নাসা গ্রুপ শ্রমিকদের বেতন না দিলে মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা: শ্রম উপদেষ্টা

নাসা গ্রুপের শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করা না হলে মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন।
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহের শ্রম ও ব্যবসায় পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির ১৩তম সভার সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ সতর্কবার্তা দেন।
সভায় উপস্থিত নাসা গ্রুপের প্রতিনিধিদের আগামী ২১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে মালিক নজরুল ইসলাম মজুমদারের কাছ থেকে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি নিয়ে সম্পদ বিক্রির ব্যবস্থা করে শ্রমিকদের চলতি মাসের বেতন-ভাতা পরিশোধের পদক্ষেপ নিতে বলা হয়।
এ সময়ের মধ্যে প্রতিষ্ঠান চালু রাখা বা বন্ধ করার সিদ্ধান্তও জানাতে হবে। অন্যথায় মালিকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং তার স্ত্রী, ছেলে ও মেয়ের পাসপোর্ট বাতিল করা হবে।
সভায় নাসা গ্রুপের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। এতে জানানো হয়, মালিকপক্ষের নামে বিপুল সম্পদের খোঁজ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে রয়েছে—
১. গুলশান-১ এ ১২ তলা বিশিষ্ট ২টি ব্যাংক ভবন।
২. ৩০০ ফিট এলাকায় ২ বিঘা ল্যান্ডস্কেপ করা জমি।
৩. জলসিঁড়ি সেক্টর-১৭ তে একটি কাঁচা মার্কেট।
৪. মালিকের মেয়ে আনিকার নামে একাধিক প্লটসহ পরিবারের সকলের নামে বিপুল সম্পদ।
৫. মেঘনা ঘাটে একটি ওয়্যারহাউজ ও পেট্রোল পাম্প।
৬. ঠাকুরগাঁওয়ে ৩০০ বিঘা জমি।
৭. শান্তা মরিয়মের পাশে প্রায় ১০ বিঘা জমি।
৮. দুবাইতে খেজুর বাগান ও রিসোর্ট।
৯. চাঁদপুরে বড় একটি মার্কেট।
১০. নিকেতনে ১০ বিঘা জমি।
১১. হাতিরঝিল প্রকল্পে দুটি বড় খেজুর ডিপো, যেখানে ১০–১২ কোটি টাকার খেজুর রয়েছে।
১২. মহাখালী ডিওএইচএস মসজিদের পাশে ১০ কাঠা জমির ওপর বাসভবন।
১৩. এক্সিম ব্যাংকে ২৪ কোটি টাকার প্রভিডেন্ট ফান্ড।
১৪. গুলশান-১ এ একটি দখলকৃত বাসা, যেখান থেকে মালিককে গ্রেফতার করা হয়েছিল।
১৫. গুলশানের ৭১ নম্বর প্লটে পারটেক্স গ্রুপ থেকে কেনা ১ বিঘা জমি।
১৬. পূর্বাচলে চেয়ারম্যান ও পরিবারের নামে ২০টি প্লট, যার মধ্যে কয়েকটি দুদক ক্রোক করেছে।
১৭. পূর্বাচলে ২.৫ বিঘার ওপর নার্সিং ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল।
১৮. জলসিঁড়ি সেক্টর-১৭ তে চেয়ারম্যানের নামে ১০০ কোটি টাকা মূল্যের মার্কেট।
১৯. জলসিঁড়ি-২ নং সেক্টরে ৮টি প্লট, যার মধ্যে ২টি কর্ণার প্লট।
২০. মসুল (জলসিঁড়ি) এলাকায় নীলা মার্কেটের সামনে পুলিশ হাউজিংয়ের বিপরীতে ৩০–৪০ বিঘা জমি।
২১. নেভির পাশে ৩০০ ফিট এলাকায় ৩০–৪০ বিঘা জমি, যার মধ্যে কিছু মর্টগেজ ও ৩০ বিঘা ভরাট জমি রয়েছে। এখানে চিড়িয়াখানা, মসজিদ ও গেস্টহাউস আছে।
২২. বিজিএমইএ'র উত্তর পাশে দিয়াবাড়ীতে ৪.৫ বিঘা জমির ওপর সুইমিং পুল, মসজিদ ও গেস্টহাউস, যার মূল্য প্রায় ৪০০ কোটি টাকা।
২৩. উত্তরা মাসকট প্লাজার পশ্চিমে ফার্নিচারের দোকান এবং সেক্টর-১৩ এ একটি প্লট।
২৪. তেজগাঁও ইন্ডাস্ট্রিয়াল এরিয়ায় মহাখালী বাসস্ট্যান্ডের পাশে ৩ বিঘা জমির ওপর নাসা হেড অফিস।
২৫. তেজগাঁও আড়ংয়ের বিপরীতে ৭ বিঘা জমি।
২৬. আড়ংয়ের পাশের গাজী গ্রুপ থেকে ক্রয়কৃত ৭ বিঘা জমি, যা মর্টগেজ দেওয়া সম্ভব।
২৭. মেঘনা ঘাটে আরও ১০ বিঘা জমি।
সভায় উপস্থিত ছিলেন অর্থ উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, বাণিজ্য উপদেষ্টা, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) আব্দুল হাফিজ, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সচিব, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব, অর্থ সচিব, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব, বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধান, বিজিএমইএ সভাপতি এবং বাংলাদেশ ব্যাংক ও শাহজালাল ইসলামি ব্যাংকের প্রতিনিধিরা।