প্রথম দফার আলোচনা শেষে ১৬৬ সংস্কার প্রস্তাবের মধ্যে ৬২টিতে ঐকমত্য

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে এখন দ্বিতীয় দফার আলোচনা চলছে। এর আগে প্রথম দফায় ৩৩টি দল ও জোটের সঙ্গে আলোচনা করেছিল কমিশন। প্রথম দফার ওই আলোচনায় পাঁচটি সংস্কার কমিশনের ৭১৮টি সংস্কার প্রস্তাব থেকে বাছাই করা ১৬৬টি বিষয়ে মতামত নেওয়া হয়। মোট ৪৪টি অধিবেশনে আলোচনা করে তারা ৬২টি বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পেরেছে।
বুধবার (২৩০ জুলাই) রাতে কমিশনের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো 'প্রথম পর্বের আলোচনায় ঐকমত্যে উপনীত হওয়া বিষয়সমূহ' শীর্ষক একটি নথিতে ৬২ বিষয়কে জুলাই জাতীয় সনদে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য খসড়া করা হয়েছে। নথিটি টিবিএসের হাতে এসেছে।
জানতে চাইলে কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রিয়াজ বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি টিবিএসকে বলেন, 'আমরা সব সুপারিশ নিয়ে আলোচনা করিনি। বরং প্রথম দফার আলোচনায় একটি স্প্রেডশিটে দেওয়া ১৬৬টি বিষয়ে দলগুলোর মতামত চাওয়া হয়েছিল; তার মধ্যে ৬২ বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে।'
নির্বাচন, সংবিধান, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন ও দুর্নীতি দমন—এই পাঁচটি সংস্কার কমিশন মোট ৭১৮টি প্রস্তাব দিয়েছিল।
আলী রিয়াজ বলেন, 'চলমান দ্বিতীয় দফার আলোচনায় দলগুলো এখন পর্যন্ত আরও প্রায় ১৩টি বিষয়ে একমত হয়েছে।'
এদিকে বিএনপি সংবাদমাধ্যমকে বলেছে, ছয়টি সংস্কার কমিশনের (উল্লিখিত পাঁচটি ও পুলিশ সংস্কার বিষয়ক কমিশন) দেওয়া ৮২৬টি সুপারিশের মধ্যে তারা ৬৫০টিতে একমত হয়েছে। প্রথম ধাপের আলোচনায় ব্যবহৃত স্প্রেডশিটটিকে বিভ্রান্তিকর বলেও উল্লেখ করেছে দলটি।
বিএনপির এই দাবি সম্পর্কে জানতে চাইলে আলী রিয়াজ বলেন, বিএনপি স্প্রেডশিট ব্যবহার না করে প্রতিটি বিষয় ধরে ধরে বিস্তারিত আলোচনা করেছে।
অন্যান্য দলের অবস্থান কী?
এর আগে গত ২৩ মার্চ প্রথম দফার আলোচনা চলাকালে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতা সারওয়ার তুষার বলেন, কমিশনের স্প্রেডশিটে থাকা ১৬৬টি প্রস্তাবের মধ্যে ১১৩টির সঙ্গে তারা পুরোপুরি একমত। ২৯টির সঙ্গে আংশিক একমত ও ২২টির সঙ্গে তারা দ্বিমত পোষণ করেছেন।
১৮ মে জামায়াত নেতা সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের জানান, তারা ১৬৬টি প্রস্তাবের মধ্যে ১২০টিরও বেশি প্রস্তাবের সঙ্গে একমত হয়েছেন।
এবি পার্টি জানিয়েছে, তারা ১০৮টি প্রস্তাবে একমত, ৩২টিতে দ্বিমত ও২৬টিতে আংশিকভাবে একমত হয়েছে।
এদিকে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) বলেছে, তারা কমিশনের দেওয়া ১৬৬টি সুপারিশের মধ্যে ১২০টির সঙ্গে একমত।
বিভিন্ন কমিশনে যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে
সংবিধান সংস্কার কমিশনের ১৩১টি সুপারিশ ছিল। সেখানে সংবিধান-বিষয়ক ১৮টি ব্যাপারে একমত হয়েছে দলগুলো। এর মধ্যে আছে— দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা গঠনের ও সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন ১০০-তে উন্নীতকরণ।
রাষ্ট্রপতির অভিশংসন, বাংলা ভাষার রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ও অন্যান্য মাতৃভাষার স্বীকৃতি এবং নাগরিক পরিচয়ে 'বাংলাদেশি' শব্দকে প্রতিষ্ঠার পক্ষেও দলগুলো একমত হয়েছে।
নির্বাচন ব্যবস্থা সংষ্কারে ২৪৩ সুপারিশে কেবল একটি বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে—নির্বাচন কমিশনের অধীনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোকে তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯-এর আওতাভুক্ত করা হবে।
বিচার বিভাগ সংস্কারে ৮৯টি সংস্কার প্রস্তাবের মধ্যে ১৮টিতে ঐকমত্য হয়েছে। এগুলোর মধ্যে আছে আপিল বিভাগ ও হাইকোর্টে প্রয়োজনীয়সংখ্যক বিচারক নিয়োগ, একটি স্বাধীন বিচারক নিয়োগ কমিশন গঠন, বিচারকদের জন্য আচরণবিধি হালনাগাদ এবং নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ সুপ্রিম কোর্টের অধীনে আনা।
এছাড়াও আদালত ব্যবস্থা ডিজিটাল করা, মামলার দীর্ঘসূত্রতা নিরসন, বার কাউন্সিল নির্বাচন ও আইনজীবী সমিতিতে দলীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ করা এবং বিচারকরা রাজনৈতিক আনুগত্য বা অবস্থান প্রকাশ করলে তা অসদাচরণ হিসেবে গণ্য করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে দলগুলো একমত হয়েছে।
জনপ্রশাসন সংস্কারে ২০৮টি বিষয়ের মধ্যে ৬টিতে ঐকমত্য হএয়েছে। এগুলোর মধ্যে আছে ২০২৪-এর জুলাই অভ্যুত্থানকালীন গণহত্যা, ভোট জালিয়াতি ও দুর্নীতিতে জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন।
দুর্নীতি দমন সংষ্কারে ৪৭টি প্রস্তাবের মধ্যে ১৯টি বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে। এগুলোর মধ্যে আছে সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে আইনি ক্ষমতার অপব্যবহার ও অনুপার্জিত আয় রোধ, দুর্নীতিবিরোধী জাতীয় কৌশলপত্র প্রণয়ন এবং বেনিফিশিয়াল ওনারশিপ আইন প্রণয়ন।