বগুড়া ২: জিন্নাহর জমি বেড়েছে ১২০০ গুণ, কোটিপতি হয়েছেন স্ত্রী

বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ) আসনের জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ। গত পাঁচ বছরে তার কৃষি জমি বেড়েছে এক হাজার ২০০ গুণ। একই সময়ে তার মোট সম্পদের পরিমাণ পাঁচ গুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে পাঁচ কোটি ২৯ লাখ টাকা। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামা বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য জানা গেছে।
পাঁচ বছর আগেও জিন্নাহর নামে অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠেছিল। ওই সময় গণমাধ্যমে তাকে নিয়ে একাধিক সংবাদও প্রচার-প্রকাশ হয়। ২০২১ সালে দুর্নীতি দমন কমিশনে মামলাও হয়েছিল তার বিরুদ্ধে।
এ মামলায় এক কোটি ৫৯ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং ৮৯ লাখ টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয়েছিল। মামলাটি এখনো নিষ্পত্তি হয়নি। এরপরও থেমে যাননি এই সংসদ সদস্য। বরং তার সম্পদ অর্জন আরো গতি পেয়েছে।
কেবল জিন্নাহরই যে সম্পদ বেড়েছে তা নয়, এই সময়ে ফুলে ফেঁপে উঠেছে তার স্ত্রী মহসিনা আক্তারের সম্পদও। পাঁচ বছর আগে তেমন কোনো সম্পদ না থাকলেও স্বামীর বদৌলতে তারও আঙুল ফুলে কলাগাছ। তেমন কিছুই না থাকা এ নারী বনে গেছেন কোটিপতি।
২০১৪ সালের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য হন জিন্নাহ। ২০১৮ সালেও একই আসনে জাতীয় পার্টির হয়ে সংসদ সদস্য হন তিনি। এবারের হলফনামায় তিনি নিজেকে ইট প্রস্তুতকারক হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
১০ বছর আগে এই সংসদ সদস্যের কৃষিখাত থেকে বার্ষিক আয় ছিল মাত্র দুই হাজার টাকা। এর পাঁচ বছর পরও এই খাতে তার আয় অপরিবর্তিতই ছিল। তবে আসন্ন সংসদ নির্বাচনের হলফনামা বলছে, এই খাতে জিন্নাহর বার্ষিক আয় এখন দুই লাখ ৬১ হাজার টাকা।
বাড়ি কিংবা দোকান ভাড়া থেকে আয়েও ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে তার। পাঁচ বছর আগে এই খাতে বার্ষিক আয় ছিল এক হাজার ৮০০ টাকা। বর্তমানে এ আয় দাঁড়িয়েছে চার লাখ ২০ হাজার টাকা।
পাঁচ বছর আগে জিন্নাহ উপর নির্ভরশীলদের কৃষি কিংবা বাড়ি ভাড়া থেকে কোনো আয় ছিল না। সংসদ সদস্য হয়ে গত পাঁচ বছরে তাদের আর্থিক অবস্থাও পরিবর্তন করেছেন তিনি। তারা এখন বছরে কৃষি ও বাড়িভাড়া থেকে ৭৫ হাজার টাকা আয় করেন।
দশ বছর আগে ব্যবসায়ীক খাতে জিন্নাহর আয় ছিল তিন লাখ ১৫ হাজার টাকা। গত পাঁচ বছরে তার এই আয় দ্বিগুণ বেড়ে ছয় লাখ ৩০ হাজার টাকায় দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়াও এ খাতে তার উপর নির্ভরশীলদের আয় ১৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
এবারের হলফনামায় জিন্নাহ নগদ ৯৭ লাখ ৯৩ হাজার টাকা থাকার কথা উল্লেখ করেছেন।
জিন্নাহর স্ত্রীর কাছে রয়েছে নগদ এক কোটি ২৫ লাখ টাকা। পাঁচ বছর আগে যা ছিল মাত্র দেড় লাখ টাকা। আর তার ওপর নির্ভরশীলদের নামে দেখানো হয়েছে ৯৩ লাখ ৫৫ হাজার টাকা।
দশ বছর আগে স্ত্রীর ব্যাংক হিসাবে এক লাখ ৫০ হাজার টাকা থাকলেও জিন্নাহর নামে কিছুই ছিল না। পাঁচ বছরের ব্যবধানে জিন্নাহর ব্যাংকে জমা হয় ৫০ লাখ ৬২ হাজার টাকা। এর পাঁচ বছর পর এখন এ অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২২ লাখ ৪ হাজার টাকা।
দশ বছর আগে জিন্নাহর ৭৭ হাজার টাকার একটি মোটরসাইকেল ছিল। সে সময় স্ত্রীর নামে পাঁচ লাখ টাকার একটি মোটরগাড়ি রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। পরে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ওই মোটরসাইকেলের পাশাপাশি ৩৬ লাখ ৭৪ হাজার টাকার একটি ল্যান্ড ক্রুজার গাড়ি থাকার কথা বলা হয়। তবে তার স্ত্রীর নামে কিছুই ছিল না।
এবারের হলফনামায় জিন্নাহর নামে এক কোটি এক লাখ টাকার একটি টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার এবং তার স্ত্রীর নামে ১৫ লাখ ২৫ হাজার টাকার একটি ট্রাকের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
বগুড়া-২ আসনের এমপির ৩০ তোলা স্বর্ণ রয়েছে। স্ত্রীর আছে ৪০ তোলা। জিন্নাহর নামে কোনো ইলেকট্রনিক সামগ্রী নেই। তবে ৮০ হাজার টাকার আসবাবপত্র আছে। এই দুই খাতে মোট ২ লাখ টাকার সম্পত্তি রয়েছে তার স্ত্রীর নামে। গত দশ বছরে তার স্ত্রীর নামে এই সম্পত্তিগুলো বেড়েছে।
পাঁচ বছর আগে হলফনামায় জিন্নাহ উল্লেখ করেছিলেন তার একটি পিস্তল ও মিনি রাইফেল আছে। কিন্তু এবার তিনি তার দুটি আগ্নেয়াস্ত্রের কথা উল্লেখ করেননি।