ফরিদপুরের সূর্যমুখীর মাঠ যেন বিস্তীর্ণ হলুদ রাজ্য!

ফরিদপুর শহরতলীর বদরপুর এলাকার বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) বীজ প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণ কেন্দ্রে সূর্যমুখী ফুলের আবাদ করা হয়েছে। প্রথম দেখাতে যে কেউ ভেবে বসতে পারেন, এ যেন এক হলুদ ফুলের রাজ্য!
তিন একর জায়গাজুড়ে এখানে বপন করা হয়েছে বারি সূর্যমুখী-২ জাতের ফুলের বীজ। জানুয়ারি মাস থেকে প্রতিটি গাছে ফুল ফুটতে শুরু করেছে।
বাগানের কাছাকাছি যাওয়ার পরই কেবল এমন সৌন্দর্যের দেখা মেলে। আর এই প্রাকৃতিক স্নিগ্ধতা টানছে প্রকৃতি প্রেমীকদের। শীতের শেষদিকে হিমবাতাসে দোল খেয়ে নিজের সৌন্দর্য বিলাচ্ছে সূর্যমুখীরা, আর তাতে বিমোহিত হচ্ছেন বাগান দেখতে আসা দর্শনার্থীরা।
এমন অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে প্রতিদিন ভিড় করছেন দূর-দূরান্ত থেকে আসা হাজারো প্রকৃতি প্রেমী। কেউ বন্ধুদের সঙ্গে আসছেন, কেউ বা আসছেন পরিবার-পরিজন নিয়ে। ভালো লাগার স্মৃতি ধরে রাখতে নানান ভঙ্গিতে নিজেদের করছেন ক্যামেরাবন্দি তারা।

স্বল্প খরচে অধিক লাভ হওয়ায় দিন দিন সূর্যমুখী ফুলের আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফরিদপুর বিএডিসির উৎপাদিত বীজ স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। বৈচিত্র্যময় কৃষির জেলা ফরিদপুরে সূর্যমুখী চাষের ব্যাপকতা বাড়ছে। জেলার ৯টি উপজেলায় কয়েক শতাধিক কৃষক চলতি মৌসুমে সূর্যমুখীর চাষ করেছেন। মাঠজুড়ে হলুদ ফুলের সমারোহ। ফুলের সৌন্দর্য দেখতে আসছে দর্শনার্থীরা; আর কৃষকরাও ভালো ফলন আশা করছেন।
বাগান ঘুরতে এসে গিয়াস উদ্দিন বললেন, "এমন সুন্দর অপরূপ দৃশ্য দেখা মেলা ভার। ফুলের এমন মোহিত দৃশ্য দেখে আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি।"

আকাশ নামে আরেক দর্শনার্থী জানান, আমি লোক মুখে শুনে এখানে এসে অবাক হয়ে গেছি, ফুলের রঙ অপরূপ। এমন দৃশ্য আমি এর আগে কখনো দেখিনি।"
বিএডিসি সূত্রে জানা গেছে, এ বছর ফরিদপুরের বিভিন্ন উপজেলায় মোট ২৬ দশমিক ৮৫ একর জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষাবাদ করা হয়েছে। ১ একর জমিতে ৭০০ থেকে ৮০০ কেজি বীজ হয়। ১ একর জমি চাষ করতে খরচ হয় ৪৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা।
বিএডিসির বীজ প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণ কেন্দ্রের উপসহকারী পরিচালক মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, "চলতি বছর উৎপাদিত বীজ থেকে তেল উৎপাদন করে বিক্রি করা হবে না। এবার এই বীজ কৃষকদের মধ্যে প্রণোদনা হিসেবে বিতরণ করা হবে।"

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. শাহাদুজ্জামান বলেন, "এ বছর জেলার বিভিন্ন উপজেলায় মোট ২৬ দশমিক ৮৫ একর জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষাবাদ করা হয়েছে।"
সূর্যমুখী বীজের তেল অনেক উৎকৃষ্ট বলে তিনি জানান। জেলায় গত বছর সূর্যমুখী আবাদ করা হয়েছিল ১৬ দশমিক ৪৪ একর জমিতে। দিনে দিনে ফরিদপুরে সূর্যমুখীর চাষাবাদ বাড়ছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।