উদ্বোধনের ১ বছর পর পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালে প্রথম সরাসরি আমদানি জাহাজ ভিড়ল

২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের প্রায় এক বছর পর চট্টগ্রামের পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালে বুধবার প্রথমবারের মতো সরাসরি একটি আমদানি পণ্যবাহী জাহাজ ভিড়েছে।
আন্তর্জাতিক জাহাজ পরিবহন কোম্পানি মায়ের্স্ক লাইনের সিঙ্গাপুর পতাকাবাহী জাহাজ 'এমভি মায়ের্স্ক চট্টগ্রাম' এদিন দুপুর ২টার দিকে পতেঙ্গা কনটেইনারে টার্মিনাল-১-এ ভিড়ে। জাহাজটি মালয়েশিয়ার পোর্ট ক্লাং থেকে ১ হাজার ৭১২টি কনটেইনারে (২০ ফুট মাপের) আমদানি পণ্য নিয়ে এসেছে। ৩ জুলাই এটি ১ হাজার ৬০০ কনটেইনারে রপ্তানি পণ্য নিয়ে ফের যাত্রা করবে।
চট্টগ্রাম বন্দর সেক্রেটারি মো. ওমর ফারুক জানান, মূলত বিভিন্ন অনুমোদন, কাস্টমস স্থাপন ও প্রযুক্তিগত সংযোগ সম্পন্ন না হওয়ায় পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালে সরাসরি আমদানি জাহাজ ভিড়তে দেরি হয়।
৩২ একর জায়গায় নির্মিত এই টার্মিনাল চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের নিজস্ব ১ হাজার ২৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি হয়েছে। এতে তিনটি কনটেইনার জেটি ও একটি তেলবাহী জাহাজের জন্য 'ডলফিন' জেটি রয়েছে। ফলে একসঙ্গে তিনটি কনটেইনার জাহাজ ও একটি অয়েল ট্যাংকার ভিড়তে পারে।
প্রতিবছর ৪ লাখ ৫০ হাজার কনটেইনার (টিইইউ) সামাল দেওয়ার সক্ষমতা রয়েছে টার্মিনালটির। এতে বন্দরের অন্যান্য টার্মিনালের চাপ অনেকটা কমে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের উপসংরক্ষক ফরিদুল আলম বলেন, 'এটি প্রথম জাহাজ, যা পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালে সরাসরি এসেছে এবং এখান থেকেই যাত্রা করবে। এতে টার্মিনালে পূর্ণাঙ্গ আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমের সূচনা হলো।'
তিনি আরও জানান, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (সিপিএ) আওতাধীন এটিই প্রথম টার্মিনাল, যার পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে একটি বিদেশি কোম্পানি।
২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে সিপিএ ২২ বছরের চুক্তিতে টার্মিনালটির পরিচালনা হস্তান্তর করে সৌদি আরবভিত্তিক প্রতিষ্ঠান রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল ইন্টারন্যাশনালের (আরএসজিটিআই) কাছে। চুক্তি অনুযায়ী, প্রতিটি কনটেইনার (টিইইউ) পরিচালনার জন্য সিপিএ পায় ১৮ ডলার হ্যান্ডলিং চার্জ।
পরীক্ষামূলক কার্যক্রম থেকে পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম
এই মাইলফলকের আগে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালে দুটি পরীক্ষামূলক জাহাজের পণ্য খালাস হয়েছিল। ১৬ ফেব্রুয়ারি 'এমভি মায়ের্স্ক ভ্লাদিভস্টক' থেকে ১৬টি কনটেইনার এবং ৯ মার্চ 'এমভি মায়ের্স্ক জিয়ানমেন' থেকে ২০৮টি কনটেইনার খালাস করা হয়। তবে দুটি জাহাজই শুরুতে অন্য টার্মিনালে নোঙর করেছিল এবং পরে আংশিক পণ্য খালাসের জন্য পিসিটিতে আনা হয়।
এর বিপরীতে, 'এমভি মায়ের্স্ক চট্টগ্রাম' সরাসরি পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালে নোঙর করে এবং এখানেই পুরো পণ্য খালাস কর, টার্মিনালের ইতিহাসে এটাই প্রথম।
বন্দর সেক্রেটারি মো. ওমর ফারুক জানিয়েছেন, এর ফলে প্রথমবারের মতো কোনো কনটেইনার জাহাজ পতেঙ্গা টার্মিনালকেই পুরোপুরি নিজস্ব নোঙর ও পণ্য খালাসের গন্তব্য হিসেবে ঘোষণা করেছে।
প্রযুক্তিগত প্রস্তুতি সম্পন্ন
পূর্ণাঙ্গ আমদানি কার্যক্রম শুরুর সঙ্গে সঙ্গে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালে কাস্টমস ও লজিস্টিকস ব্যবস্থাও চালু হয়েছে বলে জানিয়েছে পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান আরএসজিটিআই।
চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের উপ-কমিশনার সাইদুল ইসলাম বলেন, 'টার্মিনালে সহকারী কমিশনার ও রাজস্ব কর্মকর্তাসহ কাস্টমস কর্মকর্তারা ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছেন। অপারেটর প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে একটি কনটেইনার স্ক্যানারও বসানো হয়েছে।'
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) গত ১৭ এপ্রিল টার্মিনালের ৩২ একর এলাকাকে সরকারি ওয়্যারহাউজিং স্টেশন হিসেবে ঘোষণা করে। এরই মধ্যে বিস্ফোরক পরিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস ও পরিবেশ অধিদপ্তরসহ ২৫টি নিয়ন্ত্রক সংস্থার ছাড়পত্রও পাওয়া গেছে।
কাস্টমস হাউস ও বন্দরের ডেলিভারি সিস্টেমের অনলাইন সংযোগও সম্পন্ন হয়েছে।
মায়ের্স্ক লাইনের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'এটি মায়ের্স্কের পক্ষ থেকে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালে ভিড়ানো প্রথম নির্দিষ্ট জাহাজ। তাদের কার্যক্রম আমরা পর্যবেক্ষণ করব। যদি সন্তোষজনক মনে হয়, তাহলে ভবিষ্যতে আরও জাহাজ পাঠানোর বিষয়ে ভাবব।'
শুল্ক ও জাহাজ চলাচল
১ এপ্রিল থেকে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালে ২০ ফুট আমদানি কনটেইনারের হ্যান্ডলিং চার্জ নির্ধারণ করা হয়েছে ১৩ হাজার ৬০৫ টাকা, আর ৪০ ফুট কনটেইনারের জন্য ১৬ হাজার ৫৬৭ টাকা।
রপ্তানি পণ্যের ক্ষেত্রে ২০ ফুট কনটেইনারে খরচ ৭ হাজার ১৮৭ টাকা এবং ৪০ ফুটে ১০ হাজার ২৫০ টাকা। খালি কনটেইনার হ্যান্ডলিং চার্জ ২০ ফুটের জন্য ২ হাজার ৭০৫ টাকা ও ৪০ ফুটের জন্য ৫ হাজার ৪১০ টাকা।
২০২৪ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে সীমিত পরিসরে চালু হওয়া এই টার্মিনালে এখন পর্যন্ত প্রায় ৪৫টি জাহাজ নোঙর করেছে। এর বেশিরভাগই মায়ের্স্ক লাইনের। আর কিছু এসেছে প্যাসিফিক ইন্টারন্যাশনাল লাইন্স থেকে। এসব জাহাজে মূলত রপ্তানি ও খালি কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে। গড়ে প্রতি মাসে পাঁচটি জাহাজ ভিড়েছে টার্মিনালে।