চট্টগ্রাম বন্দরের বাইরে যাচ্ছে এলসিএল কার্গো খালাস কার্যক্রম: কমবে পণ্য ডেলিভারির সময়

চট্টগ্রাম বন্দরে এলসিএল (লেস দ্যান কন্টেইনার লোড) কন্টেইনার আনস্টাফিং এবং পণ্য খালাস কার্যক্রম চলতি বছরের আগস্ট থেকে বন্দরের বাইরে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
বন্দরের চার নম্বর গেট থেকে ২.২ কিলোমিটার দূরত্বে বন্দরের দুটি শেডে শুরু হবে এই কার্যক্রম। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ৬ মিনিটে কন্টেইনার পৌঁছানো যাবে এই শেড দুটিতে।
পাঁচ একর জমির ওপরে শেড দুটির আয়তন ১৮,৯০৬ বর্গ মিটার। বন্দরের বর্তমান ট্যারিফ অনুযায়ী এ থেকে ভাড়া আদায় করা হবে।
বন্দরের পরিত্যক্ত শেড দুটি সংস্কার, সড়ক ও ইয়ার্ড নির্মাণসহ পুরো কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বে কার্গো সেন্টার। ইতোমধ্যে কার্যক্রম শুরুর সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
এই উদ্যোগের ফলে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কন্টেইনার আসার ২৪ ঘন্টার মধ্যেই কন্টেইনার থেকে পণ্য খুলে ডেলিভারি দেওয়া যাবে।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ)-এর পরিচালক মোহাম্মদ শামসুল আজম বলেন, "বর্তমানে এলসিএল কার্গো খালাসে সময় লাগে ৭ দিন। এক দিনের মধ্যে কার্গো ডেলিভারি নিতে পারলে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে আমাদের লিড টাইম কমে যাবে। এটি নিঃসন্দেহে একটি ভালো খবর। তবে বন্দরের চার্জ যাতে একই থাকে সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।"
আনস্টাফিং, পণ্য ডেলিভারিসহ অন্যান্য খরচ যাতে বন্দরের বিদ্যমান ট্যারিফ অনুযায়ী হয়, তা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরাও।
এলসিএল কী?
যে কন্টেইনারে একাধিক আমদানিকারকের পণ্য বহন করা হয় তাকে এলসিএল কন্টেইনার বলে।
এ ধরনের কন্টেইনারগুলো গুলো চট্টগ্রাম বন্দরের ইয়ার্ডে খুলে শেডে রাখা হয়। সেখান থেকে সংশ্লিষ্ট আমদানিকারকরা পণ্য ডেলিভারি নেন।
আর যে কন্টেইনারে শুধুমাত্র একজন আমদানিকারকের পণ্য থাকে সেটিকে বলা হয় এফসিএল (ফুল লোড কন্টেইনার)।
বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে প্রতিদিন আমদানি পণ্যবাহী ৩,০০০ থেকে ৩,৫০০ টিইইউ কন্টেইনার ডেলিভারি হয়। এর ১০ শতাংশ এলসিএল কন্টেইনারের পণ্য।
কেন এই পদক্ষেপ?
চট্টগ্রাম বন্দর থেকে এলসিএল কার্গো ডেলিভারি নিতে দেরি হলেই ধারণক্ষমতার বেশি পণ্য জমে যেতো। শেডে স্থান সংকুলান না হওয়ায় বন্দর ইয়ার্ডে বিঘ্নিত হতো আনস্টাফিং, বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম। এমন পরিস্থিতিতে দ্রুত পণ্য ডেলিভারি নিতে বন্দর কর্তৃপক্ষ প্রায়শই চিঠি দিতো আমদানিকারক, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ সহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনকে।
এছাড়া, চট্টগ্রাম বন্দর ২০০৪ সাল থেকে আইএসপিএস (ইন্টারন্যাশনাল শিপ অ্যান্ড পোর্ট ফ্যাসিলিটি সিকিউরিটি) কোড বাস্তবায়ন করে আসছে। এই কোড বাস্তবায়নে ইউএস কোস্ট গার্ডের প্রতিনিধিদলের একাধিক পরিদর্শনে বন্দরের ডেলিভারি কার্যক্রম বন্দরের বাইরে সরানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। আইএসপিএস কোড বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে আনস্টাফিং কার্যক্রম সরানোর উদ্যোগ নেয় বন্দর কর্তৃপক্ষ।
পর্যায়ক্রমে বন্দরের ভেতরে থাকা পুরোনো শেডগুলো ভেঙ্গে ফেলার পরিকল্পনাও রয়েছে বন্দরের।
ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান
বে কার্গো সেন্টার জানায়, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ গত ৮ সেপ্টেম্বর কোম্পানিটির সঙ্গে পাঁচ বছরের চুক্তি করে।
প্রতিষ্ঠানটির জেনারেল ম্যানেজার কাজী আশেক আহমেদ টিবিএসকে জানান, "চুক্তি সইয়ের পরপরই শেড দুটি সংস্কারের কাজ শুরু করা হয়। একটি শেড আনস্টাফিংয়ের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত। এছাড়া, সড়ক, ইয়ার্ড নির্মাণ কাজও শেষ হয়েছে।"
"প্রাথমিকভাবে প্রতিদিন ৭৫ থেকে থেকে ১০০ কন্টেইনার আনস্টাফিং করে ডেলিভারি দিতে পারবো। বন্দর কর্তৃপক্ষ পরবর্তীতে কন্টেইনার সংখ্যা বাড়াতে পারবে," যোগ করেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, "জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের অনুমোদন পেলে আমরা কার্যক্রম শুরু করে দিতে পারি। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কন্টেইনার আসার ২৪ ঘন্টার মধ্যে কন্টেইনার থেকে পণ্য খুলে ডেলিভারি দেওয়া সম্ভব হবে।"
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের জয়েন্ট কমিশনার মুশফিকুর রহমান টিবিএসকে বলেন, "শেডে আনস্টাফিং কার্যক্রম শুরু করতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে বন্ড লাইসেন্সের আবেদন করে চট্টগ্রাম বন্দর। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন স্টেক হোল্ডারদের সাথে গত ১৪ জুন বৈঠক করে কাস্টম হাউস। আগামী ১ মাসের মধ্যে আমরা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে মতামত পাঠাব।"
বর্তমান স্টোর রেন্ট বা ভাড়া
চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনার থেকে পণ্য বের করে শেডে রাখার পর ৪ দিন ফ্রি টাইম ধরা হয়। ফ্রি টাইম পার হওয়ার পরবর্তী ৭ দিন পর্যন্ত প্রতিদিন টন প্রতি ১৬ দশমিক ৭২ টাকা স্টোর রেন্ট বা ভাড়া দিতে হয় আমদানিকারকদের। ৮ম দিন থেকে ১৪ তম দিন পর্যন্ত টনপ্রতি ৪১ দশমিক ৮০ টাকা, এবং পরবর্তী দিনগুলোতে প্রতিদিন ৬৬ দশমিক ৮৮ টাকা স্টোর রেন্ট দিতে হয়।
চট্টগ্রাম বন্দরে এলসিএল পণ্য সংরক্ষণের জন্য মোট ১১ টি শেড রয়েছে। এরমধ্যে চট্টগ্রাম কন্টেইনার টার্মিনালে (সিসিটি) ১ টি, নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনালে (এনসিটি) ১ টি, ওভারফ্লো ইয়ার্ডে ১ টি, জেনারেল কার্গো বার্থে (জিসিবি) ৮ টি। এই এলসিএল শেডগুলোতে ১,০০০ টিইইউএস কন্টেইনারের পণ্য রাখা যায়।