ্ছে পদ্মা সেতু।
টিটু দত্ত গুপ্ত
25 June, 2022, 12:05 am
Last modified: 25 June, 2022, 11:43 am

কয়েক দশক আগে জনপ্রিয় লোকসংগীতশিল্পী আব্দুল আলীম তার একটি গানে পদ্মা নদীর বিধ্বংসী স্বভাবের ছবি এঁকেছিলেন এভাবে: 'সর্বনাশা পদ্মা নদী, তোর কাছে শুধাই, বল আমারে তোর কি রে আর কূল-কিনারা নাই?'

অবশেষে 'সর্বনাশা' পদ্মাকে জয় করা গেল! এই প্রমত্তা নদীর ওপারে বসবাসকারী মানুষ এখন আর অসহায় নয়। তারা জীবননালি পেয়ে গেছে!

আজ থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ সড়কপথে সরাসরি ঢাকায় যেতে পারবে। ফেরির জন্য তাদের দীর্ঘ দুঃস্বপ্নের অপেক্ষার প্রহর অবশেষে ফুরাল। তারা এখন পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে মাত্র ছয় মিনিটে নদী পার হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ ৬.১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের রেল-সড়ক সেতুটি যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘুচে গেছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার ভৌগোলিক বিচ্ছিন্নতা। বিশ্বব্যাংক ও অন্যান্য ঋণদাতারা হাত গুটিয়ে নেওয়ার পর প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ়তা ও সাহসিকতার সুবাদেই সমস্ত সংশয় ও অনিশ্চয়তাকে পেছনে ফেলে স্বপ্নের সেতুটি বাস্তব রূপ নিয়েছে।

কেবল দক্ষিণাঞ্চলের জন্য নয়, সমগ্র বাংলাদেশের জন্যই এক নতুন দিনের সূচনা হলো। নদী দ্বারা বিভক্ত দেশের সব অঞ্চল এখন সড়ক ও রেলপথ দিয়ে সুসংযুক্ত।

২৪ বছর আগে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিজের প্রথম মেয়াদে উত্তরাঞ্চলকে ঢাকার সঙ্গে সংযুক্তকারী যমুনা সেতুর উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা।

১৯৯০-এর দশকের গোড়ার দিকে মেঘনা ও এর শাখা গোমতীর উপর নির্মিত সেতুর মাধ্যমে সংযুক্ত হয় বন্দরনগরী চট্টগ্রামসহ দেশের পূর্বাঞ্চল।

রাজধানী ঢাকা ও প্রধান বন্দর চট্টগ্রামের সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপন করতে স্বাধীনতার পর ৫১ বছর লেগে গেল। ছয় মাস পর চলতি বছরের ডিসেম্বরে রেল সংযোগ প্রকল্পের কাজ শেষ হলে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ ট্রেনেও সেতু পার হতে পারবে।

সবার আগে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবে যাত্রী ও পরিবহন পরিচালকরা। কেননা ফেরির জন্য তাদের অনিশ্চিত অপেক্ষার অবসান ঘটাচ্ছে পদ্মা সেতু। ঈগল পরিবহনের ম্যানেজার সৌমিত্র কুমার দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'পদ্মা সেতু প্রতি ট্রিপে ফেরি ঘাটে আমাদের ২-৩ ঘণ্টা সময় বাঁচাবে।' পরিবহন কোম্পানিগুলো এখন ঢাকা থেকে যশোরে যাতায়াতের জন্য নদী পারাপার করতে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ফেরিঘাটের বদলে পদ্মা সেতু ব্যবহারের কথা ভাবছে।

আবদুর রহিম বাবুর জন্য পদ্মা সেতু এসেছে বড় স্বস্তি হয়ে। কারণ নদী পার হয়ে ঢাকায় পৌঁছানোর জন্য ফেরির অপেক্ষায় থাকা ট্রাকভর্তি সবজিকে পচে যাওয়া থেকে রক্ষা করবে সেতুটি। 'এমনও ঘটনা আছে, আমরা ফেরি ঘাটে সারা দিন অপেক্ষা করেছি, তারপর ট্রাকভর্তি সবজি সেখানেই ফেলে রেখেছি। পদ্মা সেতুর সুবাদে আমরা এখন ৪-৫ ঘণ্টায় ঢাকার বাজারে পৌঁছাতে পারব,' মুখভরা হাসি নিয়ে বললেন বাবু।

কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলা থেকে প্রতিদিন গড়ে ৬০০ টন সবজি ঢাকায় পাঠানো হয়। ফেরি ঘাটে বিলম্বের কারণে এসব সবজির অনেকাংশই নষ্ট হয়ে যায়।

বাগেরহাটের মোংলা বন্দর ও সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর থেকে পণ্য পরিবহন ত্বরান্বিত করবে সেতুটি। পাশাপাশি রপ্তানি বাণিজ্য সহজ হয়ে যাবে, দেশের বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহও সহজ হবে। খুলনা অঞ্চল থেকে প্রতিদিন প্রায় ১৬০ টন চিংড়ি ঢাকায় পাঠানো হয়। আর মোংলা বন্দর দিয়ে বছরে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার পাট রপ্তানি হয়।

সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দরের উপপরিচালক মনিরুল ইসলাম জানালেন, ভারত থেকে আমদানিকৃত পণ্য বহনকারী ৪০০টিরও বেশি ট্রাক ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে দেশে প্রবেশ করে। আরও ট্রাক প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে।

পদ্মা সেতু দিয়ে একটি গ্যাস পাইপলাইনও গেছে, যা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে গ্যাস নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের পথ সুগম করবে। পাইপলাইন গ্যাসের সরবরাহে শিল্পায়ন বাড়বে, অপেক্ষাকৃত অনুন্নত অঞ্চলে কর্মসংস্থান তৈরি হবে।

খুলনা চেম্বার অভ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সহসভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বুলু দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'ফার্নেস অয়েলভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয়বহুল। আমি মনে করি যদি গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়, তাহলে বিদ্যুতের খরচ কমবে এবং গার্মেন্টসসহ অন্যান্য শিল্প গড়ে উঠবে।'

ছবি: মুমিত এম

এটি দেশের দীর্ঘতম এবং বিশ্বের ১২২তম দীর্ঘ সড়ক-রেল সেতু। কিন্তু এই ইস্পাত-কাঠামোটি কেবল এর বিশালত্বের জন্যই আইকনিক নয়। সেতুটি দাঁড়িয়ে আছে জাতীয় গর্ব হিসেবে। নেপথ্যের গল্প এই সেতুকে অর্জনের মাইলফলকে পরিণত করেছে।

পদ্মা সেতু যে অপমান সহ্য করেছে, তার কারণেই এটি আত্মপ্রত্যয়ের প্রতীকে পরিণত হয়েছে।

অপমান যখন শক্তিতে পরিণত হয়

৩.৮৭ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত পদ্মা সেতু এখন বাস্তবতা, আইকনিক অবকাঠামো, জাতীয় গর্ব ও আত্মবিশ্বাসের প্রতীক; কেবল এর বিশালত্বের জন্যই নয়, যে অপমান একে সহ্য করতে হয়েছে তার জন্যও।

নেপথ্যের গল্পটি সরকারের প্রায় অসম্ভবকে সম্ভব করার গল্প। সমস্ত অভিযোগ, বিভ্রান্তি ও অবিশ্বাসের জবাব হয়ে এসেছে পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করা।

নানা বাধা-বিপত্তি না এলে সেতুটির নির্মাণ অন্তত ছয় বছর আগে সম্পন্ন হতে পারত। প্রকল্পটির অনুমোদন দেওয়া হয় ২০১০ সালে, কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল ২০১৬ সালে। বহুপাক্ষিক ঋণদাতাদের সঙ্গে চুক্তিও স্বাক্ষর হয়ে যায়। শুরু হয়ে যায় নদীর উভয় তীরের জমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসনের মতো প্রাথমিক কাজও। এরপরই এল আঘাত, বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো। প্রাথমিকভাবে প্রাক্কলিত ২.৯৭ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ের প্রকল্পের প্রধান অর্থদাতা বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে উচ্চ-পর্যায়ের দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের 'বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ' পেয়েছে বলে দাবি করে বসে। 'সরকার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেয়নি' উল্লেখ করে সংস্থাটি ২০১২ সালের ১ জুলাই প্রকল্প থেকে নিজেদের সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দেয়।

বিশ্বব্যাংকের পথেই হাঁটে অন্য ঋণদাতারাও (এডিবি, জাইকা ও আইডিবি)। এতে বেশ অপ্রস্তুত ও বিব্রত অবস্থায় পড়ে সরকার। বিশ্বব্যাংকের অভিযোগ বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন কিংবা কানাডার আদালতে কখনও প্রমাণিত হয়নি। কিন্তু প্রকল্পটি পুনরুজ্জীবিত হওয়ার পরেও এবং শেষ পর্যন্ত ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে নির্মাণকাজ শুরু হওয়ার পরেও সমালোচনা অব্যাহত ছিল।

কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাই দৃঢ়তার সঙ্গে সমস্ত প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে সংসদে গভীর প্রত্যয়ে বলেছিলেন, পদ্মা সেতু নিজস্ব অর্থায়নে হবে। এ ছিল এক বিস্ময়কর ঘোষণা। তার মন্ত্রিসভার বেশিরভাগ সদস্যও বুঝতে পারছিলেন না বিশ্বব্যাংকের সহায়তা ছাড়া এত বড় প্রকল্প কীভাবে সম্ভব হবে। ওই সময় পত্রপত্রিকার কলাম ও টেলিভিশন টকশোতে পদ্মা সেতু প্রকল্প-সংক্রান্ত আলোচনায় দুর্নীতির অভিযোগ, সন্দেহ ও অবিশ্বাসই প্রাধান্য পায়।

কিন্তু প্রধানমন্ত্রী দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন। করোনা মহামারি সময় প্রকল্পের কাজ বরং আরও বেশি গতিতে এগিয়েছে।

কাজটি ভীষণ কঠিন ছিল। আর সেতুটিকে যানবাহনের জন্য প্রস্তুত করা আর্থিক ও প্রযুক্তিগত উভয় দিক থেকে বাস্তবিকই চ্যালেঞ্জিং ছিল।

সরকার কোনো অর্থদাতা সংস্থার কাছ থেকে ঋণ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় এবং বাজেট বরাদ্দের মাধ্যমে নিজস্ব অর্থায়নে মর্যাদাপূর্ণ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করে।

এ ঘোষণায় মানুষের মধ্যে বিপুল উৎসাহের সঞ্চার হয়। তহবিল সংগ্রহের জন্য স্কুলশিক্ষার্থীরা টিফিনের টাকা সঞ্চয় করে, সরকারি কর্মচারীরা একদিনের বেতন দান করেন, বিমা খাত তাদের স্থায়ী আমানত থেকে সহায়তা দেয়, পুঁজিবাজার অবকাঠামো বন্ড ছাড়ার পরামর্শ দেয়।

প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহের জন্য সার্বভৌম বন্ড ইস্যু করা, বিশ্ব অর্থবাজার থেকে ঋণ নেওয়া, এমনকি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ হোল্ডিংয়ের একটি অংশ ব্যবহার করার পরামর্শও ছিল।

সরকার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে এবং পদ্মা সেতু প্রকল্পের জন্য বার্ষিক বাজেটে অর্থ আলাদা রেখে নিজস্ব অর্থায়নের পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যায়। নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে।

মূল সেতুর দৈর্ঘ্য সংশোধন করে বাড়ানো হয় এবং নতুন উপাদান যুক্ত করা হয়। এতে ব্যয় ২০০৭ সালের প্রাথমিকভাবে প্রাক্কলিত ১০,১৬১ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ৩০,১৯৩ কোটি টাকায় উন্নীত হয়।

ছবি: মুমিত এম

পদ্মা সেতু প্রকল্পের ব্যয় মেটাতে অর্থ বিভাগের সঙ্গে ২৯ হাজার ৯০০ কোটি টাকার একটি ঋণ চুক্তি করেছে সেতু বিভাগ। এই অর্থ ১৪০ কিস্তিতে ৩৫ বছরে ১ শতাংশ সুদসহ পরিশোধ করা হবে। সেতু পারাপারের টোল আদায়ের মাধ্যমে আগামী ৩০ বছরে প্রকল্প ব্যয় উঠে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে৷

সংযুক্ত থাকার শক্তি

অর্থনীতিতে একটি সেতু গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। স্যান ফ্রান্সিসকোর ফেডারেল রিজার্ভ হিসাব করে দেখেছে, একটি সেতু ও সংশ্লিষ্ট সড়ক তৈরি করতে ১ ডলার খরচ করা হলে ওই এলাকার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হয় ২ ডলার।

ডেনমার্ক ও সুইডেনকে সংযুক্ত করা ওরেসুন্দ ব্রিজ, বসফরাস নদীর উপর তুর্কি ফাতিহ সুলতান মেহমেত সেতু, কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের ওহিও রিভার ব্রিজ প্রকল্প, চীনের হংকং-ম্যাকাও সেতু, জাপানের আকাশি-কাইকিও সেতু, অথবা আমু নদীর উপর আফগানিস্তান-উজবেকিস্তান মৈত্রী সেতু এই দেশগুলোর অর্থনীতি ও জীবনে সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলেছে।

যমুনা নদীর উপর ২৪ বছর আগে নির্মিত হয় বঙ্গবন্ধু সেতু। আশা করা করা হয়েছিল এর নির্মাণ ব্যয় ২০৩৪ সাল নাগাদ সেতু পারাপারকারী যানবাহন থেকে আদায় করা টোল থেকে উঠে আসবে। কিন্তু যমুনা সেতুতে টোল আদায়ের পরিমাণ ইতিমধ্যে নির্মাণ ব্যয়কে ছাড়িয়ে গেছে। এই উদ্বৃত্ত অর্থ পদ্মা সেতুর ঋণ পরিশোধে ব্যবহার করা হবে বলে জানিয়েছেন সেতু বিভাগের কর্মকর্তারা।

উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোর অর্থনীতিতে সেতুটির অর্থনৈতিক সুফল আলাদাভাবে খতিয়ে দেখা হয়নি। পূর্বাঞ্চলের ওপর মেঘনা ও গোমতী সেতুর প্রভাব সম্পর্কেও এমন কোনো গবেষণা নেই।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) দারিদ্র্যের তথ্য মোটা দাগে ইঙ্গিত দিতে পারে একটি সেতু কীভাবে পার্থক্য গড়ে দেয়। ২০১০ সাল থেকে পাঁচ বছরে রাজশাহীতে চরম দারিদ্র্যের হার ১৭.৭ শতাংশীয় পয়েন্ট কমেছে, যেখানে বরিশালে একই সময়ে দারিদ্র্য হ্রাসের হার ছিল ৮.৯ শতাংশীয় পয়েন্ট।

৯০০ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে নির্মিত ৪.৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের বঙ্গবন্ধু যমুনা বহুমুখী সেতু ১৯৯৮ সালের ২৩ জুন যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। যমুনা সেতু দেশের তুলনামূলক দরিদ্র ও স্বল্পোন্নত উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোকে দেশের বাকি অংশের সঙ্গে যুক্ত করেছে, ওই অঞ্চলে নাটকীয় অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তন এনেছে। 

সেতুটি নির্মাণের আগে যমুনা নদী পার হওয়ার একমাত্র উপায় ছিল ফেরি। প্রচণ্ড যানজট হতো সেই সময়, ফেরিও চলত অত্যন্ত ধীরগতিতে। ফলে ঢাকা থেকে বগুড়া যেতে ১২ থেকে ৩৬ ঘণ্টা লেগে যেত। যমুনা সেতু হওয়ার পর যাতায়াতে সময় লাগে মাত্র ৪ ঘণ্টা।

পদ্মা সেতুর কাজে নিয়োজিত আছে চীনা ও কোরিয়ান কোম্পানি। বাংলাদেশের ফ্ল্যাগশিপ সড়ক অবকাঠামো প্রকল্পের জমকালো উদ্বোধনের এক সপ্তাহ আগে তারা গণমাধ্যমে বক্তব্য দেয়।

বিদেশি কূটনীতিকদের প্রশংসা

বাংলাদেশে নিযুক্ত দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত লি জ্যাং-গুন বলেছেন, স্বপ্ন আজ গৌরবময় বাস্তবতা। অনেক গর্বের ইতিহাস সৃষ্টিকারী প্রকল্প এটি।

চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বলেছেন, পদ্মা সেতুর কথা ভাবলে তার মাথায় তিনটি শব্দই আসে—সাহস, সংকল্প এবং সমৃদ্ধি।

ঢাকায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি এক বার্তায় বলেছেন, দেশের উন্নয়নের যাত্রায় 'অবিস্মরণীয় মুহূর্ত' হবে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন।

বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী বলেছেন, বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে বড় পরিসরে সংযোগ স্থাপন ও বিবিআইএন চুক্তি বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখবে বহুল প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতু।

আঞ্চলিক সংযোগ স্থাপনে ভূমিকা রাখায় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ ও মার্কিন দূতাবাসও অভিনন্দন জানিয়েছে।

রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রামের প্রধান বন্দরের সঙ্গে দেশের দক্ষিণাঞ্চলকে সংযুক্ত করেছে পদ্মা সেতু। বিদেশি বাণিজ্যের ক্ষেত্রে গুরুত্ব পাবে দ্বিতীয় বৃহত্তম মোংলা বন্দর।

বৃহত্তর বরিশাল, যশোর ও খুলনার সঙ্গে সড়কপথে ঢাকাকে সংযুক্ত করেছে এ সেতু, আগামী ডিসেম্বর থেকে রেলপথেও যাতায়াত শুরু হবে। রেলওয়ের ১৭০ বছরের ইতিহাসে এটিই প্রথম।

ট্রান্স এশিয়ান হাইওয়ে (এন-৮) ও ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ের অংশ হিসেবে, ভারত নেপাল ও ভূটানের সঙ্গে বাণিজ্য প্রসারে ভূমিকা রাখবে সেতুটি। মোংলা ও পায়রা বন্দর এবং দেশের দুটি প্রধান স্থলবন্দর মোংলা ও পায়রা ব্যবহার সহজ হবে।

নদীরা দুই পাশের মাওয়া ও জাজিরা পয়েন্ট অসংখ্য রিসোর্ট, দোকান, বিনোদন কেন্দ্র সমৃদ্ধ নতুন শহরে পরিণত হবে। পর্যটকদের জন্য নতুন আকর্ষণ হবে, অনেকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে।

ঢাকাকে ফরিদপুর, মাদারিপুর, যশোর, খুলনা ও বরিশালের সঙ্গে সংযুক্ত করে অর্থনৈতিক করিডোর গঠনে সহায়ক হবে। মোংলা ও ভোমরা বন্দরের সর্বাধিক ব্যবহার নিশ্চিত হবে।

অর্থনীতি ছাড়াও, দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ স্বাস্থ্যসেবা নিতে অতি দ্রুত ঢাকায় আসতে পারবে।

ছবি: মুমিত এম

শুধু পদ্মা সেতু অতিক্রম করাও পর্যটকদের জন্য রোমাঞ্চকর হবে, সুন্দরবনসহ অত্র অঞ্চলের পর্যটন কেন্দ্রগুলোরও আকর্ষণ বাড়বে।

সব মিলিয়ে দেশের অর্থনীতিতে সেতুটির অবদান হবে জিডিপিতে ১.২ শতাংশ ও আঞ্চলিক জিডিপিতে ২.৫ শতাংশ।

অভিজ্ঞতা ও শিক্ষা

প্রায় ৮০ জন তরুণ প্রকৌশলীর জন্য কর্মজীবনের শুরুর দিকে এত বড় আর চ্যালেঞ্জিং প্রকল্পের অংশ হওয়াটা সারা জীবনের অর্জন হয়ে থাকবে। নদী প্রশিক্ষণ থেকে শুরু করে ড্রেজিং, পাইলিং, জিও ব্যাগ ও পাথর ফেলা, দেশে আগে কখনও ব্যবহৃত হয়নি এমন বিশাল আধুনিক সরঞ্জাম ব্যবহার—এই সবকিছুই তাদেরকে ভবিষ্যৎ কর্মজীবনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অভিজ্ঞতা হয়ে থাকবে।

প্রকল্প পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, এ প্রকল্পে বিভিন্ন বিষয়ে কাজ করার সময় তরুণ প্রকৌশলীরা ৩০টির মতো দেশের দক্ষ পেশাদারদের সঙ্গে পরিচিত হয়। তার বিশ্বাস,ভবিষ্যতে তাদের কাজের জন্য অমূল্য শিক্ষা ছিল এটি।

পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পে সরকারের বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সভাপতিত্ব করা সিভিল ইঞ্জিনিয়ার অধ্যাপক এম শামীম জেড বসুনিয়াও দেশের প্রকৌশলীদের কথা বলেন। মাটি পরীক্ষা থেকে শুরু করে নকশা তৈরি, তত্ত্বাবধান পর্যন্ত বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করে মূল্যবান অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন তারা।

'এ অভিজ্ঞতা তাদেরকে সমৃদ্ধ করেছে। পরিবর্তে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করেছে তারা,' বলেন তিনি।

উত্তাল পদ্মা নদীর বুকে সেতু নির্মাণ করাটাই ছিল চ্যালেঞ্জ। বিশ্বে পদ্মা সেতুর চেয়ে বড় সেতু আছে, তবে পদ্মা নদীর মতো এতো বড় এবং খরস্রোতা কোনো নদীর ওপর সেতু নেই। সেতুর ফাউন্ডেশন নির্মাণ থেকেই বিভিন্ন প্রযুক্তিগত ও অন্যান্য চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েন প্রকৌশলীরা। মাটির স্তর থেকে ৭০-৮০ ফুট উপরে সেতুটি।

পুরো প্রকল্পের কাজে প্রমত্তা পদ্মার শক্তিশালী স্রোতকে বাগে আনাও চ্যালেঞ্জের কাজ ছিল, দেশে প্রথমবারের মতো এতো বড় ড্রেজার আর হ্যামার ব্যবহার করতে হয়েছে।

অধ্যাপক বসুনিয়ার আশা, ভবিষ্যতে চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলকে দ্রুত যাতায়াতের ব্যবস্থা করতে এরকম আরও বড় সেতু নির্মাণে সহায়ক হবে পদ্মা সেতু প্রকল্পের মাধ্যমে অর্জিত দক্ষতা। চাঁদপুর ও শরীয়তপুরকে সংযুক্ত করতে মেঘনা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের এরকম একটি পরিকল্পনা আছে।

অন্যান্য অনেক সুবিধার সঙ্গে এটি পদ্মা সেতুর উপরি পাওনা। 

Related Topics

টপ নিউজ

পদ্মা সেতু / পদ্মা সেতু উদ্বোধন / অবকাঠামো

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • ছবি: টিবিএস
    ৩ ঘণ্টা পর শাহবাগ ছাড়লেন বিক্ষোভকারীরা, যান চলাচল স্বাভাবিক
  • ছবি: সংগৃহীত
    বছরজুড়ে নিজেদের শক্তির প্রমাণ দিল চীন; আর তাতে নিজের অজান্তেই ‘সাহায্য’ করলেন ট্রাম্প
  •  শনিবার (২০ ডিসেম্বর) রাত ১২টা ৩০ মিনিটের দিকে সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নের পশ্চিম চরমনসা গ্রামের সুতারগোপ্টা এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। ছবি: টিবিএস
    লক্ষ্মীপুরে 'দরজায় তালা লাগিয়ে' বিএনপি নেতার ঘরে আগুন; পুড়ে মরলো শিশু, দগ্ধ ২
  • এ কে খন্দকার। ছবি: সংগৃহীত
    মুক্তিযুদ্ধের ডেপুটি চিফ অব স্টাফ এ কে খন্দকার মারা গেছেন
  • প্রতীকী ফাইল ছবি: সংগৃহীত
    ময়মনসিংহে হিন্দু যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার ১০
  • শরিফ ওসমান হাদি। ছবি: সংগৃহীত
    হাদির জানাজা পড়াবেন বড় ভাই আবু বকর, দাফন করা হবে কবি নজরুলের সমাধি চত্বরে

Related News

  • পদ্মা সেতু–এক্সপ্রেসওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে; রাজধানীর সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের যান চলাচল স্বাভাবিক
  • ডিসেম্বরে উৎপাদনের জন্য প্রস্তুত নয় রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র: আইএমইডি
  • স্বাস্থ্য-শিক্ষায় অগ্রাধিকার দিয়ে ৩৬ প্রকল্পে বিদেশি অর্থায়নের পরিকল্পনা সরকারের
  • পদ্মা সেতুতে চালু হলো ইলেকট্রনিক টোল, গাড়ি না থামিয়েই যেভাবে দিতে হবে
  • পদ্মা সেতুতে নন-স্টপ ইলেকট্রনিক টোল কালেকশন চালু হচ্ছে আগামীকাল

Most Read

1
ছবি: টিবিএস
বাংলাদেশ

৩ ঘণ্টা পর শাহবাগ ছাড়লেন বিক্ষোভকারীরা, যান চলাচল স্বাভাবিক

2
ছবি: সংগৃহীত
আন্তর্জাতিক

বছরজুড়ে নিজেদের শক্তির প্রমাণ দিল চীন; আর তাতে নিজের অজান্তেই ‘সাহায্য’ করলেন ট্রাম্প

3
 শনিবার (২০ ডিসেম্বর) রাত ১২টা ৩০ মিনিটের দিকে সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নের পশ্চিম চরমনসা গ্রামের সুতারগোপ্টা এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। ছবি: টিবিএস
বাংলাদেশ

লক্ষ্মীপুরে 'দরজায় তালা লাগিয়ে' বিএনপি নেতার ঘরে আগুন; পুড়ে মরলো শিশু, দগ্ধ ২

4
এ কে খন্দকার। ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ

মুক্তিযুদ্ধের ডেপুটি চিফ অব স্টাফ এ কে খন্দকার মারা গেছেন

5
প্রতীকী ফাইল ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ

ময়মনসিংহে হিন্দু যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার ১০

6
শরিফ ওসমান হাদি। ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ

হাদির জানাজা পড়াবেন বড় ভাই আবু বকর, দাফন করা হবে কবি নজরুলের সমাধি চত্বরে

EMAIL US
contact@tbsnews.net
FOLLOW US
WHATSAPP
+880 1847416158
The Business Standard
  • About Us
  • Contact us
  • Sitemap
  • Privacy Policy
  • Comment Policy
Copyright © 2025
The Business Standard All rights reserved
Technical Partner: RSI Lab

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net