ড্যাপের সংশোধনী অনুমোদন, বাড়ানো হলো ভবনের উচ্চতার সীমা

ঢাকার বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) ২০২২–২০৩৫ পর্যালোচনা-সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটি বেশ কিছু সংশোধনী প্রস্তাবসহ ড্যাপের নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে। এর মাধ্যমে রাজধানীর প্রায় সব এলাকায় ভবনের উচ্চতার সীমা বাড়ানো হয়েছে।
রোববার (১৯ অক্টোবর) গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদারের সভাপতিত্বে রাজউক প্রণীত ড্যাপ বাস্তবায়ন মনিটরিং ও প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সংশোধনীর সুপারিশ প্রণয়ন-সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় অনুমোদনের ভিত্তিতে শীঘ্রই সংশোধিত ড্যাপ (২০২২–২০৩৫) গেজেট আকারে প্রকাশিত হবে বলে মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়।
ড্যাপের ফ্লোর এরিয়া রেশিও (এফএআর), জনঘনত্ব, বন্যাপ্রবাহ অঞ্চল ও কৃষি ভূমি সংরক্ষণের বিষয়গুলো পর্যালোচনা করে পরিবেশ সংবেদনশীলতাকে গুরত্ব দিয়ে বিধানাবলী সংশোধনীর অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ সংশোধনী অনুযায়ী, রাজউকের আওতাধীন প্রায় সব এলাকায় ফ্লোর এরিয়া রেশিও ও জনঘনত্ব বাড়বে।
বিদ্যমান ড্যাপে (২০২২–২০৩৫) কৃষিজমিতে সীমিত পরিসরে নাগরিক পরিষেবা নির্মাণের অনুমোদন ছিল, যা বর্তমান সংশোধনীতে বাতিল করা হয়েছে। এছাড়াও আগে 'মুখ্য জলস্রোত' ও 'সাধারণ জলস্রোত' পৃথকভাবে থাকলেও বর্তমান সংশোধনীতে সেগুলো একসঙ্গে 'বন্যা প্রবাহ অঞ্চল' নামে পরিবর্তিত হবে, যেখানে সব ধরনের স্থাপনা নির্মাণ নিষিদ্ধ হবে।
ট্রানজিট-ভিত্তিক উন্নয়ন (টিওডি), পুনরুজ্জীবন ও ব্লক-ভিত্তিক নগর উন্নয়নকে উৎসাহিত দেওয়ার লক্ষ্যে ফ্লোর এরিয়া রেশিও প্রণোদনা দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
একইসাথে বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড (২০২০) ও ড্যাপের (২০২২–২০৩৫) সমন্বয় করে শহর উন্নয়নের প্রাবল্যতার সঙ্গে যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে ইমারত নির্মাণ বিধিমালা সংশোধনীর অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ভবনের নকশায় ব্যত্যয়—যেমন অতিরিক্ত ফাঁকা জায়গা, সেটব্যাক, ভূমি আচ্ছাদন, জনঘনত্ব—নিয়ন্ত্রণের জন্য বিধি বিধানের সংশধন, পরিমার্জন ও বিল্ডিং কোডের সাথে সমন্বয় করা হয়েছে। দুর্যোগ সহনশীলতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নির্মাণকাজ শুরুর আগে কাঠামোগত ও স্থাপত্য—উভয় নকশার অনুমোদন নেওয়ার বিষয়টিও যুক্ত করা হয়েছে।
জনভোগান্তি লাঘবে বিশেষ বা বৃহদায়তন প্রকল্পের ক্ষেত্রে নির্মাণকাজের সুপারিশ পাওয়ার পর আর অনুমোদনের প্রয়োজন হবে না; তবে অনুমোদনের ফি জমা দিতে হবে। পাঁচ কাঠা বা তার চেয়ে বড় প্লটের জন্য স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (এসটিপি) স্থাপন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সংশোধনীতে পরিবেশবান্ধব ভবনের (গ্রিন বিল্ডিং) জন্য প্রণোদনা প্রদান এবং একটি আপিল কমিটি গঠনের বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
সভায় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে গত ১৯ মার্চ ড্যাপ পর্যালোচনা-সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটি প্রস্তাবিত সংশোধনীগুলো আরও নিবিড়ভাবে যাচাই-বাছাইয়ের নির্দেশনা দিয়েছিল। সেই নির্দেশনার আলোকে রাজউক ও মন্ত্রণালয় বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে প্রায় ৩৫টি বৈঠক শেষে রোববারের সভায় চূড়ান্ত খসড়াটি উপস্থাপন করে।