ভারত জানিয়ে দিল, পাকিস্তানের সঙ্গে সিন্ধু পানিচুক্তিতে আর কখনোই ফিরবে না
ভারত আর কখনোই পাকিস্তানের সঙ্গে ১৯৬০ সালের সিন্ধু পানি চুক্তি পুনরায় কার্যকর করবে না বলে জানিয়েছেন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। ভারতের ইংরেজি দৈনিক টাইমস অব ইন্ডিয়া-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে শনিবার তিনি বলেন, "যে পানি পাকিস্তানে প্রবাহিত হচ্ছিল, তা এখন ভারতের অভ্যন্তরীণ ব্যবহারের জন্য রাজস্থানে সরিয়ে নেওয়া হবে।"
উল্লেখ্য, সিন্ধু পানিচুক্তি ছিল ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে স্বাক্ষরিত একটি ঐতিহাসিক চুক্তি, যা তিনটি গুরুত্বপূর্ণ নদী—সিন্ধু, ঝেলাম ও চেনাব—এর পানি বণ্টন ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে গঠিত। এই নদীগুলো ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীর থেকে উৎপন্ন হয়ে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে প্রবাহিত হয়।
গত মাসে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগেম সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ বেসামরিক নাগরিক নিহত হওয়ার পর ভারত একে 'সন্ত্রাসবাদী তৎপরতা' বলে আখ্যায়িত করে, এবং চুক্তিতে নিজেদের অংশগ্রহণ "স্থগিত" করে। পাকিস্তান হামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করলেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। এমনকি দুই দেশের মধ্যে চারদিনের এক সংক্ষিপ্ত লড়াইও হয়। পরে যুদ্ধবিরতি হলেও পানিচুক্তিটি আর চালু হয়নি।
অমিত শাহ বলেন, "না, এই চুক্তি আর কখনোই চালু হবে না। পাকিস্তান অন্যায্যভাবে যে পানি পাচ্ছিল, তা বন্ধ করে আমরা রাজস্থানে খাল নির্মাণ করে নিজেদের কাজে ব্যবহার করব।"
ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারের সবচেয়ে প্রভাবশালী মন্ত্রীদের একজন অমিত শাহের এই বক্তব্য চুক্তি নিয়ে ভবিষ্যতে আলোচনার সম্ভাবনা আরও ক্ষীণ করেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি ভারতের কৌশলগত চাপ সৃষ্টি ও পাকিস্তানকে রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা করার অংশ হতে পারে।
পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া ও সম্ভাব্য আন্তর্জাতিক আইনি পদক্ষেপ
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে অতীতের বিবৃতিতে ইসলামাবাদ জানিয়েছিল, "সিন্ধু চুক্তিতে কোনো একক পক্ষের পক্ষে তা বাতিলের বা স্থগিত করার সুযোগ নেই। নদীর পানিপ্রবাহ বন্ধ করাকে যুদ্ধ ঘোষণা হিসেবে বিবেচনা করবে পাকিস্তান।"
পাকিস্তান বর্তমানে ভারতের এই সিদ্ধান্তকে আন্তর্জাতিক আইনে চ্যালেঞ্জ জানাতে প্রস্তুতি নিচ্ছে। আন্তর্জাতিক জল আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেহেতু এই চুক্তি বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় স্বাক্ষরিত হয়েছিল, তাই তা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নজরে আসবে এবং আন্তর্জাতিক আদালতে পর্যন্ত গড়াতে পারে।
প্রেক্ষাপট: ভারতের পানি প্রত্যাহার পরিকল্পনা
রয়টার্স গত মাসেই একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে জানিয়েছিল, ভারত এসব নদী থেকে ব্যাপকহারে পানি প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করছে, যা পাকিস্তানের কৃষিখাতে মারাত্মক প্রভাব ফেলবে। এই পদক্ষেপকে অনেকে রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টির উপায় হিসেবেও দেখছেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারত ও পাকিস্তান—দুটি পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্রের মধ্যে এমন সংকট আরও গভীর আকার নিতে পারে যদি আন্তর্জাতিক মহল দ্রুত হস্তক্ষেপ না করে।
