জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের অর্ধেক পোশাক শ্রমিক: গবেষণা

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে অতিরিক্ত তাপ, খরা, বন্যা, সাইক্লোন এবং বৃষ্টিপাতের ফলে সৃষ্ট জলাবদ্ধতার কারণে দেশের অর্ধেক পোশাক শ্রমিক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংগঠন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ লেবার স্টাডিজ (বিআইএলএস)-এর এক গবেষণায় উঠে এসেছে এ তথ্য।
এরমধ্যে কারখানায় অনুপস্থিতি, শ্রমিকের কর্মক্ষমতা ও উৎপাদনক্ষমতা কমে যাওয়া, আয় কমে যাওয়ার মতো বিষয়গুলোও রয়েছে। বুধবার (৬ মার্চ) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।
বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড়, ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়া এবং কীটপতঙ্গের আক্রমণসহ অন্যান্য জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে প্রায় ৩৬ শতাংশ শ্রমিক মাইগ্রেটেড বা নিজের বাসস্থান ছেড়েছেন বলে জানা গেছে।
রাজধানীর অদূরে গাজীপুরের ১৬০টি তৈরি পোশাক কারখানার ৪০২ জন শ্রমিকের ওপর জরিপ চালিয়ে গবেষণা প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়।
প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, পরিবেশ ও জলবায়ু বিষয়ে যেসব সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাজ করার কথা, সে দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন হচ্ছে না। অন্যদিকে, আলোচ্য বিষয়ে কোনো নীতি নির্ধারণ কিংবা বাস্তবায়ন পর্যায়েও শ্রমিকের অংশগ্রহণ খুবই কম।
গবেষণা সংস্থা চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী এম জাকির হোসেন খান বলেন,"পশ্চিমা বায়াররা কি পরিবেশের ওপর ক্ষতিকারক প্রভাবের জন্য কোনো মূল্য পরিশোধ করছে? তারা কেবল পণ্যের দাম দিচ্ছে। কিন্তু এখন সময় এসেছে, পরিবেশের ওপর প্রভাবের জন্য মূল্য পরিশোধ করার।"
তিনি বলেন, "এরজন্য প্রতিটি শার্টে তাদের এক ডলার করে দিতে হবে।"
এছাড়া, উৎপাদনের সঙ্গে জড়িতদের (মূলত শ্রমিক) স্বাস্থ্য বীমার আওতায় আনারও আহ্বান জানান তিনি।
প্রতিবেদন উন্মোচন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ, অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ইনস্টিটিউটের সচিব আবুল কালাম আজাদ। এ সময় শ্রমিক প্রতিনিধি, পোশাক কারখানার মালিক ও অর্থনীতিবিদরা উপস্থিত ছিলেন।
আবুল কালাম আজাদ বলেন, "জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য আমরা দায়ী ছিলাম না; কিন্তু বাংলাদেশ, বাংলাদেশের সাধারণ জনগণ ও শ্রমিক এর ভুক্তভোগী।"
প্রতিবেদনটি উপস্থাপনকালে বিআইএলএস-এর ডেপুটি ডিরেক্টর মনিরুল ইসলাম বলেন, "জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ হিসেবে পাঁচটি প্যারামিটারকে বিবেচনা করা হয়। এগুলো হলো– হিট অ্যান্ড হট, ফ্লাডিং (বন্যা), সাইক্লোন অ্যান্ড স্ট্রম (ঘূর্ণিঝড়), রোগ-বালাই, বৃষ্টিপাত ও জলাবদ্ধতা।"
"এসব কারণে ২৩ শতাংশ শ্রমিক অনুপস্থিত থাকতে বা ছুটি নিতে বাধ্য হয়েছে, ক্যাপাসিটি লস বা উৎপাদনশীলতা বা কর্মক্ষমতা কমেছে ৭ শতাংশের, উৎপাদন কমেছে ৬ শতাংশের বেশি এবং লেস ইনকাম বা কম উপার্জনের মতো সমস্যায় পড়েছে ১৩ শতাংশের মতো শ্রমিক। সব মিলিয়ে জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৫০ শতাংশ শ্রমিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে উঠে এসেছে," যোগ করেন তিনি।
অনুষ্ঠান শেষে মনিরুল ইসলাম টিবিএসকে বলেন, "গত পাঁচ বছরে শ্রমিকরা জলবায়ু পরিবর্তনের প্যারাািমটারগুলোর কোথায় সমস্যা মোকাবেলা করেছে, তার ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।"
এতে দেখা যায়, বিশুদ্ধ ও নিরাপদ পানির প্রাপ্যতা ৭৪ শতাংশ থেকে প্রায় ২০ শতাংশ কমে গেছে। একইভাবে পানির দূষণ বেড়েছে চারগুণ।
৪৭ শতাংশ মনে করছেন, পানি ও বায়ু দূষণের অন্যতম কারণ হলো জলবায়ু পরিবর্তন।
প্রতিবেদনে উঠে এসেছে বছরের আট মাস সময় উচ্চ থেকে অতি উচ্চমাত্রার গরম থাকে। গাজীপুর এলাকার একজন শ্রমিকের বক্তব্য তুলে ধরে বলা হয়, "ঘর এত গরম হয়ে যায় যে এতে শিশুরাও অসুস্থ হয়ে পড়ে।"
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পোশাক কারখানায় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও কেমিক্যালের ব্যবহার ৩৮ শতাংশ বেড়েছে। আর কারখানার ৬৫ শতাংশ লিকুইড ওয়েস্ট ড্রেনের মাধ্যমে ডিসচার্জ করা হচ্ছে। ট্রিটমেন্ট প্লান্ট ব্যবহার করছে মাত্র ৮ শতাংশ কারখানা।
দূষণ রোধে সরকারি প্রতিষ্ঠান, কারখানা মালিক কিংবা কমিউনিটি ভিত্তিক উদ্যোগ কার্যকর নয় বলে মনে করেন ৫৫ শতাংশ শ্রমিক।
শ্রম মন্ত্রণালয়ের অধীন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক বিশ্বজিৎ রায় বলেন, "শ্রমিকের অধিকারের বিষয়টি নিয়েই আমাদের বেশি ব্যস্ত থাকতে হয়। তবে ক্লাইমেট চেঞ্জ এর কারণে যে কর্মক্ষমতা নষ্ট হচ্ছে, তা এখন বিবেচনায় নেওয়ার সময় এসেছে।"