ডেঙ্গুতে গর্ভবতী নারীদের ঝুঁকি বেশি, সতর্কতার পরামর্শ চিকিৎসকদের

দেশে মশাবাহিত রোগের প্রকোপ বাড়তে থাকায় জ্বর হলেই গর্ভবতী নারীদের ডেঙ্গু পরীক্ষা করার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা। ডেঙ্গু পরীক্ষার ফলাফল ইতিবাচক আসলে গর্ভবতী নারীদের তারা অবিলম্বে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন।
চিকিৎসকদের মতে, চলতি বছরে গর্ভবতী নারীদের মশাবাহিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে গত ২৭ জুলাই ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রুমা বিশ্বাস (২৬) নামে ৯ মাসের এক গর্ভবতী নারীর মৃত্যু হয়। তার আগে, গত ২৫ জুলাই মারা যান ৮ মাসের গর্ভবতী বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব এস এম নাজিয়া সুলতানা। এর আগে, গত ২৩ জুলাই ডেঙ্গুতে মারা যান বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক কান্তা বিশ্বাস। কান্তা বিশ্বাসও ৮ মাসের গর্ভবতী ছিলেন।
এ বছর এখন পর্যন্ত ৪ জন গর্ভবতী নারী ডেঙ্গুতে মারা গেছেন বলে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে নিশ্চিত করেছেন স্বাস্থ্য সেবা অধিদপ্তর (ডিজিএইচএস)-এর পরিচালক, এমআইএস, অধ্যাপক ডা. শাহাদাত হোসেন।
এমএইচ সমরিতা মেডিকেল কলেজের প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. নাহলা বারী বলেন, গর্ভবতী মায়ের জ্বর, ঠাণ্ডা, কাশি যাইহোক না কেনো ডেঙ্গু টেস্ট করতে হবে। ডেঙ্গু পজিটিভ হলে হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে। কারণ ডেঙ্গুতে গর্ভবতী মায়েদের ঝুঁকি বেশি।
''এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত গর্ভবতী মায়ের সংখ্যা অনেক বেশি দেখা যাচ্ছে। আইসিইউতেও নিতে হয়েছে দুই একজনকে। গর্ভাবস্থায় ডেঙ্গু হলে মা ও শিশুর ঝুঁকি বেড়ে যায়। জ্বরের ৪র্থ, ৫ম দিন রোগীর অবস্থা বেশি খারাপ হয়ে যায়, তাই বেশি সতর্ক থাকতে হবে সে সময়," যোগ করেন তিনি।
গর্ভকালীন অবস্থায় প্রাকৃতিকভাবেই শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা দুর্বল থাকে বিধায় এ সময় গর্ভবতী নারীদের ডেঙ্গু হেমোরেজিক ও শক সিনড্রোমে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও বেশি থাকে বলে উল্লেখ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
গর্ভবতী নারী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে মা ও গর্ভস্থ শিশুর জীবনে মারাত্মক জটিলতা দেখা দিতে পারে।
ডা. নাহলা বারী আরও বলেন, "গর্ভকালীন প্রথম তিন মাসে ঘন ঘন বমির কারণে এমনিতেই শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দেয়। এ সময় গর্ভবতী নারী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে অত্যধিক জ্বরে শরীরে আরও বেশি পানিশূন্যতা দেখা দেয়, রক্তচাপ কমে যায়। এর ফলে গর্ভপাত হতে পারে।"
'ডেঙ্গু ইনফেকশন অ্যান্ড মিসক্যারেজ: আ প্রোসপেক্টিভ কেস কন্ট্রোল' শীর্ষক এক গবেষণা অনুসারে, ডেঙ্গুতে অসুস্থতা গুরুতর পর্যায়ে গেলে গর্ভপাত এবং মৃতপ্রসব হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। ডেঙ্গু গর্ভাবস্থার পরবর্তী পর্যায়ে অসুস্থ মায়ের কাছ থেকে সরাসরি প্ল্যাসেন্টার মাধ্যমে তা ভ্রূণকেও সংক্রমিত করতে পারে।
সম্প্রতি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত শেখ হাসিনা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিকের একজন নার্সের ১৭ সপ্তাহের ভ্রূণ গর্ভপাত হয়েছে বলে জানা গেছে।
শেখ হাসিনা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারির ব্লাড ট্রান্সফিউশন সহকারী অধ্যাপক ডা. আশরাফুল হক টিবিএসকে বলেন, "গর্ভকালীন সময়ে নারীদের শরীরে অনেক ধরনের পরিবর্তন আসে। গর্ভকালীন অবস্থায় ডেঙ্গু হলে তাই অনেকেই প্রাথমিক পর্যায়ে বুঝতে পারেন না। মাথা ব্যাথা, বুক ও পেটের সংযোগ স্থলে ব্যাথা হওয়া, বমি ভাব লাগা ইত্যাদি গর্ভকালীন উপসর্গ হলেও এগুলা ডেঙ্গুরও লক্ষণ তাই সতর্ক থাকতে হবে।"
ডা. আশরাফুল হক আরও বলেন, "গর্ভকালীন সময়ে ফ্লুইড অনেক হিসাব করেই দেওয়া লাগে, যেহেতু এ সময় তাদের শরীরে ফ্লুইড এমনিতেই বেশি থাকে। তাই ফ্লুইড ম্যানেজমেন্টে সতর্ক থাকতে হবে।"
"গর্ভকালীন ডেঙ্গুকে সম্পূর্ণ পৃথকভাবেই দেখা উচিত এবং নিয়মিত চিকিৎসকের অধীনে থাকাটাও একান্ত জরুরি,যোগ করেন তিনি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃতদের মধ্যে নারীদের সংখ্যা বেশি। এ বছর ডেঙ্গুতে মৃতদের মধ্যে ৫৭ শতাংশই নারী।
শুক্রবার সকাল পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আরও ৯ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে; এ নিয়ে চলতি বছরে দেশে মশাবাহিত রোগে মৃতের সংখ্যা ৪৫৩ জনে দাঁড়িয়েছে। এ সময়ের মধ্যে ভাইরাল জ্বরে আক্রান্ত হয়ে আরও ১,৫৬৫ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন বলে জানা গেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে।
চলতি বছরে মোট ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ৯৫,৮৭৭ জন।