লঞ্চে আগুন: স্বজনদের আহাজারিতে ভারি সুগন্ধা পাড়

প্রতি বৃহস্পতিবারই দক্ষিণবঙ্গগামী লঞ্চে প্রচুর ভিড় হয়। কর্মব্যস্ত সপ্তাহ শেষে স্বজনদের কাছে ফিরে যেতে চান সকলেই।
গতকালও তাই হয়েছিল। নাড়ির টানে পাঁচ শতাধিক যাত্রী উঠেছিল 'এমভি অভিযান-১০' নামের এই লঞ্চে। কিন্তু ভোর হওয়ার আগে সব আনন্দ ভয়ে ও আতঙ্কে পরিণত হল।
এখন পর্যন্ত ৩৮ জন মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আহত প্রায় ২ শতাধিক। এছাড়া বহু লোক এখনও নিখোঁজ রয়েছেন। যারা নদীতে লাফিয়ে পড়ে বেঁচে তীরে উঠতে পেরেছেন, তারাও এখন পর্যন্ত এর ধকল কাটাতে পারেন নি।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত শতাধিক দগ্ধ নারী-পুরুষ বরিশাল, ঝালকাঠিসহ আশপাশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
ঘটনাস্থল নদীতীরে স্বজনরা ভিড় করছেন। বেলা বাড়ার সাথে সাথে ভিড়ও বাড়ছে। নদীর তীরে স্বজনদের আহাজারি। এদের মধ্যে বেশিরভাগই জানেন না তাদের প্রিয়জনের ভাগ্যে কী ঘটেছে।
লঞ্চের আগুন নেভানো হয়েছে। তবু পু্রো লঞ্চের দিকে তাকালেই আগুনের ভয়াবহতা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। মৃতদের অনেকে ঘুমন্ত অবস্থায় কিছু বুঝে ওঠার আগেই পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন।
ফায়ার সার্ভিসের ধারণা, আগুনের সূত্রপাত ক্যান্টিনের গ্যাস সিলিন্ডার থেকে।
এছাড়া লঞ্চে বিভিন্ন দাহ্য বস্তু ও মাঝ নদীতে তীব্র বাতাস থাকায় আগুনের ভয়াবহতা বেড়েছে কয়েকগুণ।
বাতাসের কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতেও দমকল বাহিনীকে বেগ পেতে হয়েছে বলে জানান ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মকর্তা।
লঞ্চের কেবিন বয় আরমান উল্লাহ বলেন, "ঝালকাঠি সদর উপজেলার গাবখান ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের গাবখান চ্যানেলের কাছাকাছি এসে হঠাৎ আগুন দেখতে পাই। তখন রাত প্রায় তিনটা। জীবন বাঁচাতে অনেকের মতো আমিও পানিতে লাফিয়ে পড়ে সাঁতরে তীরে পৌঁছাই। এরপর আর আমার কিছু মনে নেই। সকালে দেখি সবকিছু শেষ।
আরেক কেবিন বয় তুহিন বলেন, "লঞ্চটির এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে আগুন পৌঁছেনি। কেবিনে থাকা ঘুমন্ত অনেক যাত্রী সেখানেই পুড়ে মারা গেছেন। মৃতদেহ চেনার উপায় নেই।"
ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা বলেন, "পুড়ে যাওয়া লাশগুলোর অবস্থা খুব খারাপ। অধিকাংশেরই ডিএনএ টেস্ট ছাড়া পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব নয়।"
বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলা থেকে ভাইয়ের খোঁজে এসেছেন মামুন। ঢাকা থেকে বাড়ি ফিরছিলেন মামুনের ভাই।
বিআইডব্লিউয়ের তথ্য অনুযায়ী, এই লঞ্চের বেশিরভাগ যাত্রীই ছিল বরগুনা, পিরোজপুর, ঝালকাঠি ও বরিশালের।
এদিকে বরিশাল ডিআইজি অফিসের পুলিশ সুপার নূরুল আমিন হাওলাদার জানান, আগুনে যে মৃত দেহগুলো ঝলসে যায়নি, শুক্রবার দুপুরে তা ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে পোস্টমর্টেমের জন্য।