Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

বাংলাদেশি ওয়াচ মেকার: দেশের প্রথম হাতঘড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান

রাফিউল ইসলাম ও সাইফুল ইসলাম—দুই ভাইয়ের হাত ধরেই যাত্রা শুরু এই প্রতিষ্ঠানের। দীর্ঘদিন কর্মসূত্রে তারা ছিলেন প্রবাসে, কিন্তু দেশের টান আর সংস্কৃতির টান থেকে দূরে থাকতে পারেননি কেউই। তাই প্রতিষ্ঠানের নামেও জুড়ে দিয়েছেন মাতৃভূমির প্রতি ভালোবাসা—‘বাংলাদেশি ওয়াচ মেকার’।
বাংলাদেশি ওয়াচ মেকার: দেশের প্রথম হাতঘড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান

ফিচার

সুস্মিতা চক্রবর্তী মিশু
03 October, 2025, 03:30 pm
Last modified: 03 October, 2025, 03:29 pm

Related News

  • যেভাবে সরকারি চাকরি প্রস্তুতির ধরনই বদলে দিয়েছে ‘লাইভ এমসিকিউ’
  • লঞ্চ আর বাসের খুদে জগৎ: রিমোট-কন্ট্রোলে চলে পারাবাত-সুন্দরবন, রাস্তায় নামে এনা-গ্রিনলাইন
  • ছাপ্পান্নটি গবেষণা কেন্দ্র! নিজের ‘কীর্তি’ নিয়ে দিশেহারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
  • উশুতে মেডেল পেলে চাকরি মিলবে, তাই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন সান্ত্বনারা
  • নুসরাত, সুমাইয়ারা ছিল কোচিং ক্লাস শুরুর অপেক্ষায়...

বাংলাদেশি ওয়াচ মেকার: দেশের প্রথম হাতঘড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান

রাফিউল ইসলাম ও সাইফুল ইসলাম—দুই ভাইয়ের হাত ধরেই যাত্রা শুরু এই প্রতিষ্ঠানের। দীর্ঘদিন কর্মসূত্রে তারা ছিলেন প্রবাসে, কিন্তু দেশের টান আর সংস্কৃতির টান থেকে দূরে থাকতে পারেননি কেউই। তাই প্রতিষ্ঠানের নামেও জুড়ে দিয়েছেন মাতৃভূমির প্রতি ভালোবাসা—‘বাংলাদেশি ওয়াচ মেকার’।
সুস্মিতা চক্রবর্তী মিশু
03 October, 2025, 03:30 pm
Last modified: 03 October, 2025, 03:29 pm
ইলাস্ট্রেশন: টিবিএস

রাজধানীর ধানমণ্ডি ২৭ নম্বরে বাংলাদেশ আই হসপিটালের সামনে দাঁড়ালে চোখে পড়ে এক ভিন্ন দৃশ্য। বিপরীত দিকের একটি ঝকঝকে ভবনের পাঁচতলা থেকে ঝুলছে জাতীয় বীরদের প্রতিকৃতি—বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান, বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীর, বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন ও কাজী নজরুল ইসলামের ছবি। স্বভাবতই কৌতূহল জাগে—কী ভবন এটি? কাছে গেলে দেখা যায় ভবনের নাম 'কনকর্ড এমিন্যান্স'।

এই ভবনেরই পাঁচতলায় গড়ে উঠেছে এক অনন্য স্বপ্নের কারখানা—বাংলাদেশের প্রথম হাতঘড়ি তৈরির প্রতিষ্ঠান 'বাংলাদেশি ওয়াচ মেকার'। এখানকার বিশেষত্ব হলো, ঘড়ির ডায়ালে ফুটে ওঠে বাংলা অক্ষর ও সংখ্যার মেলবন্ধন। ফলে একটি সাধারণ হাতঘড়ি হয়ে ওঠে দেশীয় সংস্কৃতির প্রতীক, গড়ে তোলে সময় আর পরিচয়ের সূত্র।

রাফিউল ইসলাম ও সাইফুল ইসলাম—দুই ভাইয়ের হাত ধরেই যাত্রা শুরু এই প্রতিষ্ঠানের। দীর্ঘদিন কর্মসূত্রে তারা ছিলেন প্রবাসে, কিন্তু দেশের টান আর সংস্কৃতির টান থেকে দূরে থাকতে পারেননি কেউই। তাই প্রতিষ্ঠানের নামেও জুড়ে দিয়েছেন মাতৃভূমির প্রতি ভালোবাসা—'বাংলাদেশি ওয়াচ মেকার'।

নিউইয়র্ক থেকে বাংলাদেশ

শৈশবেই ঘড়ির প্রতি ভালোবাসা জন্মেছিল দুই ভাইয়ের। বাবা প্রতিদিন হাতে ঘড়ি পরতেন, সেই দৃশ্য থেকেই জন্ম নেয় অনুরাগ। সময়ের সঙ্গে তারা সংগ্রহ করেছেন নানা ঘড়ি, তবু মনে প্রশ্ন ছিল—বাংলাদেশে কেন কেউ হাতঘড়ি তৈরি করে না? বিদেশি ব্র্যান্ডে ভরপুর বাজারে দেশীয় উদ্যোগের অভাব তাদের ভাবিয়েছে বারবার। সেই না-পাওয়া উত্তরই একসময় হয়ে দাঁড়ায় অনুপ্রেরণা।

২০২০ সালের করোনা মহামারির সময় রাফিউল চৌধুরী শুরু করেন ঘড়ি তৈরির প্রাথমিক চেষ্টা। অসংখ্য ঘড়ি খুলেছেন, নষ্টও করেছেন, আবার জোড়া দিয়েছেন। ছোটবেলার সেই অভ্যাসটাই যেন হয়ে ওঠে ঘড়ি শেখার স্কুল। তখন রাফিউলের অবস্থান ছিল নিউইয়র্কে। সেখানে তিনি ঘড়ি নিয়ে বিস্তর পড়াশোনা করেছেন, ঘুরে ঘুরে খুঁজেছেন অভিজ্ঞ ঘড়ি নির্মাতাদের, তাদরে কাছ থেকে শিখেছেন হাতে-কলমে। ইউটিউব ভিডিও ও বই থেকেও নিয়েছেন জ্ঞান।

ধীরে ধীরে আত্মবিশ্বাস বাড়ে। একসময় তার বানানো প্রোটোটাইপ নিরবচ্ছিন্নভাবে প্রায় এক বছর চলতে থাকলে দৃঢ় হয় বিশ্বাস—বাংলাদেশেও হাতঘড়ি নির্মাণ সম্ভব।

অবশেষে ২০২১ সালে জামালপুর থেকে নিবন্ধিত হয় তাদের স্বপ্নের প্রতিষ্ঠান 'বাংলাদেশি ওয়াচ মেকার'। সেই বছরই তারা কাজ শুরু করেন প্রথম মডেল 'নজরুল' নিয়ে। দুই ভাই জানতেন—শুধু স্বপ্ন নয়, দরকার আত্মবিশ্বাস আর অবিচল ধৈর্য।

পুঁজির চিন্তা তেমন ছিল না। রাফিউল ইসলাম দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে যুক্ত ছিলেন আইন পেশায়। সাইফুল ইসলামও পেশাগত জীবনে ডাক্তার। তাই ব্যবসা শুরুর অর্থসংক্রান্ত চাপ বিশেষ পোহাতে হয়নি।

'মানুষের মানসিকতাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ'

বাংলাদেশি ওয়াচ মেকার-এর যাত্রার শুরুতেই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায় মানুষের মানসিকতা। দেশের ঘড়ির বাজার বহুদিন ধরে বিদেশি ব্র্যান্ডের দখলে। দোকানে ঢুকলেই সবার আগে চোখে পড়ে সেসব ব্র্যান্ডের ঝলমলে কালেকশন। রাফিউল বলেন, "বাংলাদেশের জিনিস ভালো হবে না—এই ধারণা মানুষের মন থেকে দূর করা অন্য যেকোনো কাজের থেকে বেশি কঠিন।"

এই বাস্তবতার মধ্যেই তারা প্রথম মডেল 'নজরুল' বাজারে আনেন। কাজী নজরুল ইসলামের কাব্যগ্রন্থ ভাঙ্গার গান-এর শতবর্ষ উপলক্ষে ২০২৪ সালে বিশেষভাবে তৈরি হয় ১০০টি ঘড়ি। উদ্যোক্তারা নিজেরাই ঘড়ি, কাঠের বাক্স আর একটি আকর্ষণীয় ব্রশিউর নিয়ে বড় বড় ডিলারদের কাছে যান। কিন্তু বিদেশি ব্র্যান্ডের চকচকে বাজারে স্থানীয় এই প্রচেষ্টা গুরুত্ব পায়নি। তারা বুঝলেন—এই বাজারে জায়গা করতে হলে শুধু ব্যবসায়িক লড়াই নয়, মানুষের ভেতরের অবিশ্বাসকেও জিততে হবে।

হাল না ছেড়ে বরং তারা ঘড়িকে নিয়ে যান নিউইয়র্কের এক নামকরা অকশন হাউসে। শতবর্ষী শিল্পকর্ম যেখানে নিলামে বিক্রি হয়, সেখানে দেখতে চাইলেন বাংলাদেশের তৈরি ঘড়ি কতটা মূল্য পেতে পারে। বিস্ময়করভাবে কয়েক মিনিটের মধ্যেই ঘড়িটি বিক্রি হয়ে যায়। এই সাফল্য নতুন করে আত্মবিশ্বাস জাগায় যে, দেশীয় ব্র্যান্ডও বিশ্ববাজারে জায়গা করে নিতে পারে।

বাংলাদেশি ওয়াচ মেকার-এর উদ্যোক্তারা প্রায়ই এক ভুল ধারণার মুখোমুখি হন—সবকিছু স্থানীয়ভাবে তৈরি না হলে সেটি নাকি আসল ঘড়ি নয়। অথচ বাস্তবে বিশ্বের খুব কম ঘড়ি নির্মাতা শতভাগ পার্টস নিজেরাই তৈরি করে। রাফিউল বলেন, "বাংলাদেশের মানুষ কথায় কথায় রোলেক্স ঘড়ির উদাহরণ দেন। রোলেক্স ১৯০৫ সালে ইংল্যান্ডে শুরু হয়, পরে যুদ্ধের পর যায় সুইজারল্যান্ডে। নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত তারা তাদের বেশিরভাগ পার্টস চায়না ও জাপান থেকে তৈরি করিয়েছে।"

তার মতে, ঘড়ি নির্মাণ আসলে বৈশ্বিক সহযোগিতা। প্রতিটি ঘড়ির ভেতরে থাকে হাজারো ক্ষুদ্র যন্ত্রাংশ। যে কোম্পানি একটি অংশ নিখুঁতভাবে তৈরি করতে পারে, সেটি অন্য নির্মাতাদের কাছে বিক্রি করে, আর এইভাবেই এ শিল্প বেঁচে থাকে। বাংলাদেশি ওয়াচ মেকারও এর ব্যতিক্রম নয়। তারা দেশীয় কারিগরদের দিয়ে অনেক অংশ তৈরি করাচ্ছে, আবার কিছু আমদানি করছে বিদেশ থেকে।

রাফিউল ব্যাখ্যা করলেন, "আমাদের সব ঘড়িই অটোমেটিক। এগুলোতে ব্যাটারি থাকে না, হাতের মুভমেন্টের ওপর ভিত্তি করে চলে। ভেতরে থাকে মুভমেন্ট ও রোটর। হাত নড়াচড়া করলে রোটর ঘোরে, আর তখনই ঘড়ি চলে। নজরুল মডেল তৈরির সময় আমরা ভালো মানের মুভমেন্ট ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিই। এজন্য প্রতিটি মুভমেন্ট ৪০ হাজার টাকা করে জাপান থেকে কিনেছি।"

বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি নিজস্বভাবে অনেক অংশ তৈরি করার চেষ্টা করছে, বাইরে থেকে নির্ভরতা কমাতে চাইছে। এর প্রমাণ মেলে তাদের 'মতিউর' নামের ঘড়িতে।

ঢাকার রামপুরা ও জামালপুরে রয়েছে বাংলাদেশি ওয়াচ মেকার-এর কারখানা। সেখানে একসঙ্গে কাজ করেন প্রায় ৪০ জন কর্মী, ফ্রিল্যান্স ও নিয়মিত উভয়ভাবে যুক্ত আছেন তারা। প্রতিষ্ঠানটি সর্বোচ্চভাবে দেশীয় কারিগরদের দক্ষতা কাজে লাগাতে চায়, যাতে মান ও অনন্যতা দুটোই বজায় থাকে।

প্রতিষ্ঠাতা রাফিউল নিজেই ঘড়ি তৈরির মূল দায়িত্বে। তার নীতি স্পষ্ট—প্রতিটি ঘড়ি আসবে লিমিটেড এডিশন হিসেবে। নজরুল মডেল তৈরি হয়েছে মাত্র ১০০টি, অন্য মডেলগুলো ৫০টির বেশি হবে না। নির্ধারিত সংখ্যার বাইরে আর উৎপাদন করা হবে না বলেও ঘোষণা দিয়েছেন। নতুন কারিগরদেরও প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন তিনি।

প্রতিবন্ধী কারিগরের হাতে তৈরি কাঠের বক্স

বাংলাদেশি ওয়াচ মেকার-এর ঘড়ির সঙ্গে বিশেষভাবে যুক্ত আছে কাঠের বাক্স। প্রতিটি বাক্স তৈরি করেন শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী কারিগরেরা। এর ভেতরে আছে কাজী নজরুল ইসলামের জীবনের এক প্রতীকী স্মরণ। কবি মাত্র ৪৩ বছর বয়সে বাকশক্তি হারিয়েছিলেন। তাই তাকে স্মরণ করেই বক্স তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে প্রতিবন্ধী কারিগরদের হাতে। তবে এটি সহজে সম্ভব হয়নি। প্রায় এক বছর ধরে প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরই তাদের দিয়ে সূক্ষ্ম এ কাজটি শুরু করান রাফিউল ইসলাম।

ঘড়ি টিকে থাকবে প্রজন্মের পর প্রজন্ম

বাংলাদেশি ওয়াচ মেকার-এর কাছে ঘড়ি তৈরি শুধু যন্ত্রাংশের কাজ নয়, বরং স্মৃতিরও গল্প। প্রতিষ্ঠাতাদের বাবা ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। মৃত্যুর সময় তার হাতে ছিল একটি ঘড়ি—যা পরিবারের কাছে রয়ে যায় একমাত্র স্মৃতিচিহ্ন হয়ে। পরে ঘড়িটি বন্ধ হয়ে গেলে উদ্যোক্তারা সেটি নিয়ে যান নিউইয়র্কের একটি স্টোরে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা জানান, পুরোনো মডেল হওয়ায় আর মেরামত সম্ভব নয়। সেই অভিজ্ঞতাই রাফিউলকে নাড়িয়ে দেয় ভেতর থেকে। মনে হয়—নিজের হাতে ঘড়ি বানাতে পারলে বাবার স্মৃতিকে আরও জীবন্ত রাখা যেত। সেই বেদনাই জন্ম দেয় ঘড়ি নির্মাণের প্রতি এক অদম্য নিষ্ঠা।

শুরু থেকেই তাদের স্বপ্ন ছিল এমন ঘড়ি তৈরি করা, যা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে টিকে থাকবে। তাদের বিশ্বাস, ঘড়ি কেবল সময় জানানোর যন্ত্র নয়, এটি একধরনের উত্তরাধিকার। সেই উত্তরাধিকার ধরে রাখার মতো মান নিশ্চিত করাই তাদের সবচেয়ে বড় লক্ষ্য।

বাংলাদেশি ক্রেতাদের প্রতিক্রিয়ার কথাও ভাগ করে নেন রাফিউল। তিনি জানান, মানুষের কাছ থেকে অসাধারণ সাড়া পাচ্ছেন, অনেকেই অভিনন্দন জানাচ্ছেন যে এই উদ্যোগ অবশেষে বাংলাদেশে সম্ভব হয়েছে। দেশ-বিদেশের মানুষও ঘড়ি নিজেদের সংগ্রহে রাখছেন।

মাহিন আর রহমান নামে এক ক্রেতা বললেন, "এখানকার ঘড়ি খুবই সুন্দর। ভেতরের অংশ শক্ত ও মজবুত। কয়েন বেজেলটি চমৎকার, আমার ৭.২৫ ইঞ্চি কব্জির জন্য একদম পারফেক্ট।"

গ্রাহকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে রাফিউল বলেন, "যারা আমাদের কাছ থেকে একবার হলেও ঘড়ি কিনেছেন, নতুন ঘড়ি তৈরি হলে আমরা তাদের সেটি পাঠাই দেখার জন্য।"

কেন কিনবেন বাংলাদেশি ঘড়ি?

বাংলাদেশি ওয়াচ মেকার এখন পর্যন্ত বাজারে এনেছে চারটি মডেল—'নজরুল', ফ্রিডম সিরিজের দুটি ঘড়ি এবং 'মতিউর'। নজরুল মডেলের দাম ৮৫ হাজার টাকা, আর ফ্রিডম ও মতিউর ঘড়ির দাম ৭১ হাজার টাকা। 

স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে—যখন একই দামে বিদেশি ব্র্যান্ডের ঘড়ি পাওয়া যায়, তখন কেন দেশীয় ঘড়ি কিনবেন?

উদ্যোক্তাদের উত্তর দৃঢ়—বাংলাদেশি ওয়াচ মেকার শুধু একটি ব্র্যান্ড নয়, এটি বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও পরিচয়ের প্রতীক। প্রতিটি ঘড়ি তৈরিতে যুক্ত থাকে দীর্ঘ গবেষণা ও সূক্ষ্ম কাজ। রাতের পর রাত জেগে নতুন ধারণা খোঁজা আর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানোই তাদের অভ্যাস।

উদাহরণস্বরূপ, রাফিউল জানান—ঘড়ির ক্ল্যাস্পে খোদাই করা আছে মুক্তিযুদ্ধের সময় ব্যবহৃত থ্রি-নট-থ্রি রাইফেলের প্রতীক। মুক্তিযুদ্ধের সময় এই রাইফেলই সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয়েছিল। ডায়ালে ব্যবহার করা হয়েছে বীরশ্রেষ্ঠদের বাংলাদেশ সরকারের দেওয়া সাতটি পদকের ফিতার সাতটি রঙ। আবার বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের সানগ্লাস, পাইলট হ্যাট ও বিমানকে প্রতীকীভাবে বসানো হয়েছে ঘড়ির ১২টা, ৩টা ও ৯টার জায়গায়। 

এমনকি ১৯৭১ সালের ২০ আগস্ট—যেদিন মতিউর রহমান শহীদ হন, সেদিনের আবহাওয়ার তথ্য বের করতে তাদের লেগেছিল দুই মাস। জানা যায়, সেদিন পাকিস্তানের আকাশ ছিল মেঘলা। তাই ঘড়ির ডায়ালও করা হয়েছে মেঘলা আকাশের রঙে। বাংলা লেখাসহ আরও অসংখ্য সূক্ষ্ম ডিটেইলস যুক্ত আছে প্রতিটি ঘড়িতে।

একটি ঘড়ি তৈরির পেছনে সময় লাগে অন্তত এক বছর। তবে নজরুল মডেলের জন্য লেগেছে প্রায় আড়াই বছর। বর্তমানে আরও দুটি নতুন মডেল তৈরির কাজ চলছে।

দামের নীতি সম্পর্কে রাফিউল স্পষ্ট। তিনি বলেন, "যদি দাম কমাই, তবে একই মান বজায় রাখা সম্ভব হবে না। মানের সঙ্গে আপস করে কখনোই দাম কমাব না।" 

এর দুটি কারণ তিনি উল্লেখ করেন—প্রথমত, প্রতিটি ঘড়ি বাংলাদেশের নাম বহন করছে, তাই তা অবশ্যই আন্তর্জাতিক মানের হতে হবে। দ্বিতীয়ত, স্থায়িত্ব ও দীর্ঘমেয়াদী মান ধরে রাখা তার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

ব্যাটারি ছাড়াই চলবে ঘড়ি

বাংলাদেশি ওয়াচ মেকার-এর সব ঘড়িই সম্পূর্ণ স্বচালিত, অর্থাৎ কোনো ব্যাটারির প্রয়োজন হয় না। ব্যবহারকারীর হাতের স্বাভাবিক চলাচলই ঘড়িটিকে সচল রাখে। কিছুদিন না পরলে ঘড়ি বন্ধ হয়ে যেতে পারে, যা একেবারেই স্বাভাবিক। আবার পরার পর সময় ঠিক করে নিলেই চলে। চাইলে ২০–৩০ বার ম্যানুয়ালি চাবি দেওয়া যায়, তবে এর বেশি নয়।

ঘড়ির দৈনন্দিন যত্নও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বৃষ্টিতে ভিজলে সঙ্গে সঙ্গে খুলে ব্যাগ বা পকেটে রাখতে হবে। সময় পরিবর্তনের সময় ধীরে ও নরমভাবে ঘড়ি ঘোরাতে হবে, কখনোই কাটা উল্টো দিকে ঘোরানো যাবে না। বিশেষত রাত ৯টার পর ম্যানুয়ালি সময় বা তারিখ পরিবর্তন না করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। 

কারণ এই সময়ে ঘড়ির ভেতরে তারিখ পরিবর্তনের একটি প্রক্রিয়া শুরু হয়। এসময় ম্যানুয়ালি তারিখ বা সময় বদলালে মেকানিজমের ক্ষতি হতে পারে। প্রতিটি ঘড়ি লিমিটেড এডিশন এবং মেটাল ওয়ারেন্টি কার্ডের মাধ্যমে মান নিশ্চিত করে বাজারে আনা হয়।

বাংলাদেশি ওয়াচ মেকার-এর ঘড়ি তাদের নিজস্ব দোকান থেকে সংগ্রহ করা যায়। ওয়েবসাইট থেকেও কেনার সুযোগ আছে, তবে সেক্ষেত্রে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করতে হয়। এই সুবিধার কারণে দেশের বাইরে থেকেও মানুষ ঘড়ি কিনতে পারছেন।

ধানমন্ডিতে থাকা তাদের দোকান শুধু ঘড়ি দেখার জায়গাই নয়, সেটিকে এক্সপেরিমেন্টাল সেন্টার হিসেবেও গড়ে তুলছেন রাফিউল। তার ইচ্ছা—এখানে গ্রাহকরা ঘড়ির পাশাপাশি খুঁজে পাবেন মুক্ত সংস্কৃতির ছোঁয়া।

নিজের হাতে তৈরি বলেই প্রতিটি ঘড়ির পেছনে খোদাই করা আছে রাফিউলের নাম। কোনো পণ্যে 'মেড ইন বাংলাদেশ' লেখা দেখলে যেমন গর্ব হয়, ঠিক তেমনি কে বলতে পারে—একদিন হয়তো বাংলাদেশি ওয়াচ মেকার-এর তৈরি ঘড়ি সারা বিশ্বেই দাপিয়ে বেড়াবে!


ছবি: সৌজন্যেপ্রাপ্ত 
 

Related Topics

টপ নিউজ

বাংলাদেশি ওয়াচ মেকার / হাতঘড়ি / ঘড়ি / সময় / ওয়াচ / ফিচার / ঘড়ির দোকান / ব্র্যান্ড

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • ছবি: ডিএমপি
    হাদি হত্যাচেষ্টায় জড়িত ফয়সালকে ধরিয়ে দিতে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা সরকারের
  • এভারকেয়ার হসপিটাল। ফাইল ছবি: বিজনেস ওয়্যার
    হাদির অবস্থা ‘অত্যন্ত আশঙ্কাজনক’, মস্তিষ্কে মারাত্মক ক্ষতি, চলছে ভেন্টিলেশন: মেডিকেল বোর্ড
  • ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেইজ-টু’ অবিলম্বে চালু, এমপি প্রার্থীরা পাবেন অস্ত্রের লাইসেন্স: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
    ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেইজ-টু’ অবিলম্বে চালু, এমপি প্রার্থীরা পাবেন অস্ত্রের লাইসেন্স: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • ৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয় বৃদ্ধি ও দীর্ঘসূত্রতার কবলে চট্টগ্রামের ছয় মেগা প্রকল্প
    ৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয় বৃদ্ধি ও দীর্ঘসূত্রতার কবলে চট্টগ্রামের ছয় মেগা প্রকল্প
  • ছবি: ডিএমপি
    হাদির ওপর হামলা: সন্দেহভাজন ব্যক্তির ছবি প্রকাশ, তথ্য চায় পুলিশ
  • ছবি: সংগৃহীত
    হাদিকে গুলি করা সন্ত্রাসীরা শনাক্ত, যেকোনো সময় গ্রেপ্তার করা হবে: ডিএমপি কমিশনার

Related News

  • যেভাবে সরকারি চাকরি প্রস্তুতির ধরনই বদলে দিয়েছে ‘লাইভ এমসিকিউ’
  • লঞ্চ আর বাসের খুদে জগৎ: রিমোট-কন্ট্রোলে চলে পারাবাত-সুন্দরবন, রাস্তায় নামে এনা-গ্রিনলাইন
  • ছাপ্পান্নটি গবেষণা কেন্দ্র! নিজের ‘কীর্তি’ নিয়ে দিশেহারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
  • উশুতে মেডেল পেলে চাকরি মিলবে, তাই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন সান্ত্বনারা
  • নুসরাত, সুমাইয়ারা ছিল কোচিং ক্লাস শুরুর অপেক্ষায়...

Most Read

1
ছবি: ডিএমপি
বাংলাদেশ

হাদি হত্যাচেষ্টায় জড়িত ফয়সালকে ধরিয়ে দিতে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা সরকারের

2
এভারকেয়ার হসপিটাল। ফাইল ছবি: বিজনেস ওয়্যার
বাংলাদেশ

হাদির অবস্থা ‘অত্যন্ত আশঙ্কাজনক’, মস্তিষ্কে মারাত্মক ক্ষতি, চলছে ভেন্টিলেশন: মেডিকেল বোর্ড

3
‘অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেইজ-টু’ অবিলম্বে চালু, এমপি প্রার্থীরা পাবেন অস্ত্রের লাইসেন্স: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
বাংলাদেশ

‘অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেইজ-টু’ অবিলম্বে চালু, এমপি প্রার্থীরা পাবেন অস্ত্রের লাইসেন্স: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

4
৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয় বৃদ্ধি ও দীর্ঘসূত্রতার কবলে চট্টগ্রামের ছয় মেগা প্রকল্প
বাংলাদেশ

৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয় বৃদ্ধি ও দীর্ঘসূত্রতার কবলে চট্টগ্রামের ছয় মেগা প্রকল্প

5
ছবি: ডিএমপি
বাংলাদেশ

হাদির ওপর হামলা: সন্দেহভাজন ব্যক্তির ছবি প্রকাশ, তথ্য চায় পুলিশ

6
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ

হাদিকে গুলি করা সন্ত্রাসীরা শনাক্ত, যেকোনো সময় গ্রেপ্তার করা হবে: ডিএমপি কমিশনার

The Business Standard
Top

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net

Copyright © 2022 THE BUSINESS STANDARD All rights reserved. Technical Partner: RSI Lab