শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধে তিন কারখানাকে সরকারের সোয়া ১২ কোটি টাকা সহায়তা

ঈদের আগে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে তিনটি পোশাক কারখানাকে ১২ কোটি ২৩ লাখ ৩৫ হাজার ৫৩৪ টাকা দিয়েছে সরকার। আর শ্রমিক অসন্তোষ থাকা টিএনজেড কারখানার গাড়ি বিক্রি করে ওই প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করা হয়েছে।
রোজার ঈদে শ্রমিকদের বেতন-ভাতাসহ অন্যান্য পাওনা পরিশোধের বিষয়ে বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন এই তথ্য জানান।
শ্রম উপদেষ্টা বলেন, শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধের জন্য রোয়ার ফ্যাশনের অনুকূলে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কেন্দ্রীয় তহবিলের আপদকালীন হিসাব থেকে এক কোটি ২৩ লাখ ৩৫ হাজার ৫৩৪ টাকা দেওয়া হয়েছে। তবে এ উদ্যোগ অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রসারিত করা যাবে না।
উপদেষ্টা জানান, গত ২৫ মার্চের সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শ্রমিক অসন্তোষ নিরসনে টিএনজেড গ্রুপের অ্যাপারেলস ইকো লিমিটেডের গাড়ি বিক্রি করে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করা হয়েছে। এটা এর আগে বাংলাদেশে হয়েছে কি না, আমার জানা নেই। মালিক অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে আছেন।
এছাড়া শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে মাহমুদ গ্রুপের দুটি প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক নগদ সহায়তা বাবদ ১১ কোটি টাকা ছাড় করেছে বলে জানান শ্রম উপদেষ্টা।
উপদেষ্টা জানান, স্টাইল ক্রাফট অ্যান্ড ইয়াংওয়ান বিডি লিমিটেডের বেতন-ভাতা পরিশোধের জন্য প্রতিষ্ঠানটির মালিক ও শ্রমিকদের নিয়ে শ্রম মন্ত্রণালয়ে সভায় পাওনা পরিশোধের বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়েছে।
পোশাক শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি, যার যা পাওনা পেয়ে যাবেন। বাকিরা যারা না পান আজকে বা কালকে সকালে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করব। প্রায় সবগুলো সমস্যাই সমাধান হয়ে গেছে।
অসন্তোষ থাকা পোশাক কারখানার শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধে সরকারের দেওয়া টাকা আটকে রেখেছে বেসরকারি প্রিমিয়ার ব্যাংক। এই টাকা পরিশোধ না করলে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কাজ করছেন ধরে নিয়ে ব্যাংটির ব্যবস্থাপনা পরিচালককে (এমডি) শাস্তির মুখে পড়তে হবে বলে জানিয়েছেন শ্রম উপদেষ্টা।
প্রিমিয়ার ব্যাংকের এমডির উদ্দেশ্য উপদেষ্টা বলেন, এই টাকাটা আপনাকে ছাড় করতে হবে। আপনি যদি টাকা ছাড় না করেন, আপনি এর দায়-দায়িত্ব নেবেন। ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত হবেন। এখন লোন অ্যাডজাস্টের কোনো সুযোগ নেই। এই টাকাটা আমরা সরকারিভাবে বের করে দিয়েছি। টাকা লোন দিয়েছেন তখন মনে ছিল না, এই টাকা শ্রমিকদের টাকা।
তিনি আরও বলেন, শ্রমিকদের কাছেই টাকা দেবেন, যদি টাকা না দেন আপনিও আছেন আমিও আছি। যদি বেঁচে থাকি ব্যাংক, শাখা, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ম্যানেজারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।
শিখরের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ব্যবস্থা
শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ না করে বিদেশে পালিয়ে যাওয়া আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শিখরের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান শ্রম উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, রোয়ার ফ্যাশন নামক প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে তাদের শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধের জন্য এক কোটি ২৩ লাখ ৩৫ হাজার ৫৩৪ টাকা দেওয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির মালিক (সাইফুজ্জামান শিখর) পলাতক আছে। তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করা হচ্ছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে। ইন্টারপোলের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তিনি বলেন, আমি পলাতক মালিকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করার পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সচিবকে বলেছি। যদি সে দেশে না থাকে, ক্রিমিনাল অফেন্সের জন্য ইন্টারপোলের মাধ্যমে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করতে হবে। ইতিমধ্যে এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বলা হয়েছে।