কমিশন না পাওয়ার অভিযোগ সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ব্রাঞ্চ ম্যানেজারদের

সোনালী লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড থেকে কমিশনসহ কোনো অর্থ পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন প্রতিষ্ঠানটির ব্রাঞ্চ ম্যানেজাররা। তারা জানান, ব্রাঞ্চ ম্যানেজারদের পাশাপাশি এজেন্টরাও একই পরিস্থিতির ভুক্তভোগী, যা তাদেরকে এক অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিয়েছে।
রোববার (১২ মে) সারাদেশ থেকে প্রায় একশোরও বেশি ব্রাঞ্চ ম্যানেজার প্রতিষ্ঠানটির মালিবাগ প্রধান অফিসে জড়ো হন।
এ সময় প্রায় ১০ জন ব্রাঞ্চ ম্যানেজারের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তারা বলেন, এতদিন প্রতি মাসের ৩-৭ তারিখের মধ্যে কমিশন পেয়ে যেতেন তারা; কিন্তু এ মাসে ১২ তারিখ হয়ে গেলেও তাদের পাওনা পরিশোধ করেনি কোম্পানি।
এদিকে, এ বিষয়ে কোম্পানি বলছে– বিষয়টি বোঝার চেষ্টা করছে তারা। দুই-এক দিনের মধ্যে পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে, এরপর দ্রুত সময়ের মধ্যে কমিশন দেওয়া হবে।
সোনালী লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটির সক্রিয় এজেন্ট আছেন প্রায় ২৬,৯০৯ জন।
দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়ার পর পর সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডে প্রশাসক নিয়োগ করে ইনস্যুরেন্স ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড রেগুলেটরি অথরিটি (আইডিআরএ)।
গত ১৮ এপ্রিল আইডিআরএ বিমা কোম্পানিটিতে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেয় ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এসএম ফেরদৌসকে।
সোনালী লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানি সূত্রে জানা গেছে— এজেন্ট, ব্রাঞ্চ ম্যানেজার ও ইউনিট ম্যানেজারদের সব মিলে মাসিক কমিশন এবং ভাতা বাবদ আইডিআরএ'র বিধি অনুযায়ী প্রায় সাড়ে ৬ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে।
সোনালী লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানির মালিবাগ অফিসের ব্রাঞ্চ ম্যানেজার মো. রবিউল হাসান টিবিএসকে বলেন, "প্রায় ৪ বছর হয় আমি এখানে কাজ করি। আমার অধিনে প্রায় ৭০০ এজেন্ট আছে। আমরা কমিশন, মার্কেটিং খরচ, ব্রাঞ্চ চালানোর খরচ পাই। আমাদের দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলতে যেতে হয়। আমারা যে কমিশন পাই তার প্রায় ৬০ শতাংশই খরচ হয় প্রতিষ্ঠানের কাজ করতে।"
তিনি বলেন, "গত মাসে আমি ৩ লাখ টাকা কমিশন পেয়েছিলাম । কিন্তু আজকে ১২ তারিখ হয়ে গেছে, এখনও আমি কোনো কমিশন পাচ্ছি না। আমার এজেন্টরাও কোনো টাকা পাচ্ছে না।"
তিনি জানান, "আগে কমিশন ৭ তারিখের মধ্যে আমাদের ব্যংক অ্যাকাউন্টে চালে আসতো। সরকার প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছে ভালোর জন্য, কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে কমিশন পাচ্ছি না। আমরা চাই দ্রুত আমাদের কমিশন দিয়ে দেওয়া হোক। আমরা এই কমিশনের উপর দিয়েই পরিবারের খচর চালাই।"
চট্টগ্রামের ব্রাঞ্চ ম্যানেজার আবদুল কুদ্দুস লিটন বলেন, "একেতো আমারা কমিশন পাচ্ছি না, তার উপর আমাদের আমাদের গ্রাহদের গ্রাহকের বিমা দাবি নিষ্পত্তির টাকাও দেওয়া হচ্ছে না। এতে গ্রাহকের আস্থাও হারাচ্ছি আমরা। আগে বিমা দাবির টাকা নির্ধারিত সময় দিয়ে দেওয়া হতো।"
কমিশন না দেওয়ার বিষয়ে মালিবাগ অফিসে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) এসএম ফেরদৌস আহমেদ টিবিএসকে বলেন, বিশেষ পরিস্থিতির কারণে যেহেতু এখানে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়োছে— তাই বিষয়গুলো বুঝতে একটু সময় লাগছে।
"বিষয়টি বুঝে কাজ করতে হবে। যারা এজেন্টের কমিশনের বিষয়ের বলছেন, তাদেরকেও পরিস্থিতি বুঝতে হবে। টাকা পয়সার বিষয় আমরা নিয়ম মতো দিয়ে দেব, এটি নিয়ে শঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই," বলেন তিনি।
নতুন প্রশাসক আরও বলেন, "একটি ভীতি ছড়ানো হচ্ছে। কমিশন পাওয়ার বিষয়ে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। নিয়ম অনুয়ায়ী সব কাজ চালু আছে। আমরা আশা করি, আগামী দুই-এক দিনের ভেতরে পরিপূর্ণ নিয়ন্ত্রণে এসে যাবে। এরপর দ্রুত সময়ের মধ্যে কমিশন দেওয়া হবে।"