যে বাজারে পা ফেলার জায়গা থাকে না, কিচিরমিচিরে কান পাতা দায়

কাজী স্বপন একজন নিবেদিত কবুতরপ্রেমী। কিশোর বয়স থেকেই কবুতরের প্রতি তার দুর্বলতা। বর্তমানে তার কাছে পাঁচশ থেকে সাতশটি কবুতর আছে—প্রায় সবই প্রশিক্ষিত। এর মধ্যে যেমন রেসার কবুতর আছে, তেমনি আছে শৌখিন জাতের ফ্যান্সিও। তবে স্বপনের মন কেড়েছে মূলত রেসার কবুতরগুলোই। সেগুলোকে পঞ্চগড় কিংবা টেকনাফে ছেড়ে দিলেও তারা পথ চিনে ঠিকই ফিরে আসে স্বপনের কাছে। যদিও দু-চারটে কবুতর পথ হারিয়ে ফেলে বা বাজ-পাখির আক্রমণে আর ফেরে না। কিন্তু বেশিরভাগই ফিরে আসে। কবুতরের এই টান এখনও স্বপনের মধ্যবয়স পেরিয়ে যাওয়ার পরও কাটেনি।
কবুতরের বাজার থেকে পাখির হাট
নব্বইয়ের দশকের কোনো এক সময়ে স্বপন কাজীর মনে হয়, বাড়ির ধারের রাস্তায় একটা কবুতরের বাজার বসালে কেমন হয়! ভাবনাটা তিনি ভাগ করে নেন পরিচিত আরও কয়েকজন কবুতরপ্রেমীর সঙ্গে। কিছুদিনের মধ্যেই কয়েকজনের সম্মতিতে অস্থায়ী ছোট্ট একটি বাজার বসে যায়—শুধুই কবুতরের। তখন রাস্তাঘাট ছিল খুব ভালো না, বাজারটিও ছিল অনিয়মিত। ধীরে ধীরে বাজারটি বড় হতে থাকে। কবুতরের পাশাপাশি সেখানে মোরগ-মুরগিও আসতে শুরু করে।
তখন ঢাকায় জমজমাট কবুতরের বাজার ছিল কাপ্তানবাজারে। পাখির বাজার বসত মেরাদিয়া আর টঙ্গীতেও। তবে তখন পাখি কিংবা প্রাণীর প্রতি মানুষের আগ্রহ ছিল তুলনামূলক কম। মিরপুর ১ নম্বরের এই বাজারে মাস্তান কিংবা চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম্য নেই বললেই চলে। ফলে বেচাকেনাও নির্বিঘ্ন। এই নিরবচ্ছিন্ন পরিবেশের কারণে বাজারটি দ্রুত পরিচিতি পেয়ে যায় 'পাখির হাট' হিসেবে। বর্তমানে এটি ঢাকার সবচেয়ে বড় পাখির বাজার। আর এর পেছনে বড় অবদান স্বপন কাজীর।

প্রতি শুক্রবার বসে এই হাট। সকালেই পৌঁছে যান বিক্রেতারা। নানা জাতের কবুতর, উন্নত জাতের হাঁস-মুরগি, বিদেশি টার্কি আর বিড়াল ওঠে এই হাটে। তবে সবচেয়ে বেশি থাকে খাঁচাবন্দি রঙিন পাখি। হযরত শাহ আলী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের সামনে থেকে শুরু করে প্রায় এক কিলোমিটারজুড়ে চলে এই হাট। শুধু পাখি নয়, পাখির খাবার, খেলনা আর খাঁচার দোকানও বসে সারি ধরে।
দিনের পর দিন এই হাটের জৌলুশ বেড়েছে বৈ কমেনি। সকালে শুরু হয়ে হাট চলে বিকেল পর্যন্ত। তবু থামে না বেচাকেনা। সারাদিন থাকে ক্রেতা, দর্শনার্থী আর হালের ভ্লগারদের ভিড়। কম দামি ছোট পাখির পাশাপাশি বিক্রি হয় বিদেশি, দামী সব পাখি।
দেখেও সুখ
শখের তোলা আশি টাকা। তবে সেটি যে কখনো লাখ-দু'লাখে গিয়ে ঠেকে, এ হাটে এলে বোঝা যায়। পাখির ছানা, মাস তিনেক বয়স, তার দাম না-কি দেড় লাখ!

বাজারে ঢুকতেই কান ঝালাপালা। ঢাকার কোনো রাস্তায় এত কিচিরমিচির শোনা যায় না। অজস্র পাখির হল্লা। লাভ বার্ড, কাকাতুয়া, বাজরিগার, লরিকিট বা আফ্রিকান ঘুঘু—কেউ চুপ করে বসে নেই।
ক্রেতা-বিক্রেতারাও হার মানছে ওদের কাছে। ঢাকায় এমন দৃশ্য বেশ ব্যতিক্রমী। দেড় কিলোমিটার জুড়ে মিরপুর এক নম্বরের এ বাজার। এখানে হাজারের বেশি বিক্রেতা জড়ো হন। ক্রেতা আসেন তার কয়েক গুণ বেশি। ক্রেতারা চলেও যান না সহসাই—মাছ-সবজির বাজার তো নয়! দেখার আনন্দও অনেক এখানে। বাজার শুরু হয় সকাল ৯টায়, চলে বিকাল ৫টা পর্যন্ত।
বিক্রেতাদের কেউ কেউ ভ্রাম্যমাণ, হাতে খাঁচা নিয়ে বাজারে ঘুরে বেড়ায়। তবে বেশিরভাগই বড় বড় ছাতা খুলে পরপর খাঁচা সাজিয়ে বসে থাকে। বিক্রেতাদের বেশিরভাগ সময় কাটে পাখি সম্পর্কে জ্ঞান বিতরণে—পাখির বয়স, লিঙ্গ, খাওয়া-দাওয়া, যত্ন নেওয়ার পদ্ধতি ইত্যাদি তারা ক্রেতাদের জানান। এ হাটে বগুড়া, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ ছাড়াও এখন বরিশাল, খুলনা থেকেও ক্রেতা-বিক্রেতা আসছেন।

ছোট পাখি, বড় পাখি
রাস্তার দু'পাশজুড়ে খাঁচাভর্তি পাখি। দেশে পোষা পাখির মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত 'লাভ বার্ড'। হাটে এর সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। হাটের আরও বড় অংশীদার বাজরিগার আর বিদেশি টিয়ে।
খাঁচায় পোষা এই রঙিন পাখিগুলোই হাটের প্রধান আকর্ষণ। সব জাতই প্রায় বিদেশি। লাল, সবুজ, কমলা, হলুদ, সাদা—এদের রঙ। অনেক সময় একাধিক রঙের মিশ্রণও দেখা যায় একেকটির গায়ে। বিদেশ থেকে পাখি এনে নতুন করে ব্রিড করা হয়, জন্ম নেয় নতুন রঙের পাখি। সংকরায়নের ফলে রঙ আরও বিচিত্র হয়।
পাখির দামও রঙ ও চাহিদা ভেদে ওঠানামা করে। একজোড়া ক্লাসিক বাজরিগারের দাম এ হাটে ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা। নানা জাতের ছোট ফিঞ্চ পাখিগুলো অনেকেরই প্রিয়। হাটে বিক্রিও হচ্ছে বেশ। দামও হাতের নাগালে।

তবে সবচেয়ে বেশি দাম কথা বলা পাখির। একজোড়া ময়নার দাম হাঁকা হয় প্রায় ৩০ হাজার টাকা। জাতভেদে টিয়া পাখির দাম ভিন্ন হয়। চন্দনা টিয়ার একজোড়া ছানার দাম চাওয়া হয় ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত। বিদেশি নানা জাতের টিয়া, ময়না আর ঘুঘু পাওয়া যায় এখানে। তবে এসব ছাড়িয়ে হাটের প্রধান আকর্ষণ হয়ে থাকে বড় বড় সব বিদেশি পাখি।
গ্রে প্যারট 'দ্য আইনস্টাইন'
আরিফ খানকে ভাগ্যবানই বলতে হয়। তিনি একটি গাছের ছায়ায় বসার সুযোগ পেয়েছেন। পাখি কেনা-বেচাই তার পেশা। তার সঙ্গে রয়েছে একটি আফ্রিকান গ্রে প্যারট। পাখিটির দাম লাখ টাকার নিচে হয় না। মাঝারি গড়নের পাখিটি ভালো পোষ মানে। বলা হয়ে থাকে, এটি পরিস্থিতি বুঝতে পারে এবং মালিকের আবেগ-অনুভূতি বুঝে কথা বলে। এটি শুধু ভালো কথাই বলতে পারে না, তুখোড় বুদ্ধিমানও বটে। এজন্য একে 'পাখি জগতের আইনস্টাইন' নামেও ডাকা হয়। এ পাখির আয়ুস্কাল প্রায় ত্রিশ বছর।
কারা এত দাম দিয়ে পাখি কেনে? জানতে চাইলাম আরিফ খানের কাছে। বললেন, 'শখের দাম শুধু লাখ টাকা নয়, লাখ লাখ টাকা। ঢাকায় অনেকেরই হয়তো ছাগল, গরু পোষার শখ আছে কিন্তু বাসায় জায়গা নেই, তখন পাখি বা বিড়াল তার অবলম্বন হয়ে ওঠে। সেক্ষেত্রে দাম লাখ টাকা হলেও তিনি পিছপা হন না। তাছাড়া পাখিগুলোর তো গুণাগুণও আছে কিছু। এই যে আফ্রিকান গ্রে প্যারট, পুরো সুরা ইয়াসিন মুখস্থ বলতে পারে, কয়েক হাজার শব্দ এটি মেমরিতে ধরে রাখতে পারে। তাই লাখ টাকা দাম ঠিকই আছে।'

একটি ব্লু গোল্ড ম্যাকাও পাখি নিয়ে হাটে এসেছেন মোহাম্মদ শাহিন। বয়স মাত্র ৬ মাস। দাম ছেঁকেছেন ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা! বললেন, ম্যাকাও কথা বলা পাখি, তাই দামও চড়া। কাকাতুয়ার দামও অনেকটাই বেশি। এতটাই বেশি যে, বিক্রেতা অনেক সময় দাম বলেন না—বলেন, 'দাম আলোচনা সাপেক্ষে'!
তবে বেশ কয়েকজন বিক্রেতা জানালেন, এসব দামি পাখি মূলত অনলাইনে বিক্রি হয়। দু'একটি পাখি নিয়ে তারা হাটে আসেন আলোচনায় থাকার জন্য। 'ইউটিউব চ্যানেল ধরার জন্য এই পাখিগুলো নিয়ে আসি। হাটে খুব বেশি বিক্রি হয় না। যা হবার বাসা থেকে আর অনলাইনেই হয়', বললেন আরিফ খান।
হ্যামস্টার আর কাঁটাচুয়াদের কথা
পাখি ছাড়াও এ হাটে পাওয়া যায় বেশ কিছু পোষা প্রাণী। তবে বিড়ালই বেশি। বিড়ালের জন্য আছে আলাদা একটি গলি। কিছু ভেড়া আর ছাগলও ওঠে।

বিচিত্র প্রাণীদের মধ্যে পাওয়া যায় হ্যামস্টার, হেজহগ আর খরগোশ। শজারু সদৃশ স্তন্যপায়ী প্রাণী হেজহগ। এর মুখ ছাড়া প্রায় সারা গা জুড়ে অসংখ্য কাঁটা। তবে শজারুর তুলনায় কাঁটাগুলো অনেক ছোট। এদের বাংলা নাম কাঁটাচুয়া। সাধারণত ইউরোপ, এশিয়া, আফ্রিকা ও নিউজিল্যান্ডের কিছু অংশে এদের পাওয়া যায়। অস্ট্রেলিয়া আর আমেরিকায় কাঁটাচুয়া পাওয়া যায় না।
চব্বিশ প্রজাতির হ্যামস্টারের মধ্যে সিরিয়ান হ্যামস্টার সবচেয়ে ভালো পোষ মানে। এটি টেডি বিয়ার হ্যামস্টার বা গোল্ডেন হ্যামস্টার নামেও পরিচিত। ছয় ইঞ্চির বেশি বড় হয় না এটি। সিরিয়াতেই প্রথম হ্যামস্টার আবিষ্কৃত হয়, তবে গ্রিস, রোমানিয়া, বেলজিয়াম আর উত্তর চীনেও হ্যামস্টার পাওয়া যায়। বুনো পরিবেশে তারা উষ্ণ, শুষ্ক এলাকায় থাকতে পছন্দ করে। তারা নিশাচর—দিনের বেলায় ঘুমায়। গর্ত খুঁড়ে সেখানে বাচ্চা ফোটায়, খাবারও সংরক্ষণ করে।
কিছু হ্যামস্টার খুব সামাজিক, কিছু আবার একা একা থাকতে পছন্দ করে। সিরিয়ান হ্যামস্টার যেমন একা থাকতেই আগ্রহী। স্তন্যপায়ী প্রাণী হ্যামস্টার বীজ, শস্য, বাদাম, ফল ও সবজি খেয়ে থাকে। বুনো পরিবেশে পোকা-মাকড়, ব্যাঙ, সরীসৃপও খায়। ভদ্র এবং সহজে যত্ন নেওয়া যায় বলে এটি পোষ মানাতে ভালোবাসেন অনেকে।

হাটে মাঝে মাঝে বনবিভাগের কর্মকর্তারা পরিদর্শনে আসেন। দেশি প্রাণী বা পাখি কাউকে বিক্রি করতে দেখলে তারা আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেন। তাই দেশি ময়না, শালিক বিক্রি করতে দেখা যায় না। তবে একজনকে একটি বেজি নিয়ে ঘুরতে দেখা গেল। তাকে জানালাম, এটি বিক্রি করা বৈধ নয়। তিনি বললেন, একবার ছেড়ে দিয়েছিলেন, তবে দুই দিন পর আবার ফিরে এসেছে।
কোথায় পেয়েছিলেন? জানতে চাইলে বললেন, 'আমাদের গ্রামের এক ক্ষেতে। বয়স তখন ১০-১২ দিন হবে। খুবই অসুস্থ ছিল। আমি বাসায় এনে খাইয়ে-দাইয়ে সুস্থ করে তুলি। তারপর থেকে এটি আমার সঙ্গেই আছে। আমাকে ছাড়া থাকতে পারে না। এখন টাকার কিছু টানাটানি। দুই-তিন সপ্তাহ ধরে বাজারে আনছি লুকিয়ে-চুরিয়ে, কিন্তু ক্রেতা পাই না।'
শোনা গেল, হাটে কাঠবিড়ালিও মাঝেমধ্যে বিক্রি হয়। তবে আমরা তার দেখা পাইনি।

ক্রেতাদের অনেকেই আবার বিক্রেতা
এই হাটে প্রায় নিয়মিত আসেন মার্কেন্টাইল ব্যাংকের কর্মকর্তা ফারজানা ইয়াসমীন। তার কাঁধে একটি বাচ্চা সান কনুর বসেছিল। সঙ্গে ছিলেন তার কয়েকজন বন্ধু ও ছোট ভাই। থাকেন বংশালে। সবারই পাখির সঙ্গে বেশ ভাব হয়ে গিয়েছে।
মোহাইমিন বিল্লাহ ফারহাদ যেমন প্রথম এসেছিলেন পাখির হাটে নয় মাস আগে। কিনেছিলেন দুটি লাভ বার্ড। সেই পাখি দুটি তাকে এমন মায়ায় বেঁধেছে যে এখন পাখি ছাড়া তার একটি দিনও ভালো যায় না। আজ তিনি কিনেছেন ফরপাস, তিন হাজার টাকা দিয়ে।
ফারজানা বলছিলেন, তিনি জামা-কাপড় বা সাজগোজের টাকা পাখি কিনে খরচ করেন। সান কনুর কেনার শখ ছিল বহুদিনের। আজ কিনতে পেরে খুশি লাগছে। পাখিটির বয়স মাত্র ১৫-২০ দিন। ব্রাজিল, সুরিনাম ও ফ্রেঞ্চ গায়ানার দক্ষিণে এই পাখি বেশি পাওয়া যায়। তারা খুব দ্রুত একদিনেই মাইলের পর মাইল উড়তে পারে। খেলা শেখা ও কথা বলার দক্ষতায় মোটামুটি পারঙ্গম। ফল, ফুল, বীজ, বাদাম ও পোকা-মাকড় খায়।

ফারহাদের ধারণা, একবার কেউ পাখি পুষতে শুরু করলে সে পাখি ছাড়া আর কিছুই বুঝবে না। 'আপনি অফিস শেষে যখন বাসায় ফিরবেন, পাখির সামনে বসলে কোথা দিয়ে আপনার দুই-তিন ঘণ্টা কেটে যাবে বুঝতেই পারবেন না। ক্লান্তি সব দূর হয়ে যাবে', বললেন ফারহাদ। তবে শখের বসে পাখি পালতে গিয়ে এখন তিনি একজন বিক্রেতাও বনে গেছেন। বাসায় পালিত পাখিদের বাচ্চা হলে সেগুলো বিক্রি করেন। বেশিরভাগ বিক্রি হয় অনলাইনে, পরিচিতদের মাঝে। মাঝেমধ্যে হাটেও আসেন—কখনো কিনতে, কখনো বিক্রি করতে।
হাটে পাখি কিনতে আসা অধিকাংশ ক্রেতাই নিজেরাও বিক্রেতা। বড় বড় বিক্রেতাদের ভিড়ে দেখা যায় অনেককে, যারা দুই-একটি পাখি নিয়ে এসেছেন বিক্রির জন্য।
এক বিক্রেতা জানালেন, ছোট-বড় মিলিয়ে দেশে এখন কয়েক হাজার পাখির খামারি আছেন। তাদের মধ্যে নারী খামারির সংখ্যাও কম নয়। লাভ বার্ড বা বাজরিগারের খামারই বেশি হয়, কারণ এই পাখিগুলোর দাম সাধ্যের মধ্যে এবং লালন-পালনও সহজ। ঠিকঠাক যত্ন নিলে এক জোড়া পাখি বছরে দুই-তিনবার ডিম দেয়। তাই ৫০০ টাকার এক জোড়া পাখি থেকে দুই-তিন হাজার টাকা উপার্জন সম্ভব। এরকম ১০ জোড়া পাখি থাকলে সংসারে অনেক সাশ্রয় হয়।

'পাখিতে মাইন্ড ফ্রেশ'
হাট বসানোর পরের সাত-আট বছর পর্যন্ত মিরপুর, গাবতলী, আমিনবাজার, কল্যাণপুরবাসীর যাতায়াত ছিল বেশি। পরে সারা ঢাকা থেকেই মানুষের আনাগোনা বাড়ে। এর মধ্যে পাখি ও প্রাণীর প্রতি মানুষের আগ্রহও বাড়তে থাকে। পাখির খাবার ও পাখি বিক্রির কয়েকটি স্থায়ী দোকানও গড়ে ওঠে।
অমিত বার্ড হাউজের মালিক মোহাম্মদ কফিল উদ্দিন নিজ হাতে খাঁচা তৈরি করে বিক্রি করেন। তিনি জানালেন, এককালে তার কাকার দোকান ছিল এখানে। পরে তিনিই ব্যবসা শুরু করেন। তার ধারণা, হাটের বয়স এখন ২৫ থেকে ৩০ বছর।
কেন দিনে দিনে পাখির প্রতি মানুষের প্রেম বেড়ে গেল? উত্তর দিলেন মিরপুর বার্ড হাউজের পারভেজ হোসেন। বললেন, 'পাখি পুষলে মাইন্ড ফ্রেশ থাকে। সারাদিনের ঝুটঝামেলা সব ফুরিয়ে যায়, পোষা পাখিটা ডেকে উঠলে বা আদর চেয়ে মাথা এগিয়ে দিলে। পাখির যত্ন-আত্তিতে সময় দিলে দুশ্চিন্তার সময়ই থাকে না।'

আড্ডায় ছিলেন আবু হোরায়রাও, যিনি মিরপুর পাখির হাটের সফল ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত। পাখি পোষা শুরু করেছিলেন ক্লাস নাইনে পড়ার সময়। একটি শালিক কিনেছিলেন ১২০০ টাকায়। ফেরার পথে অনেকে জানতে চাইছিলেন, বিক্রি করবেন কি না। হোরায়রা হঠাৎ করেই ৩৫০০ টাকা দাম চেয়ে ফেলেন। একজন ৩০০০ টাকা দিয়ে কিনেও ফেলেন। তখনই ভাবলেন, চাকরি-বাকরি নয়, পাখির ব্যবসাই করবেন। এর মধ্যে তিনি গ্র্যাজুয়েট হন। দেশি পাখি-প্রাণী বেচাকেনা নিষিদ্ধ জানার পর ঝুঁকেন বিদেশি পাখির দিকে। এখন ম্যাকাও, আফ্রিকান গ্রে প্যারট বা অ্যামাজন প্যারট বিক্রি করেন। সাধারণত আমদানিকারকদের কাছ থেকে পাখি সংগ্রহ করেন, অনলাইনে বিক্রি করেন।
পারভেজ হোসেনের মতো হোরায়রাও মনে করেন, 'পাখির সঙ্গে যার যত ভাব, তার কষ্ট তত কম।'
ছবি: জুনায়েত রাসেল