৩৯ শতাংশ ভোটার মনে করেন বিএনপি সরকার গঠন করবে: জরিপ

নতুন প্রকাশিত এক জরিপে দেখা গেছে, ৩৯.১ শতাংশ ভোটার মনে করছেন, আগামী সরকার গঠনের জন্য বিএনপি সবচেয়ে যোগ্য দল।
জরিপে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে জামায়াতে ইসলামী। ২৮.১ শতাংশ ভোটার মনে করেন, আগামী সরকার গঠনের জন্য দলটি যোগ্য।
জরিপে আওয়ামী লীগকে সমর্থন দিয়েছেন ১৭.৭ শতাংশ ভোটার। এছাড়া, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এসসিপি) পেয়েছে ৪.৯ শতাংশ সমর্থন এবং অন্যান্য দলের জন্য রয়েছে ১০.২ শতাংশ সমর্থন। জরিপ অনুযায়ী, এনসিপির ভোটার বা সমর্থন কমলেও আওয়ামী লীগের প্রতি জনগণের সমর্থন বেড়েছে।
আজ বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ ন্যাশনাল আর্কাইভস অডিটোরিয়ামে এক সংবাদ সম্মেলনে বেসরকারি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ইনোভেশন কনসাল্টিং পরিচালিত 'পিপলস ইলেকশন সার্ভে রাউন্ড ২–পার্ট ২' জরিপের ফলাফল উপস্থাপন করা হয়। এতে সহযোগিতা করেছে ভয়েস ফর রিফর্ম ও বাংলাদেশ রিসার্চ এনালাইসিস এন্ড ইনফরমেশন নেটওয়ার্ক (ব্রেইন)। অনুষ্ঠানে জরিপের ফলাফল উপস্থাপন করেন ইনোভেশন কনসাল্টিং এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রুবাইয়াৎ সারওয়ার।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ এম শাহান, ভয়েস ফর রিফর্মের সহ-সমন্বয়ক ফাহিম মাশরুর, ব্রেইন-এর নির্বাহী পরিচালক শফিকুর রহমান এবং ডেইলি স্টারের সিনিয়র রিপোর্টার জাইমা ইসলাম।

জরিপে ১০ হাজার ৪১৩ জন ভোটার অংশ নিয়েছেন। এর মধ্যে ৬৯.৫ শতাংশ গ্রাম এবং ৩০.৫ শতাংশ শহরের। সবাই ভোট দেওয়ার যোগ্য। নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে আটটি বিভাগ, ৬৪টি জেলা ও ৫২১টি প্রাইমারি স্যাম্পলিং ইউনিট থেকে।
জরিপে দেখা গেছে, বিএনপির ভোট চলতি বছরের মার্চে ৪১.৭ শতাংশ থেকে কমে ৪১.৩০ শতাংশে নেমেছে। জামায়াতের ভোটও কমে ৩১.৬ শতাংশ থেকে ৩০.৩ শতাংশে নেমেছে। এর বিপরীতে, আওয়ামী লীগের ভোট বেড়ে ১৪ শতাংশ থেকে ১৮.৮ শতাংশে পৌঁছেছে।
এনসিপির সমর্থন ৫.১ শতাংশ থেকে কমে ৪.১ শতাংশে নেমেছে। অন্যদিকে, ইসলামী আন্দোলনের সমর্থন বেড়ে ৩.৯ শতাংশ হয়েছে। জাতীয় পার্টির সমর্থন সামান্য কমে ১ শতাংশ থেকে ০.৯ শতাংশে নেমেছে।
এছাড়া জরিপে দেখা গেছে, সিদ্ধান্তহীন ভোটারের হার মার্চের ২৯.৪ শতাংশ থেকে বেড়ে ৩২.৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
জরিপ বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপির ভোট ব্যাংক মূলত বয়স্ক প্রজন্মের ভোটারদের নিয়ে গঠিত, জামায়াতের ভোট ব্যাংক তরুণ প্রজন্মের ভোটারদের, এবং আওয়ামী লীগের ক্ষেত্রে মিশ্র চিত্র দেখা যায়। কাকে ভোট দেবেন এমন তথ্য জানিয়েছে ৫৬৭৩ জন ভোটার।
ফলাফলে দেখা গেছে, রংপুরে জামায়াতে ইসলামীর ভোট ৪৩.৪ শতাংশ, বিএনপি ৩৬.৭ শতাংশ, আওয়ামী লীগ ১.২ শতাংশ। বরিশালে আওয়ামী লীগের ভোট ৩১.৯ শতাংশ, জামায়াত ২৯.৯ শতাংশ, বিএনপি ২৮.৭ শতাংশ এবং এনসিপি ৩.৯ শতাংশ। চট্টগ্রামে বিএনপি ৪৯.৯, সিলেটে ৪৪.৭, ময়মনসিংহে ৪৫.৭, রাজশাহীতে ৪৪.৪, খুলনায় ৪৩.৩ এবং ঢাকায় ৪০.৮ শতাংশ ভোট পাবে।
জরিপের তথ্য উপস্থাপনকালে ইনোভেশন কনসাল্টিং-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রুবাইয়াৎ সারোয়ার বলেন, "গত মার্চের তুলনায় সেপ্টেম্বরে আওয়ামী লীগের ভোট ৪.৮ শতাংশ বেড়েছে, অন্য প্রায় সব দলের সমর্থন কমেছে। তবে সমর্থন বেড়েছে ইসলামী আন্দোলনের। বিএনপির ক্ষেত্রে বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে ভোটারও বেড়ে যায়, আওয়ামী লীগের ক্ষেত্রেও একই প্রবণতা। জামায়াতের ক্ষেত্রে বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে ভোট কমে। শিক্ষার হারের সঙ্গে বিএনপির ভোটার সংখ্যা বৃদ্ধি পায়, আর জামায়াতের ক্ষেত্রে শিক্ষার হার যত বেশি, ভোটার ততো বেশি।"
চলতি মাসের ২ থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ইনোভেশন কনসাল্টিং-এর পরিচালিত জরিপে আগামী নির্বাচনে জনগণ কাকে ভোট দেবে তা জানার চেষ্টা করা হয়েছে। রুবাইয়াৎ সারোয়ার জানিয়েছেন, আগের জরিপের তুলনায় এবার কাকে ভোট দেবেন সেই তথ্য জানিয়েছে বেশি সংখ্যক ভোটার।
জরিপে দেখা গেছে, বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, আওয়ামী লীগ ও ইসলামী আন্দোলনের ভোটের হার বেড়েছে। ভোটারদের বয়স ও শিক্ষার ভিত্তিতে ভোটের প্রবণতাও পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিএনপির পক্ষে ভোটের হার বেড়েছে, উল্টো জামায়াতের ক্ষেত্রে কমেছে। উচ্চশিক্ষিত ভোটারদের মধ্যে জামায়াতের পক্ষে সমর্থন বেশি, আর বিএনপির ক্ষেত্রে কম।
জরিপে যারা আওয়ামী লীগকে সবচেয়ে উপযুক্ত মনে করেন (১ হাজার ৮৪০ জন ভোটার), তাদের কাছে আওয়ামী লীগের পর দ্বিতীয় উপযুক্ত দল কোনটি প্রশ্ন করা হয়। এতে ৪৯.৫ শতাংশ (৯১১ জন) বিএনপিকে, ১৭.৯ শতাংশ (৩৩০) জামায়াতকে, ১৭.৪ শতাংশ (৩২৭) দ্বিতীয় উপযুক্ত মনে করেন। এছাড়া,, এনসিপি ৩.৪ শতাংশ (৬৩), ইসলামী আন্দোলন ১.২ শতাংশ (২৩) এবং জাতীয় পার্টি ৮.৭ শতাংশ (১৬০) পছন্দ করেছেন। বাকিরা বিভিন্ন জোটে ভোট দেবেন বলে জানিয়েছেন।
জরিপে ভারত-পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক সম্পর্কেও প্রশ্ন করা হয়। সব উত্তরদাতার মধ্যে ৭২.২ শতাংশ এবং ৬৯.০ শতাংশ মানুষ উভয় দেশের সঙ্গেই ভালো সম্পর্ক চান। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখার প্রবণতা তুলনামূলক কম। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে পাকিস্তানের সঙ্গে দূরত্ব চান ৮.০ শতাংশ, ভারতের সঙ্গে দূরত্ব চান ১৫.১ শতাংশ।
আগের জরিপে মূল্যস্ফীতি সর্বাধিক উদ্বেগের বিষয় ছিল, যা ৭১.২ শতাংশ থেকে কমে ৫৪ শতাংশে নেমে গেছে। তবে আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার উন্নতির বিষয়ে ভবিষ্যৎ সরকারের ওপর জনগণের প্রত্যাশা বেড়েছে।