বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড কমলেও ২০২২ সালে গুরুতর হয়েছে দুর্নীতি: মার্কিন প্রতিবেদন

বাংলাদেশে আগের বছরের তুলনায় ২০২২ সালে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নাটকীয়ভাবে কমলেও আগের মতোই অব্যাহত রয়েছে গুম ও অপহরণের ঘটনা। আর এসব হত্যা, গুম ও অপহরণের সঙ্গে দেশের আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে সম্প্রতি প্রকাশিত এক মার্কিন প্রতিবেদনে।
সোমবার (২০ মার্চ) মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর প্রকাশিত '২০২২ কান্ট্রি রিপোর্টস অন হিউম্যান রাইটস প্র্যাকটিসেস' শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশে হওয়া সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলো অবাধ ও সুষ্ঠু বলে বিবেচিত নয়, কারণ সেখানে গুরুতর অনিয়ম সংঘটিত হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২ সালে বাংলাদেশে দুর্নীতি একটি গুরুতর সমস্যা হিসেবেই রয়ে গেছে। 'ফ্রিডম হাউসের বার্ষিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সেখানে দুর্নীতি স্থানীয় সমস্যা এবং দুর্নীতিবিরোধী প্রচেষ্টাকে রাজনৈতিক প্রয়োগের মাধ্যমে দুর্বল করা হয়'।
'প্রাথমিকভাবে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, মাদক এবং অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ইত্যাদি প্রতিরোধের জন্য সারাবছর ধরেই সেখানে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন অভিযান চলতে থাকে। তবে কিছু অভিযান, গ্রেপ্তার এবং আইন প্রয়োগকারী অভিযানের সময় সন্দেহজনক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা প্রায়শই এই ধরনের মৃত্যুতে তাদের ভূমিকা অস্বীকার করেন।'
প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে, 'মানবাধিকার গোষ্ঠী এবং গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গুম এবং অপহরণ অব্যাহত রয়েছে; অভিযোগ রয়েছে, এ ধরনের ঘটনার সঙ্গে দেশের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা জড়িত। একটি স্থানীয় মানবাধিকার সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে দেশটিতে ১৬ জন লোককে জোরপূর্বক গুম করা হয়েছে।'
এদিকে, এই ধরনের কাজ প্রতিরোধ, তদন্ত বা শাস্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের দিক থেকে সীমিত প্রচেষ্টা ছিল বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
বলা হয়েছে, জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে হুমকির প্রতিক্রিয়া জানানোর অজুহাতে মিথ্যা অভিযোগে বিরোধী দলগুলোর সদস্যদের গ্রেপ্তার ও বিচারের ক্ষেত্রে প্রায়শই রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা দেখা গেছে।
আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে উল্লেখ করা হয়েছে, ওই বছরে বেশ কয়েকটি স্থানীয় সরকার নির্বাচনের সময় ভোটকেন্দ্রে কম ভোটার উপস্থিতি, ভয়ভীতি, অনিয়ম এবং ভোটদানের সময় সহিংসতার ঘটনা ঘটতে দেখা গেছে।
এছাড়া, মার্কিন প্রতিবেদনে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর নিষেধাজ্ঞা এবং সেলফ-সেন্সরশিপের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।
বলা হয়েছে, অনলাইন এবং অফলাইনে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর উল্লেখযোগ্য সীমাবদ্ধতা ছিল দেশে। মিডিয়া এবং ব্লগাররা হয়রানি ও প্রতিশোধের ভয়ে সরকারের সমালোচনা থেকে বিরত থেকেছেন বা সমালোচনাগুলো সেলফ-সেন্সর করেছেন।
সেইসঙ্গে সরকারের মহামারি মোকাবেলার কৌশল নিয়ে প্রশ্ন তোলাসহ সরকারের সমালোচনাকারী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যাপকভাবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ব্যবহার করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। এই আইন লাগাতার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, ওয়েবসাইট এবং অন্যান্য ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে পাওয়া বক্তব্যের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ বিরোধী দলগুলোর জমায়েত নিষিদ্ধ করে চলেছে এবং পর্যবেক্ষকরা পারমিটের জন্য বিষয়টিকে অযৌক্তিক প্রয়োজনীয়তা হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পুলিশ বা ক্ষমতাসীন দলের কর্মীদের প্রায়শই বিরোধী দল, সংগঠন এবং কর্মীদের বিক্ষোভ-সমাবেশকে ছত্রভঙ্গ করার জন্য বলপ্রয়োগ করতে দেখা যায়।
এছাড়া, বিরোধী দলের নেতা-কর্মীরা পুরো বছর জুড়েই দলের প্রতি অসংখ্য বিধিনিষেধের কথা জানিয়েছেন বলে উল্লেখ রয়েছে প্রতিবেদনে। আরও উল্লেখ রয়েছে, বিরোধী দল বিএনপিকে নিয়মিত সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হয়নি এবং তাদের সমাবেশ অনুষ্ঠানে কর্তৃপক্ষ ও ক্ষমতাসীন দলের কর্মীদের দিয়ে ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে।