চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে কোভিড-১৯ এর নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে সতর্কতা জারি

কোভিড-১৯ ভাইরাসের নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্বাস্থ্য সতর্কতা জারি করেছে কর্তৃপক্ষ।
বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ গতকাল (১৯ জুন) পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন শেখ আবদুল্লাহ আল-মামুন স্বাক্ষরিত এক অফিসিয়াল নোটিশের মাধ্যমে এই নির্দেশনা জারি করে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাম্প্রতিক এক পরামর্শের বরাত দিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, পার্শ্ববর্তী একাধিক দেশে ওমিক্রনের নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্ট—এলএফ.৭, এক্সএফজি, জেএন.১ ও এনবি.১.৮.১—জনিত সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
এই ভ্যারিয়েন্টগুলোর আন্তর্জাতিক যাত্রীদের মাধ্যমে বাংলাদেশে প্রবেশ ঠেকাতে, দেশের সব প্রবেশপথ—স্থল, নৌ ও আকাশপথে—নজরদারি জোরদার এবং ঝুঁকি সংক্রান্ত যোগাযোগ কার্যক্রম বাড়াতে নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
সাধারণ মানুষের জন্য স্বাস্থ্যবিধির মধ্যে রয়েছে—সাবান দিয়ে কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড হাত ধোয়া, নাক ও মুখ ঢেকে মাস্ক পরা, উপসর্গ রয়েছে এমন ব্যক্তির কাছ থেকে অন্তত তিন ফুট দূরত্ব বজায় রাখা, না ধোয়া হাতে মুখে স্পর্শ না করা এবং হাঁচি-কাশির সময় কনুই, টিস্যু বা কাপড় দিয়ে মুখ ঢেকে রাখা।
বিজ্ঞপ্তিতে আন্তর্জাতিক প্রবেশপথে (পিওই) অনুসরণীয় স্বাস্থ্যবিধিও উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে—আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্যবিধি (আইএইচআর ২০০৫) অনুসারে স্বাস্থ্য ডেস্কে নজরদারি বাড়ানো, থার্মাল স্ক্যানার ও ডিজিটাল হ্যান্ডহেল্ড নন-কন্ট্যাক্ট থার্মোমিটারের মাধ্যমে স্বাস্থ্য পরীক্ষা নিশ্চিত করা এবং পর্যাপ্ত ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (পিপিই)—যেমন মাস্ক, গ্লাভস ও সুরক্ষাবস্ত্র মজুত রাখা।
এছাড়াও, ভাইরাস প্রতিরোধে সচেতনতামূলক প্রচারপত্র বিতরণ এবং ভারতসহ সংক্রমণ-প্রবণ দেশগুলোতে অপ্রয়োজনীয় ভ্রমণ এড়িয়ে চলার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে।
সন্দেহভাজন রোগীদের জন্য নির্দেশনায় বলা হয়েছে, অসুস্থ বোধ করলে ঘরে অবস্থান করতে, গুরুতর উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসা নিতে, রোগী যেন অবশ্যই নাক-মুখ ঢেকে মাস্ক পরেন এবং প্রয়োজনে আইইডিসিআর হটলাইনে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
বিমানবন্দরের কর্মকর্তা, কর্মচারী এবং সংশ্লিষ্ট সব সরকারি-বেসরকারি অংশীদারদের এসব স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মানার আহ্বান জানানো হয়েছে, যাতে দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণ আবারও না বাড়ে।
চট্টগ্রামে নতুন ৬ জনের করোনা শনাক্ত
চট্টগ্রামে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৬ জনের শরীরে করোনা ভাইরাসের জীবাণু শনাক্ত হয়েছে। তবে এদিন কোনো রোগীর মৃত্যু হয়নি। এ পর্যন্ত চট্টগ্রামে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ালো ৫৬ জনে।
শুক্রবার (২০ জুন) বিকেলে সিভিল সার্জন কার্যালয়ের প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, চট্টগ্রামের ৬টি ল্যাবে গত ২৪ ঘণ্টায় ৮১টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ১৩টি, শেভরনের ল্যাবে ১৬টি, মেডিকেল সেন্টার হাসপাতাল ল্যাবে ১৩টি, ন্যাশনাল হাসপাতালে ১৭টি, মেট্রোপলিটন হাসপাতালে ১০টি, এবং এভারকেয়ার হাসপাতাল ল্যাবে ১২টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষার ফলাফলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ল্যাবে ১ জন, শেভরনের ল্যাবে ২ জন, ন্যাশনাল হাসপাতাল ল্যাবে ১ জন এবং মেট্রোপলিটন হাসপাতালে ২ জন নতুন করোনা রোগী শনাক্ত হন।
চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানান, গত ২৪ ঘণ্টার ৮১ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৬ জন করোনা আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন। নতুন আক্রান্তদের মধ্যে ৬ জনই নগরীর এলাকার বাসিন্দা।
চট্টগ্রামে করোনা আক্রান্ত ৫৬ জনের মধ্যে ৪৯ জনই নগরীর বাসিন্দা। বাকি ৭ জন বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা। নতুন করে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ার মধ্যে চট্টগ্রামে এ পর্যন্ত ১ জনের মৃত্যু হয়েছে