৪০০ বছরের পুরনো এই চীনা কাশির সিরাপ যেভাবে এখন বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়; প্রশংসায় পশ্চিমা তারকারা

সম্প্রতি পশ্চিমা দেশগুলোতেও এক ধরনের চীনা সিরাপের জনপ্রিয়তা দেখা দিয়েছে। সিরাপটির কার্যকারিতা নিয়ে টিকটকে শত শত ভিডিওর পাশাপাশি বেশ কয়েকজন পশ্চিমা তারকার মুখেও শোনা যাচ্ছে এর গুণকীর্তন।
এক ভিডিও সাক্ষাৎকারে জনপ্রিয় চলচ্চিত্র 'উইকেড'-এর অভিনেতারা 'নিন জিওম পেই পা কোয়া' নামক এই চীনা ভেষজ সিরাপটি নিয়ে কথা বলেন। 'এলফাবা' চরিত্রে অভিনয় করা এরিভো বলেন, 'এটি মূলত কাশির সিরাপ, তবে গায়কদের জন্য বেশ স্বস্তির। দারুণ কাজ করে এবং স্বাদও অসাধারণ।'
কণ্ঠনালীর খসখসে ভাব কমাতে সিরাপের কার্যকারিতা তুলে ধরে ব্রিটিশ পপ তারকা এবং ওয়ান ডিরেকশনের সাবেক গায়ক জেইন মালিকও জানান, তিনি এই চীনা কাশির সিরাপের ভক্ত এবং সবসময় এটি নিজের সঙ্গে রাখেন।
'নিন জিওম পেই পা কোয়া' সিরাপের রেসিপি ১৬০০ সালের পর থেকে আর বদলায়নি। তবে কাদামাটির মতো ঘন ও গাঢ় রঙের এই মিষ্টি চীনা কাশির ওষুধ নতুন করে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
তরুণদের মধ্যে এ সিরাপের প্রতি আগ্রহ আরও স্পষ্টভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রিয় তারকাদের পরামর্শ ছাড়াও টিকটকে সিরাপের কার্যকারিতা ও সঠিকভাবে খাওয়ার পদ্ধতি বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা টিউটোরিয়াল ভিডিওগুলো নতুন করে সিরাপটিকে বিশ্বব্যাপী আগ্রহের কেন্দ্রে নিয়ে এসেছে। গত বছর বিশ্বজুড়ে গুগলে সিরাপটির খোঁজ বেড়েছে এক-চতুর্থাংশ।
২০১৯ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে এর বিক্রি প্রায় এক-তৃতীয়াংশ বেড়ে গত বছর দাঁড়ায় ৮৮ মিলিয়ন ডলারে। শুধু চীনে নয়, পশ্চিমা দেশগুলোতেও এর চাহিদা বাড়ছে দ্রুত।
'পেই পা কোয়া' সিরাপটি এখন বিশ্বের ২০টিরও বেশি দেশে পাওয়া যায়। লকোয়াট পাতাসহ পোমেলো খোসার মতো উপাদান দিয়ে তৈরি এ ওষুধের বোতল হংকংয়ের ফার্মেসিগুলোতে প্রায় ৫ ডলারে বিক্রি হয়, যেখানে মূলত এটি উৎপাদিত হয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম অ্যামাজনে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে বিক্রি হলে এর দাম প্রায় তিনগুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়।
প্রচলিত চীনা ওষুধপত্রের প্রতি পশ্চিমা দেশগুলোতে আগ্রহ ক্রমেই বাড়ছে। আংশিকভাবে এর পেছনে ভূমিকা রাখছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা 'বায়োহ্যাকিং' প্রবণতা, যেখানে নানা পরীক্ষামূলক পদ্ধতির মাধ্যমে সুস্থতা বাড়ানোর চেষ্টা করা হয়, যদিও পদ্ধতিগুলো সবসময় বিশ্বস্ত নয়।
এই ভেষজ কাশির সিরাপকে ঘিরে এত আগ্রহও এর একটি উদাহরণ, যদিও 'পেই পা কোয়া' শিগগিরই যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের অনুমোদন পাবে বলে মনে করা হয় না।
এ ছাড়া গুয়া শা-এর মতো প্রাচীন চীনা চিকিৎসা কৌশল, যেখানে রঙিন পাথর দিয়ে মুখে ঘষা দেওয়া হয়, তরুণ পশ্চিমাদের মধ্যে সমানভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এসব নিয়ে তৈরি ভিডিও টিউটোরিয়ালও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিপুল দর্শক আকর্ষণ করছে।
তবে পেই পা কোয়ার শত্রু শুধু জেদি কাশি নয়। ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্র হংকংয়ের বিশেষ শুল্ক সুবিধা বাতিল করে, ফলে ওই অঞ্চল থেকে আমদানি হওয়া পণ্য এখন মূল ভূখণ্ড চীনের মতো শুল্কের আওতায় পড়ছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের আরোপিত চীনা পণ্যের শুল্ক—যার মধ্যে ৩০ শতাংশ কর গত ১২ আগস্ট আরও ৯০ দিনের জন্য বাড়ানো হয়েছে—যুক্তরাষ্ট্রে পেই পা কোয়ার ভক্তদের জন্য দাম বাড়িয়ে দেবে।
এসব শুল্কে ভেষজ ওষুধ বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, কারণ সিরাপের অধিকাংশ উপাদান চীন থেকেই আসে, অন্য কোথাও থেকে সংগ্রহ করা সম্ভব নয়। তাই এভাবে বাণিজ্যযুদ্ধ চলতে থাকলে ভোক্তাদেরও তেমন স্বস্তি মিলবে না।