ভারতীয় ব্যান্ডউইথ আমদানি কমিয়ে ৫০ শতাংশ করতে বিটিআরসি’র নির্দেশ

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ভারত থেকে আমদানি করা টেরেস্ট্রিয়াল ব্যান্ডউইথের জাতীয় ব্যবহার ৬০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫০ শতাংশ করেছে।
বিটিআরসি'র সংশোধিত নির্দেশিকা অনুযায়ী, প্রতিটি আন্তর্জাতিক ইন্টারনেট গেটওয়ে (আইআইজি) অপারেটরকে নিশ্চিত করতে হবে যে, তাদের মোট ইন্টারনেট ট্র্যাফিকের ৫০ শতাংশের বেশি ইন্টারন্যাশনাল টেরেস্ট্রিয়াল কেবল (আইটিসি)-এর মাধ্যমে পরিচালিত হবে না।
এছাড়া, কমিশন কেবল ও টেরেস্ট্রিয়াল কেবল ব্যবসায় সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে সরকার আইটিসিগুলোর জন্য সরকারের সঙ্গে বাধ্যতামূলক রাজস্ব ভাগাভাগির হার ১ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩ শতাংশ করেছে। সাবমেরিন কেবল অপারেটররা আগে থেকেই সরকারকে তাদের রাজস্বের ৩ শতাংশ দিয়ে আসছিল।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ জানুয়ারির এক সভায় একমাত্র সাবমেরিন কেবল অপারেটর বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল পিএলসি (বিএসসিপিএলসি)-এর বাজার শেয়ারের লক্ষ্যমাত্রা ৪০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৬০ শতাংশ করে।
এজন্য সরকার রাষ্ট্রায়ত্ত তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানটিকে তাদের পরিষেবা আরও সাশ্রয়ী করার নির্দেশ দিয়েছে। পাশাপাশি, ডেটা সেন্টার, ক্যাশ সার্ভার এবং গুগল, মেটা, আকামাই ও অ্যামাজনের মতো বিশ্বব্যাপী প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর কন্টেন্ট ডেলিভারি নেটওয়ার্কের (সিডিএন) জন্য বিশেষ প্যাকেজ পরিকল্পনা করতে বলা হয়েছে।
বিটিআরসির এ পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে বিএসসিপিএলসির উপ-মহাব্যবস্থাপক (বিপণন ও বিক্রয়) মো. আরিফুল হক টিবিএসকে বলেন, ভারত থেকে প্রতি বছর প্রায় ৪.৫ টিবিপিএস টেরেস্ট্রিয়াল ব্যান্ডউইথ আমদানি করতে বাংলাদেশ প্রায় ৫০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করে। নতুন নিয়ন্ত্রণের ফলে বছরে প্রায় ১২ মিলিয়ন ডলার সাশ্রয় হবে।
তিনি বলেন, বিএসসিপিএলসি বাজারের ৬০ শতাংশেরও বেশি চাহিদা মেটানোর সক্ষমতা রাখে এবং প্রতিষ্ঠানটি ইতোমধ্যে এটির এসএমডব্লিউ-৪ কেবলের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বেসরকারি লিজড সার্কিট (আইপিএলসি) পরিষেবার জন্য ৩০ শতাংশ অতিরিক্ত সক্ষমতা দিচ্ছে।
এছাড়া, আইপি ট্রানজিট পরিষেবার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কিছু গন্তব্যের জন্য ৫০ শতাংশ অতিরিক্ত ব্যান্ডউইথ অফার করছে, বিশেষ করে সিঙ্গাপুরের সার্ভারগুলোর জন্য। এর ফলে দেশীয় আইআইজিগুলো জনপ্রিয় কন্টেন্ট সহজে ও কম খরচে পেতে পারবে।
আরিফুল হক জানান, সরকারি এ প্রতিষ্ঠানটি এখন গ্রাহকদের অনুরোধ প্রক্রিয়াকরণের গতি বাড়িয়েছে।
বর্তমানে বাংলাদেশ ৬-৭ টিবিপিএস ব্যান্ডউইথ ব্যবহার করে, যার ৭০ শতাংশের বেশি গুগল, মেটা, আকামাইসহ কিছু প্রতিষ্ঠান থেকে আসে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারত তাদের ভূখণ্ডে সিডিএন সার্ভার স্থাপন করায় এখন আইটিসি কেবলের মাধ্যমে দ্রুত ট্র্যাফিক সরবরাহ করছে, যা বাংলাদেশে টেরেস্ট্রিয়াল ইন্টারনেটের বাজার শেয়ার ৬০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়েছে।
বিটিআরসি আইআইজিগুলোকে তাদের মোট সক্ষমতার ১০ শতাংশ ব্যাকআপ হিসেবে স্যাটেলাইট-ভিত্তিক ইন্টারনেট সংযোগ রাখার নির্দেশনাও দিয়েছে।
বিএসসিপিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসলাম হোসেন এর আগে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেছিলেন, 'ব্যান্ডউইথের ব্যবহার কমানো জাতীয় সম্পদের কার্যকর ব্যবহারে সহায়ক হবে।'
বর্তমানে বিএসসিপিএলসির ইনস্টলড সক্ষমতা ৭.২ টিবিপিএস, যা আগামী বছরে ২০.৪ টিবিপিএস ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এছাড়া, ২০২৭ সালের মধ্যে তিনটি বেসরকারি সাবমেরিন কেবল যুক্ত হয়ে জাতীয় ব্যান্ডউইথ সক্ষমতায় আরও ৪৫ টিবিপিএস যোগ হবে।
তবে, আইটিসি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলো আর্থিক ক্ষতি ও পরিষেবার মান কমে যাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে।
ফাইবার@হোম গ্লোবালের প্রধান অপারেটিং কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার (অব.) মশিউর রহমান বলেন, 'আইটিসিগুলো বার্ষিক চুক্তির মাধ্যমে ব্যান্ডউইথ ক্রয় করে, তাই হঠাৎ বিক্রি কমে গেলে তারা বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।'
তিনি আরও বলেন, গুগল ও মেটার মতো বড় কন্টেন্ট সরবরাহকারীরা স্বাভাবিকভাবেই ভৌগোলিকভাবে সুবিধাজনক সিডিএন সার্ভার ব্যবহার করে। কিন্তু আইআইজিগুলোকে বাধ্যতামূলকভাবে সিঙ্গাপুরের দূরবর্তী সার্ভার ব্যবহার করতে হলে পরিষেবার মানের অবনতি হতে পারে।