ইন্টারনেটের গতিতে নতুন রেকর্ড জাপানের, যুক্তরাষ্ট্রের চেয়েও ৪০ লাখ গুণ বেশি

ইন্টারনেট গতির ক্ষেত্রে জাপানের গবেষকরা গড়লেন নতুন এক বিশ্ব রেকর্ড। তারা এক সেকেন্ডে ১ লাখ ২৫ হাজার গিগাবাইট তথ্য পাঠাতে সক্ষম হয়েছেন—যা প্রায় ১,৮০০ কিলোমিটার (১,১২০ মাইল) দূরত্ব অতিক্রম করেছে। তুলনায়, এটি যুক্তরাষ্ট্রে গড় ইন্টারনেট গতির চেয়ে প্রায় ৪০ লাখ গুণ বেশি।
গবেষকদের দাবি, এই গতিতে পুরো ইন্টারনেট আর্কাইভ মাত্র চার মিনিটেরও কম সময়ে ডাউনলোড করা সম্ভব। ২০২৪ সালে বিজ্ঞানীদের আরেকটি দলের করা পূর্ববর্তী রেকর্ড ছিল ৫০,২৫০ গিগাবাইট/সেকেন্ড, অর্থাৎ নতুন রেকর্ডটি তার দ্বিগুণেরও বেশি।
এই গতির জন্য গবেষকরা নতুন ধরনের অপটিক্যাল ফাইবার তৈরি করেছেন। এর মাধ্যমে নিউইয়র্ক থেকে ফ্লোরিডা পর্যন্ত দূরত্বের সমান এলাকায় তথ্য পাঠানো হয়েছে।
জাপানের জাতীয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের মতে, এই গবেষণার বিস্তারিত তুলে ধরা হয় ৩ এপ্রিল, সান ফ্রান্সিসকোতে অনুষ্ঠিত ৪৮তম অপটিক্যাল ফাইবার কমিউনিকেশন কনফারেন্সে।
নতুন অপটিক্যাল ফাইবারের ভেতরে রয়েছে ১৯টি আলাদা ফাইবার চ্যানেল, যেগুলো সব মিলিয়ে মাত্র ০.১২৭ মিলিমিটার পুরু, যেটা প্রচলিত একক ফাইবার তারের মতোই। এত পাতলা তারে ১৯টি চ্যানেল রাখার ফলে বিদ্যমান অবকাঠামো ব্যবহার করেই বহু গুণ বেশি ডেটা ট্রান্সমিশন সম্ভব হচ্ছে।
এই তারে আলো চলাচলের সময় প্রতিটি চ্যানেল একভাবে প্রতিক্রিয়া দেয়, ফলে আলোক তরঙ্গের বিভ্রান্তি কম হয় এবং ডেটা হারানোর ঝুঁকি কমে যায়।
এর আগে ২০২৩ সালের মার্চে একই গবেষক দল প্রায় একই গতি পেয়েছিলেন, কিন্তু তা ছিল অনেক কম দূরত্বে। এবার তাদের বড় চ্যালেঞ্জ ছিল—দূরত্ব বাড়ানোর পরেও ডেটা লস কমানো এবং সিগন্যাল অ্যাম্পলিফিকেশন বা তথ্যের শক্তি বাড়ানো।
তারা সেই চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে উঠতে সফল হয়েছেন। নতুন প্রযুক্তিতে ডেটা ২১ বার সিস্টেমের মধ্য দিয়ে ঘুরে শেষ পর্যন্ত ১,১২০ মাইল পাড়ি দিয়ে রিসিভারে পৌঁছায়।
বিশ্বজুড়ে ডেটা ট্রাফিকের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। তাই এমন উচ্চ ক্ষমতার ও দীর্ঘপথে ডেটা পাঠাতে সক্ষম অপটিক্যাল যোগাযোগ ব্যবস্থা ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে বলে মনে করছেন গবেষকরা।
তারা বলেন, এই রেকর্ড শুধু গবেষণার সীমানা ছাড়িয়ে বাস্তব টেলিকমিউনিকেশন ব্যবস্থায় প্রয়োগযোগ্য সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিচ্ছে। পরবর্তী ধাপে তারা এই প্রযুক্তির ব্যবহারিক প্রয়োগ নিয়ে কাজ করতে চান।