এ সরকারের প্রথম অধ্যায় শেষ হয়েছে, সংলাপের মাধ্যমে দ্বিতীয় অধ্যায় শুরু: ড. ইউনূস

রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আজ শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রথম বৈঠক শুরু হয়েছে। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, প্রথম ছয় মাসে আমাদের এ সরকারের প্রথম অধ্যায় শেষ হয়েছে। আজ রাজনৈতিক সংলাপের মাধ্যমে দ্বিতীয় অধ্যায়ের শুরু হলো।
বৈঠকে আসরের নামাজের বিরতি চলাকালে প্রধান উপদেষ্টার বরাত দিয়ে তার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
তিনি আরও বলেন, '১০টির মতো দলের বক্তব্য শেষ হয়েছে। এখন আসরের নামাজের বিরতি চলছে। বিরতির পর আবার সংলাপ শুরু হবে। মোট ২৬টি দল অংশ নিয়েছেন এ মিটিংয়ে।'
এর আগে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে এ বৈঠক শুরু হয়।
প্রধান উপদেষ্টার সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব আহমেদ ফয়েজ টিবিএসকে জানিয়েছেন, বৈঠকে সংস্কার ও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্যের বিষয়টি মূল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল বৈঠকে যোগ দিয়েছে।
এছাড়া বৈঠকে উপস্থিত আছেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমদ, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, জাতীয় পার্টির (জাফর) মোস্তফা জামাল হালদার, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ, বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম, ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ মোহাম্মদ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানি।

আরও উপস্থিত আছেন এবি পার্টির চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান মঞ্জু, গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নূর, গণ ফোরামের প্রেসিডিয়াম সদস্য সুব্রত চৌধুরী, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট ও বাংলাদেশ লেবার পার্টির নেতারা।
বৈঠকে রাজনৈতিক দলগুলো বাদেও যোগ দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ।
এদিকে বৈঠক থেকে বেরিয়ে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রধান শুরুতেই কমিশনের লক্ষ্য উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি বলেছেন যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে যেখানে আমরা সবাই একমত হতে পারি, তার ওপর ভিত্তি করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব। প্রফেসর আলী রীয়াজ পরিষ্কার করে বলে দিয়েছেন যে আলাপ-আলোচনার মধ্যে দিয়েই আমরা একটি জাতীয় সনদ তৈরি করতে চাই। যেই সনদ নিয়ে আমরা পরবর্তী নির্বাচন বা গণতান্ত্রিক অভিযাত্রার দিকে হাঁটতে পারব।
তিনি বলেন, সরকারপ্রধান বলেছেন, কোনো রাজনৈতিক দল বা কারোর ওপরে তারা কোনো কিছু চাপিয়ে দিতে চান না । একটা বোঝাপড়া করে, আলোচনা করে ন্যূনতম ঐক্যের জায়গাতে আমরা দাঁড়াতে চাই। যেহেতু পুরনো জামানায় আমরা কেউ ফিরতে চাই না এবং কেউ সংস্কার ও বিচারের দাবিটাকে অস্বীকার করছে না।
তিনি আরও বলেন, আমাদের দিক থেকে আমরা যেটি বলেছি, সরকারের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। একটি হচ্ছে গণহত্যার বিচার, প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করা এবং এর মধ্যে দিয়ে জাতীয় নির্বাচন করে দেশকে গণতান্ত্রিক অভিযাত্রার দিকে নিয়ে যাওয়া।
গত বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে সাত সদস্যের জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠিত হয়। কমিশনটি রাজনৈতিক, সাংবিধানিক ও নির্বাচনি সংস্কারের বিভিন্ন এজেন্ডায় ঐকমত্যে পৌঁছাতে ছয়টি পৃথক কমিশনের সুপারিশ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাবে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ছয় মাসের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে চূড়ান্ত সুপারিশ প্রণয়ন করবে। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় কমিশনকে সাচিবিক সহায়তা দিচ্ছে।