সাবের হোসেন চৌধুরী কীভাবে জামিন পেলেন: প্রশ্ন রিজভীর

গুম ও হত্যার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ থাকার পরও আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরীর কীভাবে গ্রেপ্তারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জামিন পেলেন তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, "আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল আমার খুব কাছের। তিনি (আসিফ) আইন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা অবস্থায় সাবের হোসেন চৌধুরীর মতো একজন খুনি কীভাবে জামিন পেতে পারেন?"
আজ বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) রাজধানীর খিলগাঁওয়ে এক সমাবেশে রিজভী বলেন, সাবেরের নির্বাচনি এলাকার মানুষ চরম নির্যাতনের শিকার হয়েছে, অনেকে পঙ্গু হয়েছে। ছাত্রদলের খিলগাঁও শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান জনিকে তার বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে ১৬ বার গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল।
তিনি আরও বলেন, "সাবের হোসেন চৌধুরী কি এর জন্য দায়ী নন? তার নির্দেশে ওই এলাকার ১১ জনকে গুম ও হত্যা করা হয়েছে। তিনি এই দায় এড়াতে পারেন না।"
সাবের হোসেন চৌধুরীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে গুম ও হত্যাকাণ্ডের শিকার পরিবারগুলো এ সমাবেশের আয়োজন করে।
এর আগে রবিবার (৬ অক্টোবর) রাজধানীর গুলশান এলাকা থেকে সাবেরকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। খিলগাঁও থানার চারটি ও পল্টন থানার দুটি মামলাসহ ছয়টি মামলায় ঢাকার আদালত তাকে জামিন দিলে পরদিন তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পান।
গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী শাসনের পতনের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া অনেক রাজনীতিবিদ ও মন্ত্রিসভার সাবেক সদস্যদের মধ্যে সাবের চৌধুরীই প্রথম আওয়ামী লীগ নেতা।
রিজভী বলেন, "শেখ হাসিনার শাসনামলে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বাধীন গণ-আন্দোলনে খিলগাঁও এলাকায় পাঁচজন নিহত হয়েছেন।"
তিনি বলেন, "শেখ হাসিনা গণহত্যা করেছে এবং সাবের হোসেন চৌধুরী তার সহযোগী ছিল। তিনি শেখ হাসিনার আদর্শে লালিত হয়েছেন। ক্ষমতায় থাকাকালে কেউ গণতন্ত্র, বিএনপি, বেগম খালেদা জিয়া বা তারেক রহমানের পক্ষে কথা বলার সাহস পায়নি। এ কারণেই তিনি (সাবের) সফলভাবে গুম ও হত্যার কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছেন।"
বিএনপির এই নেতা আক্ষেপ করে বলেন, ছেলে হারানো বাবাদের চোখের পানি এখনো শুকায়নি, তারপরও গ্রেপ্তারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হত্যা মামলায়ও জামিনে মুক্তি পেয়েছেন সাবের হোসেন।
তিনি বলেন, "ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে জনগণের সমর্থনে গঠিত একটি সরকার। তারা যদি শেখ হাসিনার পদাঙ্ক অনুসরণ করে, তাহলে এর অর্থ কী? আসিফ নজরুলের মতো একজন ব্যক্তিকে অন্তর্বর্তীকালীন এই সরকারে থাকতে গ্রেপ্তারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সাবের হোসেন চৌধুরীর জামিনে মুক্তি পাওয়া কীভাবে সম্ভব? তাহলে এই সরকার কাকে রক্ষা করছে?"
রিজভী অভিযোগ করে বলেন, "সাবের হোসেন চৌধুরী বছরের পর বছর জনগণের ভোট ছাড়াই সংসদ সদস্য ছিলেন। 'তার নির্দেশে অনেক হত্যাকাণ্ড ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। যদি তাকে জামিন দেওয়া হয়, তাহলে আর্থিক কেলেঙ্কারিতে জড়িত এবং ক্রসফায়ারে জড়িত পুলিশ - যারা মানুষকে গুম করেছে, নির্যাতন করেছে এবং মাথায় গুলি করেছে - সম্ভবত কয়েক দিনের মধ্যেই তারাও মুক্তি পাবে। এর জবাব অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কীভাবে দেবে?"
পরে সাবের হোসেন চৌধুরীকে গ্রেপ্তারের দাবিতে রুহুল কবির রিজভীর নেতৃত্বে মিছিল বের করা হয়।