চট্টগ্রামে প্লাস্টিক বর্জ্যের ৭৩ শতাংশ রিসাইক্লিং হচ্ছে: কর্মশালায় বক্তারা

চট্টগ্রাম নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডে পাঁচ মিলিয়নের বেশি বাসিন্দা বছরে ২ লাখ ৫৭ হাজার ৯১৩ মেট্রিক টন প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদন করে। এর মধ্যে ৭৩ শতাংশ অর্থাৎ ১ লাখ ৮৭ হাজার ৭৯ মেট্রিক টন প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ ও পুনর্ব্যবহার (রিসাইক্লিং) করে বিভিন্ন পণ্য তৈরি করা হচ্ছে। আর এ প্রক্রিয়ায় যুক্ত আছেন প্রায় ২০ হাজার ৫০২ জন শ্রমিক ও উদ্যোক্তা।
আজ মঙ্গলবার (৬ মে) চট্টগ্রাম নগরীর একটি হোটেলে আয়োজিত এক কর্মশালায় এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্রবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট 'মাল্টি-স্টেকহোল্ডার কনসাল্টেশন ওয়ার্কশপ অন প্লাস্টিক ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট ইন চট্টগ্রাম সিটি' শীর্ষক এ কর্মশালার আয়োজন করে। এতে গবেষক, প্লাস্টিক বর্জ্য রিসাইক্লিং খাতের উদ্যোক্তা, শ্রমিক, সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা, সাংবাদিকসহ নগরীর বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।
এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্রবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট, অর্থনীতি বিভাগ এবং মার্কেটিং বিভাগের একটি গবেষণা দল দক্ষিণ এশিয়ায় প্লাস্টিকমুক্ত নদী ও সমুদ্র বিষয়ক প্রকল্পের আওতায় নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডে গত ১০ মাসের বেশি সময় ধরে একটি গবেষণা চালায়।
এ প্রকল্পের আওতায় প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ, প্রক্রিয়াকরণ এবং রূপান্তরের সাথে যুক্ত স্থানীয় অংশীদারদের প্রশিক্ষণ, প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও প্লাস্টিকের বিকল্প পরিবেশবান্ধব পণ্যের উৎপাদন ও ব্যবহারকে উৎসাহিত করতে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।
বিশ্বব্যাংকের পৃষ্ঠপোষকতায় এবং জাতিসংঘ প্রকল্প সেবাসমূহের কার্যালয় (ইউএনওপিএস) ও দক্ষিণ এশিয়া পরিবেশ সহযোগিতা সংগঠনের (সাকেপ) তত্ত্ববাবধানে এ প্রকল্প পরিচালিত হয়।
কর্মশালায় বক্তারা বলেন, চট্টগ্রাম শহরের প্লাস্টিক বর্জ্যের উৎস, ধরন, পরিমাণের তথ্য সংগ্রহের পাশাপাশি এ প্রকল্পের আওতায় সঠিক ব্যবস্থাপনায় প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ, প্রক্রিয়াকরণ ও পুনঃব্যবহারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের প্রশিক্ষণ, বিকল্প পণ্য তৈরিসহ প্লাস্টিকের চক্রাকার অর্থনীতি ব্যবস্থাপনায় উদ্বুদ্ধ করতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যা দীর্ঘমেয়াদে নদী ও সমুদ্রে প্লাস্টিক দূষণ রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
কর্মশালায় গবেষণার তথ্য তুলে ধরে বলা হয়, যথাযথ ব্যবস্থাপনার অভাবে চট্টগ্রাম নগরীতে বছরে ৭০ হাজার ৮৩৩ মেট্রিক টন (মোট উৎপাদনের প্রায় ২৭ শতাংশ) প্লাস্টিক বর্জ্য নালা, নর্দমা, খাল এবং জলাশয়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টির পাশাপাশি কর্ণফুলী নদীতে মারাত্মক দূষণের জন্য দায়ী।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ কর্ণফুলী নদীতে পলিথিন ও প্লাস্টিক বর্জ্যের ২ থেকে ৭ মিটার স্তর শনাক্ত করেছে। এটি ড্রেজিংয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ অবস্থায় নগরীতে প্লাস্টিক দূষণ রোধে কার্যকর ব্যবস্থা জরুরি।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরিন সায়েন্সেস অ্যান্ড ফিশারিজ অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে কর্মশালায় বক্তব্য দেন প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক এস এম নছরুল কদির, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্রবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ড. মোহাম্মদ নুরুল আজিম শিকদার, বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ড. মোহাম্মদ আল আমীন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা কমান্ডার ইফতেখার উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী।
স্বাগত বক্তব্য দেন সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন ড. মো. আলাউদ্দিন মজুমদার। কর্মশালার কারিগরি অংশে সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. আশরাফুল আজম খান।
গবেষণা দলের সদস্য অধ্যাপক ড. শাহনেওয়াজ চৌধুরী দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, জেলেদের মাছ ধরার কাজে ব্যবহৃত প্লাস্টিক জাল পড়ে থাকে সমুদ্রের তলদেশে। এটি ধীরে ধীরে ভেঙে তৈরি হয় মাইক্রোপ্লাস্টিক। প্লাস্টিক কণা মাছের মাধ্যেমে পৌঁছে যাচ্ছে আমাদের খাবারের টেবিলে। এসব মাইক্রোপ্লাস্টিক মানব শরীরে ক্যান্সার, হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, বন্ধ্যাত্ব ও অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হতে পারে।
তিনি জানান, বাংলাদেশের উপকূলীয় এবং সামুদ্রিক এলাকায় প্রায় ১৯ হাজার নৌকা ও ট্রলার বছরে ৪০ হাজার ১১০ মেট্রিক টন প্লাস্টিকের জাল ও অন্যান্য সরঞ্জাম ব্যবহার করে থাকে। এর মধ্যে ২ হাজার ৭৪০ মেট্রিক টন (প্রায় ৭ শতাংশ) সমুদ্রে ফেলে দেওয়া হয় বা পরিত্যক্ত হয়। মাছ ধরার পরিত্যক্ত জাল 'গোস্ট ফিশিং'-এর কারণে প্রতিনিয়ত বহু সামুদ্রিক প্রাণী মারা যাচ্ছে। তাছাড়া পদ্মা, ব্রহ্মপুত্র, মেঘনা ইত্যাদি নদী থেকে প্রতিদিন ১-৩ বিলিয়ন মাইক্রোপ্লাস্টিক বঙ্গোপসাগরে এসে পড়ছে। এতে সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
জেলেদের এসব প্লাস্টিক জালের দূষণ সম্পর্কে সচেতন করা হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।