আজ আত্মপ্রকাশ করছে ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি; নেতৃত্বে থাকছেন নাহিদ-আখতার

আজ শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রনেতাদের উদ্যোগে গঠিত নতুন রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টির (এনসিপি) আত্মপ্রকাশ হবে রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউতে। দলটির নেতৃবৃন্দের লক্ষ্য, 'অধিকার ও মর্যাদাভিত্তিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগঠনের' লক্ষ্যে কাজ করা।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দলের ও নেতাদের নাম ঘোষণা করা হলেও দলের প্রতীক ও গঠনতন্ত্র ঘোষণা করা হবে না। তবে দলের ঘোষণাপত্র পাঠ করা হবে।
জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, অধিকার ও মর্যাদাভিত্তিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগঠনে তরুণদের নেতৃত্বে নতুন রাজনৈতিক দলটির আত্মপ্রকাশ হবে।
'আমরা প্রায় ৩ লাখ মানুষ সমাবেশের টার্গেট নিয়েছি। আমরা দেশের অন্যান্য রাজনৈতিক দল, শক্তি, বিশিষ্ট নাগরিকদেরও আমন্ত্রণ জানিয়েছি,' বলেন তিনি।
এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রধান সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসুদ গতকাল ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানাতে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে গিয়েছিলেন। তিনি বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর কার্যালয়ে গিয়ে তাদেরও আমন্ত্রণ জানান তিনি।
নতুন দলের ভূমিকা
রাজনৈতিক দলটির আহ্বায়ক পদে নাহিদ ইসলাম ও সদস্যসচিব পদে আখতার হোসেনের নাম চূড়ান্ত হয়েছে। নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারীকে প্রধান সমন্বয়কারী, হাসনাত আবদুল্লাহকে দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক ও সারজিস আলমকে উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক পদে চূড়ান্ত করা হয়েছে।
এছাড়াও উপ-সমন্বয়ক হিসেবে আব্দুল হান্নান মাসুদ, দপ্তর সম্পাদক হিসেবে সালেহ উদ্দীন সিফাত ও সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে রয়েছেন সামান্তা শারমীন। সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব হিসেবে আলোচনায় আছেন তাসনিম জারা, মনিরা শারমিন ও নাহিদা সারোয়ার।
বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত রাজধানীর বাংলামোটরে জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যৌথ বৈঠক হয়। সেখানে এসব সিদ্ধান্ত হয় বলে জানান বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংগঠন দুটির শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন নেতা।
নতুন ছাত্রসংগঠন গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদকে আমন্ত্রণ জানানো হবে কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদেরও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
সামান্তা শারমীন টিবিএসকে বলেন, তারা আজ ১৫১ জনের কমিটি ঘোষণা করবেন।
'বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি কমিটির মানুষজনও আসবে। দলের প্রতীক, গঠনতন্ত্র পরে প্রকাশ হবে। দলের ঘোষণাপত্র এখনও চূড়ান্ত না হলেও আত্মপ্রকাশের সময় সেটি পাঠ করা হবে,' বলেন তিনি।
নাহিদ ইসলাম ও আখতার হোসেন দুজনেই বর্তমানে বিলুপ্ত দল গণতান্ত্রিক ছাত্র শক্তির নেতা ছিলেন। নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী ২০২০ সালে সীমান্ত হত্যার প্রতিবাদে রাজু ভাস্কর্যের সামনে অনশন কর্মসূচি পালন করে আলোচনায় এসেছিলেন। সরজিস ও হাসনাত দুজনেই জুলাইয়ের অভ্যুত্থানের অন্যতম নেতা ছিলেন।
নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ভবিষ্যৎ
গতকাল জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমীন এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে sজানিsয়েছেন, দল গঠনের পর নাগরিক কমিটি সিভিল-পলিটিক্যাল প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ত্থেকে যাবে। আর কোনো দল গঠনের উদ্যোগ নেবে না।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, 'সিদ্ধান্ত হয়েছে আহ্বায়ক, সদস্য সচিব, মুখপাত্র, মুখ্য সংগঠক ব্যতীত জাতীয় নাগরিক কমিটির অবশিষ্ট অর্গানোগ্রাম, নির্বাহী কমিটি, সেলসমূহ ও সার্চ কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হবে।'
সামান্তা শারমীন আরও জানান, রাজনৈতিক দলে অন্তর্ভুক্তির সাথে সাথে সংশ্লিষ্ট সদস্যের জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্যপদ বাতিল হিসেবে গণ্য হবে। দলে যোগ দিচ্ছেন না, এমন সদস্যদের সদস্যপদ বহাল থাকবে।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, আহ্বায়ক, সদস্য সচিব, মুখপাত্র, মুখ্য সংগঠক ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে পরবর্তী ১৫ দিন অনানুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব পালন করবেন। তাদের উদ্যোগে জাতীয় নাগরিক কমিটির তিনজনের আনুষ্ঠানিক ফোরাম পরবর্তী অর্গানোগ্রাম নির্ধারণ করবেন।
এতে আরও বলা হয়, উপজেলা, থানা, ওয়ার্ডে নাগরিক কমিটির যে প্রতিনিধি কমিটিগুলো গঠিত হয়েছিল এবং পেশাজীবীদের নিয়ে যে উপকমিটি বা প্রতিনিধি কমিটি হয়েছিল, সেসব কমিটির যেসব সদস্য আসন্ন রাজনৈতিক দলে যুক্ত হতে ইচ্ছুক, তারা নাগরিক কমিটি থেকে রাজনৈতিক দলে কোন প্রক্রিয়ায় যুক্ত হবেন, সেটি তারা দ্রুত সময়ের মধ্যেই জানিয়ে দেবেন।
অন্যদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা টিবিএসকে বলেন, নতুন ছাত্রসংগঠন ও রাজনৈতিক দলে যারা যাবেন, তারা তাদের বর্তমান অবস্থান থেকে পদত্যাগ করেই যাবেন।
'একইসাথে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনও থাকবে। আমরা আজকালের মধ্যেই একটি মিটিং করে সিদ্ধান্ত নেব নতুন কারা এই প্ল্যাটফর্মের দায়িত্বে আসবেন এবং যারা চলে যাবেন, তারা কখন কীভাবে পদত্যাগ করবেন।'
কয়েকজন সমন্বয়ক বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পরবর্তী দায়িত্বে আসতে পারেন গণঅভ্যুত্থান বিষয়ক সেল সম্পাদক হাসান এনাম। এছাড়াও ঢাকা কলেজের ছাত্র মইনুল ইসলাম ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মালিহা নামলাহ-এর নাম আলোচনায় রয়েছে।