তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে আজ থেকে ৪৮ ঘণ্টার আন্দোলন কর্মসূচি

তিস্তা নদীর পানি বণ্টন চুক্তি ও মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে রংপুর বিভাগের পাঁচ জেলায় মানুষজন নিয়ে স্মরণকালের বৃহৎ আন্দোলন শুরু হয়েছে। তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের ব্যানারে নদীর ১১ টি পয়েন্টে আজ দুপুর থেকে টানা ৪৮ ঘণ্টা এই কর্মসূচি পালন করা হবে।
এই আন্দোলনের মাধ্যমে তিস্তাপাড়ের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে অন্তর্বর্তী সরকারকে দাবি বাস্তবায়নে চাপ প্রয়োগ করাসহ বিশ্ব দরবারে তিস্তা পারের দুঃখ তুলে ধরা হবে। কর্মসূচি বাস্তবায়নে তিস্তার বুকে মঞ্চ তৈরি করে দাবি আদায়ের স্লোগান দিচ্ছেন আপামর মানুষ।
দুদিনব্যাপী এই আন্দোলনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আগামীকাল (১৮ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় ৫ জেলার ১১টি পয়েন্টে ভার্চুয়ালি যুক্ত হবেন। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আজ তিস্তা পাড়ের সমাবেশে বক্তব্য দেবেন। এছাড়া বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা সংহতি জানাতে তিস্তা পাড়ে এসেছেন।
আন্দোলন কর্মসূচির অংশ হিসেবে তিস্তা নদী পাড়ের লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, রংপুর ও গাইবান্ধা জেলার ১১ টি পয়েন্টে সমাবেশ, পদযাত্রা, সাংস্কৃতিক পরিবেশনা করবে তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন কমিটি।
এর মধ্যে রংপুরের কাউনিয়া রেলসেতু ও গঙ্গাচড়া মহিপুর বাজার সংলগ্ন তিস্তা নদীর বুকে রংপুরের কর্মসূচি রয়েছে।

রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার মহিবুর রহমান বলেন, "'জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই' স্লোগানে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা এই আন্দোলনে অংশ নিচ্ছেন। বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ আসাদুল হাবীব দুলুর নেতৃত্বে টানা ৪৮ ঘণ্টার আন্দোলন কর্মসূচি শুরু হয়েছে। আশা করছি, এ আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা বিশ্ববাসীকে জানিয়ে দিতে পারব, আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র পানির ন্যায্য হিস্যা দিচ্ছে না।"
গাইবান্ধা সদরের বাসিন্দা সাগর বলেন, "প্রায় ৩০ থেকে ৪০ হাজার মানুষের রাত্রিযাপনের প্যান্ডেল, সমাবেশ ও বিনোদনের জন্য মঞ্চ তৈরি হয়েছে। পর্যাপ্ত লাইটের ব্যবস্থা করা, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা, বিশুদ্ধ পানির জন্য অস্থায়ী নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে। এ আন্দোলনের মাধ্যমে এই অঞ্চলের সাধারণ মানুষ জানিয়ে দিচ্ছে তিস্তার প্রয়োজনীয়তা।"
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, কয়েক বছর থেকে শুষ্ক মৌসুমের আগেই পানি শুকিয়ে ছোট-বড় অসংখ্য চর জেগে উঠেছে তিস্তা নদীতে। অথচ এই তিস্তা এক সময় এই অঞ্চলের মানুষের জীবনের গতিপথ নির্ধারণ করত। কিন্তু এখন ৫ জেলায় দুই কোটি মানুষের দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে তিস্তা।
রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, পরিচর্যার অভাবে তিস্তা নাব্যতা হারিয়েছে। নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে পানি ধারণের সক্ষমতাও কমে গেছে। আগে শুষ্ক মৌসুমে তিস্তার পানি প্রবাহ প্রায় ৫ হাজার কিউসেক থাকত। কিন্তু তিস্তা নদীর উজানে ভারতের একতরফা পানি প্রত্যাহারের ফলে তা মাত্র ৪০০ কিউসেকে নেমে এসেছে । পানির অভাবে প্রতিবছর প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।
তিস্তা অববাহিকায় শুধু কৃষিই নয়, নদী শুকিয়ে যাওয়ায় বিলীন হয়েছে মাছের অভয়াশ্রম, বন্ধ হয়ে গেছে নদী-নির্ভর যোগাযোগব্যবস্থা। এতে জেলে, মাঝিসহ লাখো মানুষের জীবন-জীবিকা চরম সংকটে পড়েছে।
স্থানীয় কৃষকরা বলেন, "বর্ষাকালে পানির স্রোত থামানো যায় না, আর শুষ্ক মৌসুমে বালু ছাড়া কিছুই থাকে না। এখন পানি না থাকায় গভীর নলকূপ বসিয়ে সেচ দিতে হচ্ছে। পানি না থাকায় আগের মতো মাছও মিলছে না।"
নদী গবেষক ও স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, "নদীর ভাটিতে পানির অভাব থাকলেও উজানে অর্থাৎ ভারত অংশে পর্যাপ্ত পানি রয়েছে। কিন্তু আমাদের এই অঞ্চল ভয়াবহ মরুকরণের মুখে। উজানে ভারত একাধিক বাঁধ, খাল, জলবিদ্যুৎ ও সেচ প্রকল্প নির্মাণ করার ফলে পানির সংকটে রয়েছে বাংলাদেশ। এতে খুব বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছেন উত্তরের পাঁচ জেলার দুই কোটি মানুষ। এ থেকে রক্ষার জন্য একমাত্র সমাধান হচ্ছে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন।"
তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী ও বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ আসাদুল হাবীব দুলু সাংবাদিকদের বলেন, "তিস্তা চুক্তি ও মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন কোন ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা কোন রাজনৈতিক দলের নয়। এটি রংপুর বিভাগবাসীর আন্দোলন। এই আন্দোলন জন দাবিতে পরিণত হওয়ায়, এতে তিস্তাপাড়ের মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ রয়েছে।"