শিশু আদালতে থাকবে সুসজ্জিত সংবেদনশীল কক্ষ, টেলিভিশন ও বইয়ের ব্যবস্থা

কোনো শিশুর বিরুদ্ধে মামলার বিচার চলাকালে বা শুনানির জন্য অপেক্ষাকালে আদালতের পৃথক অপেক্ষা কক্ষে বসে এখন থেকে তারা বই পড়ার সুযোগ পাবে। একইসাথে থাকবে টেলিভিশনের বড় পর্দায় শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান উপভোগেরও সুযোগ।
আইন মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়নাধীন 'স্ট্রেনদেনিং ক্যাপাসিটি অব জুডিসিয়াল সিস্টেম ফর চাইল্ড প্রোটেকশন ইন বাংলাদেশ' শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় এই উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। দেশের নয়টি জেলায় ১০ টি আদালতে এই 'শিশু সংবেদনশীল আদালত কক্ষ' তৈরিতে অর্থায়ন করেছে ইউনিসেফ বাংলাদেশ।
শিশু আইন-২০১৩ অনুযায়ী প্রতিটি জেলায় আইনের সাথে সংঘাতে জড়িত শিশুদের বিচার করার জন্য পৃথক আদালত রয়েছে। যেখানে শিশু বান্ধব পরিবেশ বাস্তবায়নের কথা আইন বলা হয়েছে। আইনে অনূর্ধ্ব ১৮ (আঠারো) বছর বয়স পর্যন্ত সকল ব্যক্তি শিশু হিসাবে গণ্য হবে।
চট্টগ্রাম, রংপুর, খুলনা, বরিশাল, বরগুনা, জামালপুর, হবিগঞ্জ ও কক্সবাজার জেলায় একটি করে এবং রাজশাহী জেলায় দুইটি শিশু আদালতের কক্ষ সংস্কার করে শিশু সংবেদনশীল আদালত কক্ষ তৈরি করেছে ইউনিসেফ। যাতে ব্যয় হয়েছে ৩ কোটি ২৭ লাখ টাকা।

গতকাল (বৃহস্পতিবার) রাজধানীর বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে শিশু সংবেদনশীল আদালত কক্ষ এর উদ্বোধন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, এসব আদালতে একটি করে অপেক্ষা কক্ষ, প্রবেশন অফিসারের কক্ষ এবং শিশুদের জন্য পৃথক আদালত কক্ষ রয়েছে। অপেক্ষা কক্ষে শিশুদের জন্য সুপেয় পানি সরবরাহ এবং পৃথক টয়লেটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। শিশুদের পাঠ উপযোগী বই সংরক্ষণের ব্যবস্থা আছে অপেক্ষা কক্ষে। এছাড়াও শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান উপভোগ করার জন্য বড় পর্দার টেলিভিশন স্থাপন করা হয়েছে।
ইউনসেফের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে শিশুদের বিচার কাজ পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য প্রযুক্তি স্থাপন করা হয়েছে এসব আদালতে।
একইসাথে গাজীপুর ও যশোর জেলায় অবস্থিত তিনটি কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে প্রাক-বিচার ও বিচারাধীন মামলায় আটক থাকা শিশু এবং আদালতের আদেশে সারাদেশের ছয়টি সেফ হোমে অবস্থান করা শিশুদের বিরুদ্ধে মামলার বিচারের জন্য ধার্য তারিখে ভার্চুয়াল বিচার পদ্ধতির জন্য তথ্য প্রযুক্তি স্থাপন করেছে ইউনিসেফ।

অনুষ্ঠানে ইউনিসেফ বাংলাদেশের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ শেলডন ইয়েট বলেন, "ইউনিসেফ সুরক্ষা ও পরিচর্যার প্রয়োজন রয়েছে এমন সকল শিশুর ক্ষেত্রে অপ্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থার প্রয়োগে বিশ্বাস করে।"
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, "নতুন সংস্কারকৃত শিশু আদালতসমূহ যাতে সেখানে আসা শিশুর যত্ন, পরিচর্যা, সুরক্ষা, অংশগ্রহণ, তাদের মতামত গ্রহণসহ সকল প্রকার শিশু অধিকার নিশ্চিত করতে পারে, সে লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সকলকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। তবে অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব।"
আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারওয়ারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন আইন মন্ত্রণালয়ের 'স্ট্রেনদেনিং ক্যাপাসিটি অব জুডিসিয়াল সিস্টেম ফর চাইল্ড প্রোটেকশন ইন বাংলাদেশ' শীর্ষক প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক শেখ হুমায়ুন কবীর।