Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে কর্ণফুলী 

গত ৩০ বছর ধরে কর্ণফুলীর তলদেশে ক্রোমিয়াম, তামা, নিকেল, সীসা ও দস্তার মতো ভারী ধাতু জমে নদীর গভীরতা তীব্রভাবে হ্রাস পেয়েছে। পানিতে এসব ধাতুর উপস্থিতি নিরাপদ সীমা অতিক্রম করায় ধ্বংস হচ্ছে নদীর বাস্তুসংস্থান।
মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে কর্ণফুলী 

বাংলাদেশ

আবু আজাদ
20 February, 2022, 12:30 pm
Last modified: 20 February, 2022, 02:07 pm

Related News

  • কর্ণফুলী নদীতে লাইটার জাহাজে দুর্ঘটনায় ২ শ্রমিক নিহত
  • লক্ষ্মীপুরে মেঘনার তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ বন্ধ রেখেছে ৫ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান, ভাঙন আতঙ্কে স্থানীয়রা
  • বগুড়ার ঘড়িয়া ও চন্দ্রাবতী নদী কি সত্যিই ‘নিখোঁজ’?
  • ছবি | কর্ণফুলী রক্ষায় সচেতনতা তৈরিতে চট্টগ্রামে সাম্পান বাইচ
  • চট্টগ্রামে প্লাস্টিক বর্জ্যের ৭৩ শতাংশ রিসাইক্লিং হচ্ছে: কর্মশালায় বক্তারা 

মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে কর্ণফুলী 

গত ৩০ বছর ধরে কর্ণফুলীর তলদেশে ক্রোমিয়াম, তামা, নিকেল, সীসা ও দস্তার মতো ভারী ধাতু জমে নদীর গভীরতা তীব্রভাবে হ্রাস পেয়েছে। পানিতে এসব ধাতুর উপস্থিতি নিরাপদ সীমা অতিক্রম করায় ধ্বংস হচ্ছে নদীর বাস্তুসংস্থান।
আবু আজাদ
20 February, 2022, 12:30 pm
Last modified: 20 February, 2022, 02:07 pm

নির্বিচারে গৃহস্থালি ও শিল্পবর্জ্য ফেলা, অনিয়ন্ত্রিত পরিবেশ দূষণ এবং নিরবচ্ছিন্ন দখলের কারণে ধীরে ধীরে শ্বাসরোধ হয়ে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের জীবননালী কর্ণফুলী নদী।

৯ হাজার কোটি টাকার সরকারি প্রকল্প থেকে শুরু করে হাইকোর্টের নির্দেশনা ও মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন—কোনো কিছুতেই যেন রক্ষা করা যাচ্ছে না কর্ণফুলীকে।

নদীর তীর দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে শত শত আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন। এসব ভবনের বর্জ্য ফেলা হচ্ছে নদীর পানিতে। এই দখল বর্জ্যের কারণে একসময়ের প্রমত্ত কর্ণফুলী ক্রমাগত সংকুচিত হতে হতে আজ প্রায় খালে পরিণত হয়েছে।

বছরের পর বছর ধরে নাব্যতা কমে যাওয়ায় মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নৌ-বাণিজ্য। অন্যদিকে লাগামহীন দূষণে ঝুঁকিতে রয়েছে জনস্বাস্থ্য ও নদীর জলজ বাস্তুতন্ত্র।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, কর্ণফুলীর বহু উদ্ভিদ ও মৎস্য প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে গেছে, বহু প্রজাতি আজকাল বলতে গেলেই নদীতে পাওয়াই যায় না।

চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলন নামে একটি সংগঠনের ২০২০ সালের জরিপ প্রতিবেদন বলছে, শাহ আমানত সেতু এলাকায় জোয়ারের সময় নদীটির প্রস্থ এখন ৫১০ মিটার আর ভাটার সময় ৪১০ মিটার, যা আগে ছিল ৮৮৬ মিটার।

রাজাখালী খালের মুখে নদীর প্রশস্ততা প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। ফিরিঙ্গিবাজার পয়েন্টে নদীর প্রস্থ ছিল ৯০৪ মিটার, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ গাইড ওয়াল নির্মাণের পর সেখানে নদী আছে ৭৫০ মিটার।

কর্ণফুলীর প্রধান খাল চাক্তাই ভরাট হয়ে জলাবদ্ধতা ও নাব্যতা সংকটে বিলীনের পথে দেশের ভোগ্যপণ্যের প্রধান পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জের নৌ-বাণিজ্য। লোকসানের মুখে খাতুনগঞ্জ ছেড়ে যেতে বাধ্য হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। বর্তমানে চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় নতুন করে চাক্তাই খালে টাইডাল রেগুলেটর বসানো হচ্ছে, কিন্তু তা-ও বাণিজ্য নৌকার আকারের চেয়ে ছোট।

এ সমস্যার সমাধান ঠিকমতো করা না হলে খাতুনগঞ্জের নৌ-বাণিজ্য পুরোপুরিভাবে বন্ধ হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।

চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসন ও কর্ণফুলীর নাব্যতা ফিরে পেতে গত পাঁচ বছরে চারটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এসব প্রকল্পে খরচ হচ্ছে ৯ হাজার কোটি টাকা। কর্ণফুলী রক্ষায় হাইকোর্টও নির্দেশনা দিয়েছেন। নদীটিকে অবৈধ দখল ও দূষণমুক্ত করার আহ্বান জানিয়েছে জাতীয় নদী সংরক্ষণ কমিশন। কর্ণফুলীকে দূষণ ও দখলমুক্ত করতে গত বছর মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়।

কিন্তু কোনো কিছুই যেন কাজে আসছে না।

নদীর তীর দখল করে গড়ে তোলা শত শত আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবনের বর্জ্য ফেলা হচ্ছে নদীর পানিতে। এই দখল বর্জ্যের কারণে একসময়ের প্রমত্ত কর্ণফুলি ক্রমাগত সংকুচিত হতে হতে আজ প্রায় খালে পরিণত হয়েছে। ছবি-মোহাম্মদ মিনহাজ উদ্দিন/টিবিএস

৩ কিলোমিটারে ১৪০টি জেটি ও ঘাট

কর্ণফুলীর দুই তীরে বাংলাবাজার ঘাট থেকে শাহ আমানত সেতু পয়েন্ট পর্যন্ত মাত্র তিন কিলোমিটার এলাকায় গড়ে উঠেছে ১৪০টি জেটি ও ঘাট। নদীর গুরুত্বপূর্ণ এই অংশে বিপুল স্থাপনার কারণে জাহাজ চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে, দিন দিন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে কর্ণফুলী চ্যানেল।

গত একবছরে কর্ণফুলীতে নৌ-দুর্ঘটনায় এক মাঝিসহ মৃত্যু হয়েছে অন্তত পাঁচজনের। ঘটেছে বাল্কহেড ও লাইটারেজ জাহাজডুবির ঘটনাও।

কিন্তু কর্ণফুলী রক্ষার দায়িত্বে থাকা চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ এ নিয়ে দৃশ্যত কোনো উদ্যোগ নেয়নি। উপরন্তু অভিযোগ আছে, বন্দর কর্তৃপক্ষের কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশেই নদীর তীর দখল করে এসব জেটি-ঘাট তৈরি হচ্ছে।

লাইটার জাহাজ পরিচালনাকারী সংস্থা ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেলের যুগ্ম-সচিব আতাউল কবীর রঞ্জু বলেন, 'নদীতীরে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ঘাট ও জেটিতে আসা ফিশিং বোটগুলোর কারণে কর্ণফুলী চ্যানেলে জাহাজ চলাচল দুরূহ হয়ে উঠেছে।অনেকসময় নদীতে জায়গা না পেয়ে বহির্নোঙ্গরে ঝুঁকি নিয়ে জাহাজ রাখতে হয়। এছাড়া চ্যানেলে অতিরিক্ত জাহাজের উপস্থিতির কারণে বিভিন্ন সময় দুর্ঘটনা ঘটছে।'

জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা)র সাবেক পরিবেশ কনসালটেন্ট আলীউর রহমান বলেন, 'বৈধ-অবৈধ সব ঘাটই চট্টগ্রাম বন্দরের কর্মকর্তাদের ইচ্ছায় তৈরি হয়েছে। মূলত নিজেদের পকেট ভারী করার জন্য দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ-ঘাট ও জেটি অপসারণে তারা কোনো অভিযান পরিচালনা করছেন না।'

তবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের ডেপুটি ম্যানেজার (স্টেট ডিপার্টমেন্ট) জিল্লুর রহমানের দাবি, 'কর্ণফুলীতে বর্তমানে কোনো অবৈধ ঘাট বা জেটি নেই।'

চট্টগ্রাম বন্দর সচিব ওমর ফারুক বলেন, 'প্রায় ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে কর্ণফুলী ড্রেজিংয়ের কাজ আগামী জুন মাসের আগেই শেষ হবে। ড্রেজিং পুরোপুরি শেষ হলে চ্যানেলে আর সমস্যা থাকবে না।'

'অবৈধ' ইজারা

২০১০ সালে হাইকোর্ট কর্ণফুলী নদী ও তীর দখলকারী ব্যক্তিদের নামের তালিকা প্রকাশের নির্দেশ দেন। নির্দেশনা অনুসারে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ২০১৪ সালে জরিপ করে ২ হাজার ১৮১ ব্যক্তিকে চিহ্নিত করে।

কিন্তু জেলা প্রশাসন প্রতিবেদন দেয়ার পর মামলা চলাকালেই ২০১৫ সালে চাক্তাই ও রাজাখালী খালের জাতীয় মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেডকে ১৫ বছরের জন্য ১৪৭ দশমিক ১০ একর জায়গা লিজ দেয় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। এর পাশেই নতুন ফিশারি ঘাটে মাছবাজারকে বরাদ্দ দেওয়া হয় ১ লাখ ৭৫ হাজার ২৬৩ বর্গফুট জায়গা, যা নদীর অংশে পড়েছে।

তৎকালীন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন ২০১৬ সালে ১৪৭ দশমিক ১০ একর জায়গাকে কর্ণফুলী নদীর অংশ হিসেবে চিহ্নিত করে জাতীয় মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেড কর্তৃক নির্মাণাধীন স্থাপনার কাজ বন্ধ করতে নির্দেশ দেন।

অবৈধ স্থাপনা অপসারণে জেলা প্রশাসন, ভূমি অফিস, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষসহ পাঁচটি সংস্থা চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিলেও গত পাঁচ বছরেও তা কার্যকর করেনি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।

চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলনের সভাপতি চৌধুরী ফরিদ বলেন, 'মাছবাজার ও ভেড়া মার্কেট উচ্ছেদের বিষয়ে হাইকোর্টের আদেশের ৪ নম্বর কলামে সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু বন্দর কর্তৃপক্ষ তার তোয়াক্কা না করেই নতুন মাছবাজার চলমান রেখেছে। ২০১৯ সালের আদেশের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে নতুন মাছবাজার উচ্ছেদ করা বাধ্যতামূলক ছিল। বন্দর কর্তৃপক্ষ মাছবাজার উচ্ছেদ না করে নতুন করে বরফকল স্থাপনের জন্য কর্ণফুলী নদীর মাঝখানে শাহ আমানত ব্রিজের মাঝপিলার বরাবর ২ হাজার বর্গফুট নদীর জমি নতুন করে লিজ দিয়েছে।'

নদীর তীর দখল করে গড়ে তোলা শত শত আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবনের বর্জ্য ফেলা হচ্ছে নদীর পানিতে। এই দখল বর্জ্যের কারণে একসময়ের প্রমত্ত কর্ণফুলী ক্রমাগত সংকুচিত হতে হতে আজ প্রায় খালে পরিণত হয়েছে। ছবি-মোহাম্মদ মিনহাজ উদ্দিন

২০১৯ সালের ২১ এপ্রিল কর্ণফুলী পরিদর্শন করে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন। সে সময় এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, 'বিভিন্ন সংস্থা নিয়মের সম্পূর্ণ লঙ্ঘন করে নদীতীর দখল করে কাঠামো নির্মাণ করছে। যা নদীর প্রবাহকে সংকুচিত করছে।

'ফলে নদী বন্যার সময় অতিরিক্ত পানি ধরে রাখতে পারবে না। তাছাড়া নদীর ধারণক্ষমতা দ্রুত কমে যাবে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ায় নদীটি ঘূর্ণিঝড়, ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় ব্যর্থ হবে।'

জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সার্বক্ষণিক সদস্য (অতিরিক্ত সচিব) কামরুন নাহার আহমেদ বলেন, 'রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ এবং প্রজাস্বত্ব আইন, ১৯৫০ অনুসারে, নদীর তীরে ইজারা দেওয়া যাবে না এবং কোনো সংস্থা নদী দখল বা ভরাট করে কাঠামো তৈরি করতে পারবে না। এই আইন লঙ্ঘন করেই কর্ণফুলী নদীতে বিভিন্ন সময় তীর ইজারা দেওয়া হচ্ছে।'

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান বলেন, কর্ণফুলী রক্ষার দায়িত্ব চট্টগ্রাম বন্দরের। উচ্চ আদালত যে রায় দিয়েছেন, তারা সেই দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালন করছেন। 

নদী দখলে রাজনৈতিক দলের নেতারা

কর্ণফুলী নদীর শাহ আমানত সেতুর আশপাশে জেগে ওঠা চর দখল করে বস্তি-বাণিজ্য করছেন কিছু রাজনৈতিক নেতা। নদীভাঙন ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে শহরে আসা দরিদ্র লোকজনকে ভাড়া দিয়ে চাক্তাই ও রাজাখালী খালের মুখে অন্তত ৩০ একর সরকারি খাসজমি ২০ বছর ধরে দখল করে রেখেছেন তারা।

দখল বজায় রাখতে গঠন করা হয়েছে 'ভেড়া মার্কেট শ্রমজীবী সমবায় কল্যাণ সমিতি' নামে একটি সংগঠন। স্থানীয় যুবলীগ নেতা আকতার হোসেন এ সমিতির সভাপতি।

এ বিষয়ে জানতে আকতারের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। খুদেবার্তা পাঠালেও জবাব দেননি।

আকতারের ছেলে আরমান বলেন, 'বস্তির বিষয়ে আমি কথা বলতে পারব না, ওটা আব্বুর বিষয়।'

বর্তমানে আকতারের সেই বস্তি থেকে ভাড়া তোলার দায়িত্বে আছেন রোজিনা নামের এক নারী। তিনি বলেন, 'আমি ভাড়াটিয়াদের কাছ থেকে ভাড়া তুলে পাঠিয়ে দেই। তারা এখন এদিকে তেমন আসেন না।'

তবে উচ্ছেদ ঠেকাতে ২০১৪ সালে আকতার হোসেনের হাইকোর্টে করা রিট আবেদন এখনও নিষ্পত্তি হয়নি বলে জানান রোজিনা।

এছাড়া বকশিরহাট তৃতীয় সেতু-সংলগ্ন কলেজ রোড এলাকায় নদীর জায়গা দখলে রেখেছেন আরেক রাজনৈতিক নেতা নুরুল আমিন। তিনিও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত বলে অভিযোগ রয়েছে। আমিনের কলোনির নাম 'শান্তি কলোনি'। বাকলিয়া বহুমুখী বাস্তুহারা কলোনির নামে অন্তত ৫০ একর জমি দখলে রয়েছে।

জসিম উদ্দিন নামে বিএনপির এক নেতা এই জমি প্রথম বেচাকেনা করতেন। এখন এই কলোনির দেখভাল করেন আওয়ামী লীগ নেতা সুশীল।

তবে ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি মান্না বিশ্বাস দাবি করেন, 'আকতার বা আমিন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ বা যুবলীগের কেউ না। অপরাধ থেকে বাঁচার জন্য অনেকে এসব পরিচয় দেয়।'

দূষণে নীল কর্ণফুলীর জল

কর্ণফুলী নদীর দূষণ রোধ, নাব্যতা বৃদ্ধি এবং অবৈধ দখল রোধকল্পে প্রণীত পরিকল্পনায় উল্লেখ করা হয়েছে, চট্টগ্রাম নগরের ৩৬টি খাল দিয়ে দিনে প্রায় ৫ হাজার টন পয়ঃবর্জ্য ও গৃহস্থালির বর্জ্য পড়ছে কর্ণফুলীতে। পাশাপাশি রয়েছে শিল্প ও চিকিৎসা বর্জ্য। এর বাইরে নদীতে চলাচলকারী নৌযানগুলোর পোড়া তেলে কর্ণফুলীর দূষণ চরমে পৌঁছেছে। সবচেয়ে বেশি দূষণের শিকার নদীসংলগ্ন খালগুলো।

রোববার নগরের চাক্তাই খাল এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, তীর দখল করে গড়ে তোলা স্থাপনার কারণে চর পড়েছে চাক্তাই খাল ও খালের মোহনাজুড়ে। কালো রঙের তীব্র দুর্গন্ধযুক্ত পানি নেমে যাচ্ছে কর্ণফুলী নদীতে। বর্জ্যের বিষে নীল খালের পানির গন্ধে নদীতীরে টেকা দায়।

ইউনিভার্সিটি অব হংকং, আরএমআইটি ইউনিভার্সিটি, অস্ট্রেলিয়া ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরিন সায়েন্স ইনস্টিটিউটের এক যৌথ গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কর্ণফুলীতে কেবল সার কারখানাগুলোই প্রতিদিন ১৪৫ ঘনমিটার দূষিত পানি, ৩৫ মেট্রিক টন চায়না মাটি, ৪ মেট্রিক টন সেলুলোজ এবং সোডিয়াম হাইড্রক্সাইড ফেলে।

নদীর তীর দখল করে গড়ে তোলা শত শত আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবনের বর্জ্য ফেলা হচ্ছে নদীর পানিতে। এই দখল বর্জ্যের কারণে একসময়ের প্রমত্ত কর্ণফুলী ক্রমাগত সংকুচিত হতে হতে আজ প্রায় খালে পরিণত হয়েছে। ছবি-মোহাম্মদ মিনহাজ উদ্দিন

গবেষক দলের সদস্য ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরিন সায়েন্স বিভাগের অধাপক ড. মো. এস এম মারুফ হোসেন বলেন, 'বিষাক্ত বর্জ্য নিঃসরণকারী শিল্পের মধ্যে রয়েছে ২৬টি টেক্সটাইল, একটি তেল শোধনাগার, একটি সার কারখানা, দুটি রাসায়নিক শিল্প, পাঁচটি মৎস্য প্রক্রিয়াকরণ ইউনিট, পাঁচটি কীটনাশক শিল্প প্রতিষ্ঠান। চট্টগ্রামের ১৭টি শিল্পজোনের প্রায় ৩০০ শিল্প প্রতিষ্ঠান এই দূষণের জন্য দায়ী।'

পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, সম্প্রতি কর্ণফুলীর প্রতি লিটার পানিতে জৈব-রাসায়নিক অক্সিজেন (বিওডি) পাওয়া গেছে ১৫ থেকে ২৫ মিলিগ্রাম পর্যন্ত, যা ৬ মিলিগ্রামের নিচে থাকার কথা।

নদী রক্ষায় নেওয়া মহাপরিকল্পনায় বলা হয়েছে, 'মহানগরে ৫০ হাজার স্যানিটারি এবং ২৪ হাজার কাঁচা শৌচাগার রয়েছে। চট্টগ্রাম ওয়াসার কোনো স্যুয়ারেজ সিস্টেম না থাকায় এ বর্জ্য সরাসরি নদীর পানিতে মিশছে।'

চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক একেএম ফজলুল্লাহ বলেন, 'চট্টগ্রামে স্যুয়ারেজ নিয়ে একটি মহাপরিকল্পনা হয়েছে। নগরকে ছয় ভাগে ভাগ করে স্যুয়ারেজ প্রকল্পের কাজ শুরু হবে।'

নষ্ট হচ্ছে কর্ণফুলীর বাস্তুতন্ত্র

২০১৫ সালে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক আইজুন ওয়াং ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্রবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কাউসার আহমেদ 'হেভি মেটাল অ্যাকুমুলেশন ডিউরিং দ্য লাস্ট ৩০ ইয়ারস ইন দ্য কর্ণফুলী রিভার এসচুয়ারি' শীর্ষক গবেষণা করেন।

ওই গবেষণায় দেখা গেছে, গত ৩০ বছর ধরে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে ক্রোমিয়াম, তামা, নিকেল, সীসা ও দস্তার মতো ভারী ধাতু জমে নদীর গভীরতা তীব্রভাবে হ্রাস পেয়েছে। পানিতে ক্রোমিয়াম, তামা ও সীসার উপস্থিতি নিরাপদ সীমা অতিক্রম করায় নদীর বাস্তুসংস্থান ও আশেপাশের জনজীবনে বিপর্যয় ঘটেছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

কর্ণফুলীর মাছের ওপর গবেষণা করছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনজুরুল কিবরিয়া। তিনি জানান, 'কর্ণফুলীতে স্বাদু পানির ৬৬ প্রজাতির মধ্যে ২০ থেকে ২৫ প্রজাতির মাছ প্রায় বিলুপ্ত, লবণাক্ত পানির ৫৯ প্রজাতির মধ্যে ১০ প্রজাতির মাছ হারিয়ে গেছে। সংকটাপন্ন অবস্থায় রয়েছে ডলফিনসহ অন্যান্য জলজ প্রাণী ও জীববৈচিত্র্য।'

তিনি আরও বলেন, 'আমাদের সংগৃহীত পানির নমুনায় মানবদেহে ক্যান্সারের ঝুঁকি তৈরি করে এমন উপাদান পেয়েছিলাম।'

নদী রক্ষায় নেওয়া মহাপরিকল্পনায় বলা হয়েছে, কর্ণফুলী নদীর তীরবর্তী এলাকায় যেসব মানুষ বসবাস করছেন, নদী দূষণের প্রভাব তাদের ওপরেও পড়ছে। এর কারণে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে পানিবাহিত রোগ। দূষণের ফলে নদীতে কমছে মাছ। ফলে পেশা পরিবর্তনের দিকে ঝুঁকছেন জেলেরা।

থেমে গেছে উচ্ছেদ

২০১৬ সালের ১৬ আগস্ট কর্ণফুলী নদীর দুই তীরে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে রায় দেন হাইকোর্ট। ২০১৯ সালে সুপ্রিমকোর্ট পূর্ণাঙ্গ রায়ে ২ হাজার ১৮১টি অবৈধ স্থাপনা সরাতে ৯০ দিনের সময় বেঁধে দেন জেলা প্রশাসনকে। সে বছর প্রথম ধাপে ২৩০টি স্থাপনা উচ্ছেদ করে ১০ একর ভূমি উদ্ধার করে জেলা প্রশাসন। কিন্তু এরপর থেকে কর্ণফুলীর তীর থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ রয়েছে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান বলেন, 'দেশের অর্থনীতির স্বার্থে কর্ণফুলী রক্ষায় সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রস্তুতি নিয়ে বড় পরিসরে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ শুরু হবে।'

এদিকে ২০১৯ সালের ১৭ এপ্রিল কর্ণফুলীসহ ঢাকার চারপাশের নদীগুলো দখল, দূষণমুক্ত করা ও নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে পরিকল্পনার খসড়া চূড়ান্ত করে সরকার।

নগরের বর্জ্য ও কলকারখানার দূষিত পানি যাতে নদীতে মিশতে না পারে, সে বিষয়েও নির্দেশনা রয়েছে খসড়া পরিকল্পনায়। অবৈধ দখলে থাকা ভূমি কীভাবে উদ্ধার করা হবে, উদ্ধারকৃত ভূমি কীভাবে সংরক্ষণ করা হবে, একে কাজে লাগিয়ে কীভাবে পর্যটন সুবিধা বাড়ানো যাবে, নগরের বর্জ্য কোথায়-কীভাবে বিকল্প স্থানে সংরক্ষণ করা হবে এসব বিষয়েরও দিকনির্দেশনা আছে এ পরিকল্পনায়। 
 
 

Related Topics

টপ নিউজ

কর্ণফুলী নদী / নদী

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • নতুন ‘সাইকস-পিকো বন্দোবস্তের’ বিরুদ্ধে এরদোয়ানের হুঁশিয়ারি
  • ঢাকা মেডিকেল কলেজের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা, হল ছাড়ার নির্দেশ
  • ইরানের মোসাদ-আতঙ্ক বাড়ছে, সন্দেহ এখন ‘মাস্ক, টুপি ও সানগ্লাসে’
  • সম্ভাব্য উত্তরসূরি হিসেবে তিনজনের নাম জানিয়েছেন খামেনি: নিউইয়র্ক টাইমস
  • ভারত জানিয়ে দিল, পাকিস্তানের সঙ্গে সিন্ধু পানিচুক্তিতে আর কখনোই ফিরবে না
  • ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ করে ‘চিরকাল’ ক্ষমতায় থাকতে চান নেতানিয়াহু: বিল ক্লিনটন

Related News

  • কর্ণফুলী নদীতে লাইটার জাহাজে দুর্ঘটনায় ২ শ্রমিক নিহত
  • লক্ষ্মীপুরে মেঘনার তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ বন্ধ রেখেছে ৫ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান, ভাঙন আতঙ্কে স্থানীয়রা
  • বগুড়ার ঘড়িয়া ও চন্দ্রাবতী নদী কি সত্যিই ‘নিখোঁজ’?
  • ছবি | কর্ণফুলী রক্ষায় সচেতনতা তৈরিতে চট্টগ্রামে সাম্পান বাইচ
  • চট্টগ্রামে প্লাস্টিক বর্জ্যের ৭৩ শতাংশ রিসাইক্লিং হচ্ছে: কর্মশালায় বক্তারা 

Most Read

1
বাংলাদেশ

নতুন ‘সাইকস-পিকো বন্দোবস্তের’ বিরুদ্ধে এরদোয়ানের হুঁশিয়ারি

2
বাংলাদেশ

ঢাকা মেডিকেল কলেজের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা, হল ছাড়ার নির্দেশ

3
আন্তর্জাতিক

ইরানের মোসাদ-আতঙ্ক বাড়ছে, সন্দেহ এখন ‘মাস্ক, টুপি ও সানগ্লাসে’

4
আন্তর্জাতিক

সম্ভাব্য উত্তরসূরি হিসেবে তিনজনের নাম জানিয়েছেন খামেনি: নিউইয়র্ক টাইমস

5
আন্তর্জাতিক

ভারত জানিয়ে দিল, পাকিস্তানের সঙ্গে সিন্ধু পানিচুক্তিতে আর কখনোই ফিরবে না

6
আন্তর্জাতিক

ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ করে ‘চিরকাল’ ক্ষমতায় থাকতে চান নেতানিয়াহু: বিল ক্লিনটন

The Business Standard
Top

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net

Copyright © 2022 THE BUSINESS STANDARD All rights reserved. Technical Partner: RSI Lab