সরকারি সংস্থার হয়রানি বন্ধ না হলে রেস্তোরাঁ বন্ধের হুমকি

অযাচিতভাবে সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের হয়রানি ও চাঁদাবাজি বন্ধ না হলে সারাদেশে রেস্তোরা বন্ধের হুমকি দিয়েছে বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি।
বেইলি রোডের রেস্তোরাঁয় আগুনের ঘটনার পর মালিকদের কাছ থেকে সরকারি বিভিন্ন সংস্থা থেকে নানান ধরনের হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মহাসচিব ইমরান হাসান। এসব হুমকি-ধামকি দিয়ে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। চাঁদা না দিলে প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে বলেও দাবি করেন তিনি।
সোমবার (১৮ মার্চ) রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
এর আগে লিখিত বক্তব্যে ইমরান হাসান বলেন, রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষার্থে আগামী ২০ মার্চ (বুধবার) মানববন্ধন করার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হবে। এরপরও সমস্যার সমাধান না হলে প্রতীকী হিসেবে এক দিনের জন্য সারাদেশে সব রেস্তোরাঁ বন্ধ রাখা হবে।
তবে প্রয়োজন হলে পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে অনির্দিষ্টকালের জন্য সব রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে জানান রেস্তোরাঁ মালিকরা।
লিখিত বক্তব্যে ইমরান হাসান আরও বলেন, "ঘুষ দিয়ে রেস্তোরাঁ লাইসেন্স নিতে বাধ্য করা হচ্ছে। রমজানের মধ্যেও শ্রমিক কর্মচারীদের গ্রেপ্তার ও রেস্তোরাঁ অভিযান বন্ধ হয়নি। এরকম নেতিবাচক প্রচার-প্রচারণার কারণে রেস্তোরাঁয় গ্রাহক আসাও কমে গেছে।"
ইমরান হাসান বলেন, "সরকারি বিধি অনুযায়ী কোনো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ করতে হলে কমপক্ষে ৬ মাস আগে নোটিশ দিতে হয়। বিনা নোটিশে এভাবে ভাঙচুর করে, বন্ধ করে দিচ্ছে রেস্তোরাঁ।"
"রাজউকের এফ-১ ও এফ-২–এর নামে যে নৈরাজ্য চলছে, তা কোনোভাবেই কাম্য না। আমরা জানি, কমার্শিয়াল স্পেসে রেস্তোরাঁ ব্যবসা করা যাবে। রাজউকের ২০২২-২০২৫ সাল পর্যন্ত ড্যাপেও ব্যবসায়ীদের ভবনের মিশ্র ব্যবহারে উৎসাহিত করা হয়েছে," যোগ করেন তিনি।
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, সরকারি পদ্ধতির জটিলতার কারণে লাইসেন্স নেওয়া সময়সাপেক্ষ ও জটিল বিষয়। লাইসেন্স গ্রহণের প্রক্রিয়া জটিল করে অসাধু উপায়ে নিতে বাধ্য করা হয়। দেশের সব রেস্তোরাঁ সেবাকে একটি সংস্থার অধীনে এনে লাইসেন্স প্রদান করার দাবি জানায় বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি। লাইসেন্স করতে হলে এমন কিছু নথি চাওয়া হয়, যা বাস্তবসম্মত নয় বা প্রদান করাও সম্ভব নয় বলে উল্লেখ করেন তারা।
এক প্রশ্নের জবাবে ইমরান হাসান বলেন, "সন্ত্রাসী কায়দায় রেস্তোরাঁগুলো সিলগালা করে দিচ্ছে। কেন সিলগালা করছে তার জন্য কোনো কাগজপত্রও দেওয়া হচ্ছে না। সারাদেশে সরকারিভাবে ২০০ রেস্তোরাঁ সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে।"
ইমরান হাসান বলেন, "রেস্তোরাঁ শিল্পটি মনিটরিং করে প্রায় ১২টি সংস্থা। বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছিল দেশের সকল রেস্টুরেন্ট সেবাকে একটি সংস্থার অধীনে এনে লাইসেন্স প্রদান করতে। লাইসেন্স সহজীকরণ বলতে বুঝাচ্ছি– লাইসেন্স করতে হলে এমন কিছু ডকুমেন্ট চাওয়া হয় যা বাস্তবসম্মত নয় বা প্রদান করাও সম্ভব নয়। লাইসেন্স গ্রহণের প্রক্রিয়া জটিল করে অসাধু-উপায়ে ম্যানেজ করার জন্য বাধ্য করা হয়।"
ভবন মালিক, রেস্তোরা মালিক, সরকারি সংস্থাগুলো একসাথে কাজ করতে পারলেই এই সেক্টরটি সঠিকভাবে সুনির্দিষ্ট কমপ্লায়ান্সের মাধ্যমে পরিচালনা করা সম্ভব বলে জানান ইমরান।
তিনি বলেন, "এখন সময় এসেছে রোস্তোরাঁগুলোয় হয়রানি বন্ধ করে বন্ধকৃত রেস্তোরা এখনই খুলে দেওয়া। কেননা রেস্তোরাঁ শিল্প সমূহে কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদেরকে আসন্ন পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর এর পূর্বে চলমান মাসের বেতন-ভাতাদি ও বোনাস দিতে হবে। রেস্তোরাঁ যদি বন্ধ থাকে তাহলে রেস্তোরাঁর মালিক কীভাবে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদেরকে বেতন ভাতাদি ও বোনাস প্রদান করবে?"
আইনি নোটিশ, গ্রেপ্তার ও প্রতিষ্ঠান বন্ধের মাধ্যমে রেস্তোরাঁ সেক্টরে যে অবিচার/জুলুম চলছে, তা অবিলম্বে বন্ধের দাবি জানান তিনি।
রেস্তোরাঁ বন্ধ কোনো সমাধান নয় জানিয়ে ইমরান হাসান বলেন, "স্থায়ী সমাধানের জন্য একটি উচ্চ পর্যায়ের টাস্ক ফোর্স গঠন করা যেতে পারে। দেশের রেস্টুরেন্ট খাতের বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানকে রক্ষা করুন। নিরাপদ খাদ্য সরবরাহ করতে পরামর্শ দিন। সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিন। রমজান মাসে সিলগালা নাটক বন্ধ করুন। সরকারি সকল সংস্থার নিজ নিজ দায়িত্ব পালনে অবহেলার জন্য ব্যাবসায়ীরা দায়ী নয়।"
অভিযান বন্ধ না হলে রেস্তোরাঁ বন্ধ করার হুমকি দিয়ে সংগঠনের মহাসচিব বলেন, "বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষার্থে, জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে আগামী বুধবারে 'মানববন্ধন ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি' প্রদান করবে। অতঃপর ধারাবাহিকভাবে প্রতীকী হিসেবে ১ দিনের জন্য সারাবাংলাদেশে রেস্তোরাঁ সমূহ বন্ধের কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে, প্রয়োজন হলে পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে অ-নির্দিষ্ট কালের জন্য সকল রেস্তোরাঁ সমূহ বন্ধ করে দেওয়া হবে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো এর তথ্য অনুযায়ী, সারাদেশে রেস্তোরাঁ রয়েছে ৪ লাখ ৮১ হাজারের বেশি। এই সেক্টরে কর্মরত রয়েছেন ৩০ লাখ শ্রমিক-কর্মকর্তা-কর্মচারী। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ২ কোটি মানুষ এই সেক্টরের ওপর নির্ভরশীল।