যুক্তরাজ্যে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামানের জব্দ সম্পত্তি বিক্রি করে ঋণ পরিশোধের উদ্যোগ

যুক্তরাজ্যে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর নিয়ন্ত্রণাধীন ছয়টি আবাসন কোম্পানি প্রশাসকের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। টিউলিপ সিদ্দিককে ঘিরে চলমান বহুল আলোচিত দুর্নীতি কেলেঙ্কারির প্রেক্ষাপটে তদন্ত শুরুর পর যুক্তরাজ্যে সাবেক এই মন্ত্রীর সম্পদের বিষয়টি সামনে আসে।
সাইফুজ্জামানের নামে লন্ডন ও দক্ষিণ ইংল্যান্ডে প্রায় ১৭০ মিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের ৩০০টিরও বেশি ফ্ল্যাট ও বাড়ি রয়েছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তিনি বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে বিপুল অর্থ পাচার করে এসব সম্পদ অর্জন করেছেন।
এই অভিযোগ যুক্ত হয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও পরিবারের সদস্যদের যুক্তরাজ্যে কেনা ফ্ল্যাট-বাসা নিয়ে চলমান তদন্তের সঙ্গে। শেখ হাসিনা যুক্তরাজ্যের এমপি এবং সাবেক ট্রেজারি মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিকের খালা। এ বছরের শুরুতে বাংলাদেশে দুর্নীতির কেলেঙ্কারি নিয়ে চাপ বাড়ায় টিউলিপ যুক্তরাজ্যের ট্রেজারি মন্ত্রীর পদ ছাড়েন।
বাংলাদেশে এই সপ্তাহে টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির একটি মামলা শুরু হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অভিযো, তিনি তার খালার সরকার থেকে অবৈধভাবে একটি জমি পেয়েছিলেন। তবে টিউলিপ এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
এদিকে যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (এনসিএ) সাইফুজ্জামানের সম্পদ জব্দ করার পর তার ব্যবসায় ধস নামে। জব্দকৃত সম্পদের মধ্যে ছিল উত্তর লন্ডনের সেন্ট জনস উডে ১ কোটি ১০ লাখ পাউন্ডের বিলাসবহুল বাড়ি এবং সেন্ট্রাল লন্ডনের ফিটজরোভিয়ায় একটি ফ্ল্যাট কমপ্লেক্স।
ঢাকার বর্তমান সরকারের অনুরোধে এনসিএ এই পদক্ষেপ নেয়। তবে সাইফুজ্জামান অভিযোগ অস্বীকার করে দাবি করেছেন, এটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়রানি এবং তার বিদেশি সম্পত্তি কেনা হয়েছে বৈধ অর্থে।
এখন গ্রান্ট থর্নটন নামের প্রশাসক প্রতিষ্ঠান লন্ডন ও দক্ষিণ-পূর্ব ইংল্যান্ডে ভাড়া দেওয়ার জন্য নির্মিত বেশিরভাগ অ্যাপার্টমেন্ট ভবনসহ তার বিপুল সম্পদ বিক্রির দায়িত্ব নিয়েছে।
বিক্রির অর্থ দিয়ে ঋণ শোধ করা হবে। ঋণদাতাদের মধ্যে রয়েছে সিঙ্গাপুরভিত্তিক ডিবিএস ব্যাংক ও ব্রিটিশ অ্যারাব কমার্শিয়াল ব্যাংক।
ব্রিটেনের কোম্পানিজ হাউসে জমা দেওয়া নথি থেকে আরও জানা গেছে, বাংলাদেশের ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকও সাইফুজ্জামান চৌধুরীর কাছ থেকে ৩৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আদায়ের চেষ্টা করছে।
ঘটনাটি বাংলাদেশের জটিল দুর্নীতি কেলেঙ্কারির প্রেক্ষাপটে ঘটছে। কর্মকর্তারা উদ্বিগ্ন, শেখ হাসিনার সরকারের সদস্যরা যুক্তরাজ্যে বিপুল অঙ্কের সম্পত্তি গড়ে তুলেছেন।
সাবেক মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী আগে বলেছিলেন, শেখ হাসিনা তাকে 'ছেলের মতো' দেখতেন।
বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন শেখ হাসিনার পরিবারের কয়েকজন সদস্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে তদন্ত করছে। এর মধ্যে টিউলিপ সিদ্দিকও আছেন।
টিউলিপ অভিযোগ অস্বীকার করে একে 'সম্পূর্ণ অযৌক্তিক' বলেছেন। দ্য গার্ডিয়ানকে তিনি জানান, তিনি বাংলাদেশের বিচার প্রক্রিয়ায় উপস্থিত হওয়ার কোনো পরিকল্পনা করছেন না।
তিনি বলেন, 'আমি এখনও জানি না, আমার বিরুদ্ধে অভিযোগটা কী। মনে হচ্ছে আমি এক ধরনের কাফকার দুঃস্বপ্নে আটকা পড়েছি—যেখানে আমাকে বিচারের মুখোমুখি করা হয়েছে, অথচ আমি সত্যিই জানি না অভিযোগ কী এবং বিচারটি আসলে কী নিয়ে।'
গত সপ্তাহে বাংলাদেশের দুই আদালত যে ২৭ জনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করেছে, টিউলিপ সিদ্দিক তাদের একজন। এ তালিকায় রয়েছেন তার খালা শেখ হাসিনাও, যিনি বর্তমানে ভারতে নির্বাসিত অবস্থায় আছেন।