স্মরণ: কমরেড সরজিত সেন

রাজনৈতিক পরিবারে জন্ম সরজিত সেনের, রাজনৈতিক আবহের মধ্যেই বেড়ে ওঠা। ফলে পড়াশোনা আর রাজনীতি চলতে থাকে সমান্তরালে। ষাটের দশক। সময়টা তখন উত্তাল। স্বাধিকার আন্দোলন তুঙ্গে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এক কাতারে রাস্তায় নেমেছে সব শ্রেণি ও পেশার মানুষ। সবচেয়ে অগ্রণী ভূমিকায় রয়েছে ছাত্রসমাজ। সেই স্রোতে সামিল হলেন নোয়াখালীর মাইজদি থেকে সদ্য এন্ট্রান্স পাশ করা কিশোর সরজিত। সেই থেকে শুরু বামধারার রাজনীতির সঙ্গে তাঁর পথচলা।
৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ। সদ্য-স্বাধীন দেশে পড়াশোনার ছিন্ন সূত্র আবার জোড়া লাগল। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শনশাস্ত্রে সম্মানসহ স্নাতকোত্তর সরজিত কখনো নিজেকে দূরে রাখেননি রাজনীতির অঙ্গন থেকে। বাম রাজনীতির যে দীক্ষা নিয়েছিলেন কৈশোরে, তাকে আঁকড়ে থেকেছেন আজীবন। বিবর্তন আর মেরুকরণের ধারায় বদলেছে সংগঠনের নাম, কিন্তু অটল থেকেছেন একই আদর্শে। শোষণ ও বৈষম্যমুক্ত, ন্যায় ও সাম্যের ভিত্তিতে সমাজ প্রতিষ্ঠা। ছাত্র ইউনিয়ন, জাতীয় ছাত্র আন্দোলন, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, কৃষক, বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (মার্কস-লেনিন), ওয়ার্কার্স পার্টির আঙ্গিনা জুড়ে ছিল তাঁর অর্ধশতকের রাজনৈতিক পথপরিক্রমা।
সরজিত সেনের জন্ম ১৯৫২। বাবা অটল বিহারী সেন ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেসের কর্মী হিসেবে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন করেছেন। মাতা স্নেহলতা সেনও কংগ্রেস রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন। এসএসসি দীঘলি হাই স্কুল। এইচএসসি নোয়াখালী সরকারি কলেজ ১৯৭২। তারপর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
গণমানুষকে ভালবেসেছেন আজীবন, থাকতে চেয়েছেন তাদের মধ্যেই। পেশা হিসাবে বেছে নিয়েছিলেন শিক্ষকতা। নিজের এলাকা লক্ষীপুর জেলার দাসেরহাটের জনতা কলেজে অধ্যাপনা শেষে অবসর নিয়ে নিভৃতেই কাটিয়েছেন জীবনের সায়াহ্নকাল। সেই জীবনেরও ইতি টানলেন।
আমাদের সুদীর্ঘ ৫০ বছরকালের ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক বন্ধু কমরেড অধ্যাপক সরজিত সেন আজ (২০-৪-২০২২) ভোররাতে লক্ষীপুরে মৃত্যুবরণ করেছেন। আমাদের স্মৃতিতে অমলিন থাকবেন সদারসিক, নিঃস্বার্থ রাজনীতিক কর্মী, প্রজ্ঞাবান অথচ গণচরিত্রের সরজিত সেন।
লাল সালাম কমরেড।