ট্রাম্পবিরোধী হাওয়ায় ভর করে আবার ক্ষমতায় আলবানিজ
শনিবার (৩ মে) অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত নির্বাচনে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন অ্যান্থনি আলবানিজ।
রক্ষণশীলদের একসময়কার উত্থানের প্রেক্ষাপটে অনেকেই তার এই জয়কে 'নাটকীয় প্রত্যাবর্তন' হিসেবে দেখছেন। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রভাব নিয়ে ভোটারদের উদ্বেগ নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
রক্ষণশীল লিবারেল পার্টির নেতা পিটার ডাটন পরাজয় মেনে নিয়েছেন এবং নিজের আসনটিও হারিয়েছেন। তার এ পরাজয়কে কেউ কেউ কানাডার রক্ষণশীলদের সাম্প্রতিক পরাজয়ের সঙ্গে তুলনা করছেন, যেখানে ট্রাম্পের রাজনৈতিক প্রভাবকেই অন্যতম কারণ হিসেবে দেখা হয়েছিল।
বিজয় ঘোষণার পর সিডনিতে লেবার দলের নির্বাচনি কার্যালয়ে উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েন কর্মী ও সমর্থকেরা। একে অপরকে জড়িয়ে ধরে তারা বিজয় উদযাপন করেন। এ সময় আলবানিজ ঘোষণা দেন, তার দল সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে সরকার গঠন করবে।
সমর্থকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, 'আমাদের সরকার "অস্ট্রেলিয়ান ওয়ে" অনুসরণ করবে, কারণ আমরা আমাদের পরিচয় ও এ দেশ গড়ার অভিজ্ঞতা নিয়ে গর্বিত।' তিনি আরও বলেন, 'আমাদের কারও কাছ থেকে কিছু ধার করার বা অনুকরণ করার প্রয়োজন নেই। আমরা অনুপ্রেরণা খুঁজি আমাদের নিজস্ব মূল্যবোধ ও জনগণের মধ্যেই।'
গত দুই দশকে তিনিই প্রথম প্রধানমন্ত্রী যিনি একটানা দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। আলবানিজ বলেন, অস্ট্রেলিয়ার মানুষ এমন একটি আদর্শের পক্ষে রায় দিয়েছেন, যা 'প্রতিকূলতার মধ্যেও সাহস দেখানো ও দরিদ্রদের প্রতি সহানুভূতির' প্রতিচ্ছবি।
অস্ট্রেলিয়ান ইলেক্টোরাল কমিশনের ওয়েবসাইট অনুযায়ী, ভোটের ৬৮ শতাংশ গণনার পর ধারণা করা হচ্ছে, হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভস-এর ১৫০টি আসনের মধ্যে লেবার পার্টি পাবে ৮১টি, যা দলটিকে স্পষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতা দেবে।
ডাটন জানান, তিনি আলবানিজকে ফোন করে অভিনন্দন জানিয়েছেন। তিনি বলেন, 'আমরা প্রচারণায় ভালো করতে পারিনি—এটা আজ স্পষ্ট। এর সম্পূর্ণ দায়িত্ব আমি নিচ্ছি।' সাবেক এই পুলিশ কর্মকর্তা অভিবাসন ও অপরাধ দমনে কঠোর অবস্থানের জন্য পরিচিত। তিনি নিজ আসনে বিজয়ী লেবার প্রার্থীকেও অভিনন্দন জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, 'এই নির্বাচনে আমাদের প্রতিপক্ষরা আমাদের যেভাবে উপস্থাপন করেছে, তা আমাদের প্রকৃত পরিচয় নয়।' একই সঙ্গে তিনি দল পুনর্গঠনের প্রতিশ্রুতিও দেন।
ট্রাম্প প্রভাব
জনমত জরিপগুলোতে দেখা গেছে, ট্রাম্পের অস্থির নীতি ও জীবনযাত্রার ব্যয়বৃদ্ধি নিয়ে মানুষের উদ্বেগ এ নির্বাচনে ভোটারদের অন্যতম বিবেচ্য বিষয় ছিল।
নর্দান টেরিটরির লিবারেল সিনেটর জ্যাকিন্টা প্রাইস বলেন, 'যদি আপনি যথেষ্ট কাদা ছোড়েন, কিছু না কিছু তো লাগবেই।' তার একটি মন্তব্য—'অস্ট্রেলিয়াকে আবার মহান করে তুলব'—ট্রাম্পের 'মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন' স্লোগানের সঙ্গে তুলনা করেন অনেকে।
এবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রাইস বলেন, 'আপনারা সবকিছুতেই ট্রাম্পকে জড়িয়ে ফেলছেন।' উল্লেখ্য, এর আগে ডাটন বলেছিলেন, তিনি প্রাইসকে সরকারি দক্ষতাবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব দিতে চান—যা ট্রাম্প প্রশাসনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
প্রাইস আরও বলেন, 'পিটার ডাটনের পরাজয় বড় এক ধাক্কা।'
বিরোধী দল লিবারেল পার্টির মুখপাত্র সিনেটর জেমস প্যাটারসন বলেন, রক্ষণশীলদের প্রচারণা ট্রাম্প সংশ্লিষ্ট নেতিবাচক প্রভাবের শিকার হয়েছে।
তিনি এবিসিকে বলেন, 'কানাডার রক্ষণশীলদের জন্য ফলাফল ছিল বিধ্বংসী। আমার মনে হয়, এখানেও সেটিই ঘটছে। কতটা ব্যাপকভাবে এর প্রভাব পড়েছে, তা কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বোঝা যাবে।'
ভোট গণনার শুরুতেই লেবার পার্টির কোষাধ্যক্ষ জিম চালমারস বলেন, ২০২৪ সালের শেষদিকে সরকার নানা সমস্যায় ছিল। তবে আলবানিজের শক্তিশালী প্রচারণা, জীবনযাত্রার ব্যয় নিয়ে কার্যকর নীতিমালা এবং ট্রাম্পবিরোধী জনমত তাদের ফের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ফিরিয়ে আনে।
