কুমিরভরা জলাভূমিতে ৩৬ ঘণ্টা, পাঁচজনকে জীবিত উদ্ধার

অ্যালিগেটর প্রজাতির কুমিরে ভরা আমাজন বনের এক জলাভূমি। বিপদসংকুল সে জলায়- প্রাণ থাকতে কেউ অবস্থান হয়তো করতেও চাইবেন না। কিন্তু, কথায় আছে— 'কপালের লিখন, না যায় খণ্ডন'। তাই যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ছোট একটি বিমানকে জরুরি অবতরণ করতে হয় সেই জলাতেই। চারিদিকে ক্ষুধার্ত ও হিংস্র কুমিরের দল, এমন অবস্থায় বিমানটির ওপরই অবস্থান করতে হয় বিপন্ন যাত্রীদের। খবর বিবিসির
তবে ভাগ্যক্রমে এযাত্রা প্রাণে বেঁচে গেছেন সবাই। বৃহস্পতিবার রাডার থেকে অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার ৪৮ ঘণ্টা পর বিমানটি খুঁজে পান স্থানীয় জেলেরা। বলিভিয়ার আমাজোনাস অঞ্চলের ইটানোমাস নদীর কাছে জলাভূমিতে পড়ে ছিল বিমানটি।
শুক্রবার বলিভিয়ার স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানান, জরুরি অবতরণের পর ৩৬ ঘণ্টা ধরে কুমিরে ভর্তি এলাকায় আটকে থাকার পর পাঁচ যাত্রীকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে।
উদ্ধার হওয়া পাঁচজনের মধ্যে ছিলেন তিনজন নারী, একজন শিশু এবং ২৯ বছর বয়সী পাইলট। বেনি বিভাগের জরুরি অপারেশন কেন্দ্রের পরিচালক উইলসন অ্যাভিলা জানান, "উদ্ধারকৃতদের শারীরিক অবস্থা খুবই ভাল আছে।"
বিমানটির পাইলট আন্দ্রেস ভেলার্দে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে জানান, ফ্লাইটটি বাউরেস থেকে ট্রিনিদাদ শহরে যাওয়ার কথা ছিল, পথিমধ্যে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে তিনি জরুরি অবতরণ করতে বাধ্য হন।
তিনি বলেন, "বিমানটি হঠাৎ উচ্চতা হারাতে শুরু করে এবং আমি একটি জলাভূমিতে অবতরণ করি। আমাদের চারপাশে কুমির ঘিরে ফেলেছিল, মাত্র তিন মিটার দূরেই ছিল ওরা।"
ভেলার্দে আরও জানান, বিমান থেকে পড়া পেট্রোলের গন্ধ হয়তো প্রাণীগুলোকে দূরে রেখেছিল। তারা পানিতে একটি অ্যানাকোন্ডাও (পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সাপ) দেখতে পান।
উদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত যাত্রীরা এক যাত্রীর সঙ্গে থাকা স্থানীয় কাসাভা ময়দা খেয়ে বেঁচে ছিলেন। তবে পানির অভাবে তাদের তৃষ্ণায় ভুগতে হয়েছে।
"আমরা পানি খেতে পারিনি এবং কোথাও যেতে পারিনি, কারণ চারপাশে কুমির ছিল," বলেন পাইলট ভেলার্দে।
জেলেরা বিমানটি খুঁজে পাওয়ার পর হেলিকপ্টার পাঠিয়ে তাদের উদ্ধারের পর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
বেনি অঞ্চলের স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক রুবেন তোরেস বলেন, "বিমানটি নিখোঁজ হওয়ার পর নানা ধরনের গুজব ও তত্ত্ব ছড়িয়ে পড়েছিল। আমি খুব খুশি যে, শেষপর্যন্ত সব সংস্থা একসঙ্গে কাজ করে নিখোঁজদের খুঁজে পেয়েছে এবং প্রাণরক্ষা করতে পেরেছে।"