নিরাপত্তা নিশ্চিতে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে বসানো হচ্ছে ‘প্রক্সিমিটি কার্ড সিস্টেম গেইট’

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের অপারেশন ম্যানেজারের রুমে প্রবেশ করে ডিভাইস লাগানোর চেষ্টা করছিলো ২ যুবক। নিরাপত্তারক্ষীদের হাতে ধরা পড়ার পর বেরিয়ে আসে কাস্টমসের সফটওয়্যার হ্যাক করার উদ্দেশ্যেই প্রবেশ করেছিলো তারা। গত ৪ ফেব্রুয়ারির এই ঘটনার পর চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের নিরাপত্তা ঝুঁকির বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় আসে।
এরপর বহিরাগতদের অনুপ্রবেশ বন্ধ এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে প্রবেশ নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নেয় কাস্টম কর্তৃপক্ষ। এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে আগামী নভেম্বরে কাস্টমসের চারটি গেইটে বসানো হচ্ছে 'প্রক্সিমিটি কার্ড সিস্টেম গেইট' যাতে ব্যয় হবে প্রায় ২০ লাখ টাকা।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের প্রবেশ মুখে এই ডিজিটাল গেইট বসানো হলে কাস্টমসের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। অনুমোদনহীন ব্যক্তিরা কাস্টম হাউসে প্রবেশ করতে পারবে না। এতে কাস্টমস কর্মকর্তারা স্বাচ্ছন্দে দাপ্তরিক কাজ করতে পারবে। কাজের পরিবেশ ভালো হবে। সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের অর্থায়নে বসানো হচ্ছে এই ডিজিটাল গেইট।
গত ১৭ অক্টোবর চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস এক বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করে, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাস্টম হাউসে প্রবেশে প্রক্সিমিটি কার্ড সিস্টেম গেইট স্থাপন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এর অংশ হিসেবে সংশ্লিষ্টদের ৩১ অক্টোবরের মধ্যে সিএন্ডএফ এজেন্ট, শিপিং এজেন্ট, ফ্রেইট ফরওয়ার্ডিং এজেন্ট, কাস্টমস সরকার (সিএন্ডএফ এজেন্ট এর কর্মচারী) সহ সকল স্টেকহোল্ডারগণকে প্রক্সিমিটি কার্ডের জন্য আবেদন করতে হবে। আগামী ১৫ নভেম্বরের পরে প্রক্সিমিটি কার্ড ছাড়া কাস্টম হাউসে প্রবেশ করা যাবে না বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের ডেপুটি কমিশনার ব্যারিস্টার মো. বদরুজ্জামান মুন্সি বলেন, এই উদ্যোগের ফলে কাস্টমস কর্মকর্তাদের আইডি পাসওয়ার্ড জালিয়াতি রোধ, সার্ভার হ্যাক করার চেষ্টা রোধ, কাস্টমসের কাজের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত হবে। তবে আইডি কার্ড নেই এমন ব্যক্তিরা কাস্টমসের ভিজিটর পাস নিয়ে প্রবেশ করতে পারবে।
ব্যারিস্টার মো. বদরুজ্জামান মুন্সি আরো বলেন, কাস্টমসের বাজেট না থাকায় সিএসআরের অংশ হিসেবে এক্সেস কন্ট্রোল মেশিন বসানোর ব্যয় নির্বাহ করবে সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশন। মেশিনের নিয়ন্ত্রণ করবে কাস্টমস।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে বছরে ৬০ হাজার কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আদায় হয়। প্রতিদিন আমদানি-রপ্তানির প্রায় সাত হাজার বিল অব এন্ট্রি, বিল অব এক্সপোর্ট দাখিল হয়। এর মধ্যে পাঁচ হাজার রপ্তানি পণ্যের বিল অব এক্সপোর্ট এবং দুই হাজার আমদানি পণ্যের বিল অব এন্ট্রি। কাস্টমসের কর্মকর্তা কর্মচারী, সিএন্ডএফ এজেন্টের মালিক এবং কর্মচারী সহ আমদানিকারক ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের লোকজন কাজের জন্য চট্টগ্রাম কাস্টমসে প্রবেশ করে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, জনবল সংকটের অজুহাতে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের প্রায় প্রতিটি শাখায় বহিরাগত লোক কাজ করে। এসব বহিরাগতরা নিজেদের কাস্টমসের কর্মকর্তা-কর্মচারী পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন শাখায় ঘুরে বেড়ায়। এরা মূলত বিভিন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারীর সহযোগী হিসেবে কাজ করে, ঘুষ লেনদেনে সহায়তা করে।
ব্যবসায়ী এবং সিএন্ডএফ এজেন্টরা বলছেন, কোন প্রতিষ্ঠানের অর্থায়নে অ্যাক্সেস কন্ট্রোল মেশিন বসছে সেটি বড় কথা নয়। বহিরাগতদের উৎপাদন বন্ধ করতে ডিজিটাল গেইট বসছে, এটিই বড় কথা। এর সুফল পাবে সবাই।
চট্টগ্রাম সিএন্ডএফ এজেন্টস এসোসিয়েশনের সেক্রেটারি কাজী মাহমুদ ইমাম বিলু বলেন, এই উদ্যোগে আমাদের ২০ লাখ টাকা ব্যয় হচ্ছে। শুধুমাত্র কার্ডধারীরা মেশিনটি ব্যবহার করে ভেতরে প্রবেশ করতে পারবেন। অ্যাক্সেস কন্ট্রোল গেইট বসলে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস, সিএন্ডএফ এজেন্ট সহ সকল স্টেকহোল্ডার উপকৃত হবে। দেশের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে।
চট্টগ্রাম সিএন্ডএফ এজেন্টস এসোসিয়েশনের প্রথম যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মোঃ গোলাম রব্বানী (রিগান) টিবিএসকে বলেন, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের নিচতলায় প্রবেশ পথে চারটি স্থানে বসানো হবে অ্যাক্সেস কন্ট্রোল গেইট। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কর্মকর্তা কর্মচারী, সিএন্ডএফ এজেন্ট মালিক এবং কর্মকর্তা-কর্মচারী, আমদানিকারক সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার প্রায় ৬ হাজার জনকে আইডি কার্ড দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।