মাওলানা রইস উদ্দিনের ‘বিচার বহির্ভূত হত্যা’র বিচারের দাবিতে ১০২ নাগরিকের বিবৃতি

গাজীপুরে মাওলানা রইস উদ্দিনের মৃত্যুকে 'বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড' আখ্যা দিয়ে দেশের বিশিষ্ট নাগরিকদের একটি দল দোষীদের দ্রুত বিচার ও শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। তারা বলছেন, স্বৈরাচার পতনের পরও দেশে মব ভায়োলেন্স ও রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের ধারাবাহিকতা বন্ধ হয়নি।
নাগরিকদের বিবৃতিতে বলা হয়, গত ২৭ এপ্রিল গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের হায়দারাবাদ এলাকার আখলাদুল জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব মাওলানা রইস উদ্দিনকে স্থানীয় কিছু লোক দুই মাস আগের একটি অভিযোগের ভিত্তিতে আটক করে নির্যাতন চালায়। এরপর সকাল ১০টায় পুলিশ তাকে হেফাজতে নেয়। অভিযোগ রয়েছে, তাকে কোনো রকম খাবার বা চিকিৎসা না দিয়েই সন্ধ্যা ৭টায় কারাগারে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাহীন অবস্থায় ভোর ৪টায় তার মৃত্যু ঘটে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এ ঘটনায় দুটি বিষয় স্পষ্ট— এক, মব ভায়োলেন্সের নির্মম নির্যাতন; দুই, পুলিশ ও কারা কর্তৃপক্ষের অমানবিক আচরণ। তারা বলেন, 'মব ভায়োলেন্সে নির্যাতনের শিকার হওয়ার পর যদি পুলিশ তার নাগরিক অধিকারের স্বার্থে অভিযুক্তকে খাদ্য ও চিকিৎসা সরবরাহ করতো তাহলে হয়তো এই নির্মম মৃত্যুর মুখোমুখি হতে হতো না।'
'স্বৈরাচার পতনের ৮ মাস পরও এমন মব ভায়োলেন্স, পুলিশের নির্মম ও অমানবিক আচরণ সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য। কেন আমরা পুলিশী ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন চাই তার একটি দৃষ্টান্ত এই ঘটনা। আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। স্বৈরাচারমুক্ত বাংলাদেশে একজন নাগরিকের এমন নির্মম মৃত্যু মেনে নেওয়া যায় না', বলা হয় বিবৃতিতে।
বিবৃতিদাতারা বলেন, 'এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার সাথে জড়িত মব ভায়োলেন্সের উদ্যোক্তা এবং অংশগ্রহণকারী, মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা থানা পুলিশ ও কারা কর্তৃপক্ষ— প্রত্যেককে শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি। সুপ্রিম কোর্টের অধীনে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে এই মামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার নিশ্চিতের জোর দাবি জানাচ্ছি। আমরা আশা করছি, এই মামলার তদন্ত ও বিচারের মাধ্যমে মব ভায়োলেন্স নামে রাহাজানি এবং নির্মম পুলিশী ব্যবস্থার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।'
বিবৃতিতে স্বাক্ষরদাতাদের মধ্যে রয়েছেন— আনু মুহাম্মদ (সদস্য, গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি), সামিনা লুৎফা (শিক্ষক, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়), জ্যোতির্ময় বড়ুয়া (আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট), রাখাল রাহা (কথাসাহিত্যিক ও আহ্বায়ক, শিক্ষা ও শিশু রক্ষা আন্দোলন), আর রাজী (অধ্যাপক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়), জাহেদ উর রহমান (শিক্ষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক), পারভেজ আলম (লেখক, গবেষক ও অ্যাক্টিভিস্ট), ফেরদৌস আরা রুমী (কবি ও অধিকার কর্মী), দেবাশিস চক্রবর্তী (শিল্পী ও লেখক), দিদারুল ভূঁইয়া (সদস্য, ডিএসএ ভিক্টিমস নেটওয়ার্ক), জিএইচ হাবীব (অনুবাদক ও শিক্ষক), বাকী বিল্লাহ (লেখক ও রাজনৈতিক কর্মী), রাফসান আহমেদ (চলচ্চিত্রকার), সৈকত আমীন (কবি ও সাংবাদিক), হাসান মারুফ রুমি (রাজনৈতিক সংগঠক), আব্দুল্লাহ মহিউদ্দিন (মুক্তিযোদ্ধা), পুন্নি কবীর (শিক্ষার্থী, কোলন বিশ্ববিদ্যালয়, জার্মানি), মারজিয়া প্রভা (অ্যাক্টিভিস্ট), অলিউর সান (শিক্ষক, ইউল্যাব), মোকাররম হোসাইন (শিক্ষক, সাইডার ইন্টারন্যাশনাল স্কুল), মোহাম্মদ রোমেল (চলচ্চিত্রকার, কবি ও সংগঠক), বীথি ঘোষ (শিক্ষক ও সাংস্কৃতিক সংগঠক), অরূপ রাহী (চিন্তক ও শিল্পী), মোস্তাকিমবিল্লাহ মাসুম (সদস্য, রাষ্ট্রচিন্তা), তুহিন চৌধুরী (অ্যাক্টিভিস্ট), নাশাদ ময়ুখ (কবি ও লেখক), মোহাম্মদ আবু সাঈদ (লেখক ও আর্কাইভিস্ট), এএইচএম শাহীন (লেখক ও সংগঠক), আসবাবীর রাফসান (মূকাভিনেতা ও রাজনৈতিক সংগঠক), আরমান হোসাইন (রাজনৈতিক সংগঠক), ইমেল হক (নির্মাতা), নফিউল ইসলাম (লেখক ও সংগঠক), জাবেদ আহমেদ (আয়কর আইনজীবি), আহমেদ ইসহাক (কবি ও সংগঠক), এহসান (রাজনৈতিক সংগঠক), ফারহা তাহসিন (শিক্ষার্থী, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়), জাহিদ জগৎ (লেখক ও অ্যাক্টিভিস্ট), ইমতিয়াজ মির্জা (সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার ও অ্যাক্টিভিস্ট), নুসরাত জাহান সুমনা (শিক্ষার্থী, দিল্লি ইউনিভার্সিটি), শান্তনু বোস (লেখক ও অ্যাক্টিভিস্ট), কায়েস মাহমুদ স্নিগ্ধ (কবি), রাফসান গালিব (লেখক ও অনুবাদক), ইফতেখার জামিল (লেখক ও গবেষক), মওলবি আশরাফ (লেখক ও গবেষক), সৈয়দ হাসান ইমতিয়াজ (জনস্বাস্থ্য গবেষক), সোয়েব মাহমুদ (কবি), সুলাইম মাহমুদ (সদস্য, জুলাই রেকর্ডস), মীর হুজাইফা আল-মামদূহ (লেখক ও গবেষক), শেখ এখতিয়ার বাকী (লেখক ও অ্যাক্টিভিস্ট), মুহম্মদ নাহিয়ান (লেখক ও অ্যাক্টিভিস্ট), রহমান মুফিজ (কবি ও সাংবাদিক), খান আইয়্যুব (লেখক ও অ্যাক্টিভিস্ট), মিশকাত আল আলভী (পিএইচডি গবেষক), আরিফুল আলম (অ্যাক্টিভিস্ট), তাশরিক হাসান (অ্যাক্টিভিস্ট), পুলিন বকসী (লেখক ও অ্যাক্টিভিস্ট), ইরফানুর রহমান রাফিন (লেখক, গবেষক ও অনুবাদক), হুমায়ুন কবির (অর্থনীতি গবেষক), রাহুল বিশ্বাস (লেখক ও গবেষক), হাসান ইনাম (লেখক ও অ্যাক্টিভিস্ট), শোয়েব আব্দুল্লাহ (মানবাধিকার কর্মী), ইয়াসির আরাফাত (সাংবাদিক), শাওন চিশতী (আর্টিস্ট), হাসিবুল ইসলাম (লেখক ও গবেষক), সামিউল আজীম (কবি), মোশরেফা মিশু (রাজনৈতিক সংগঠক), কৌশিক আহমেদ (সদস্য, জনভাষ্য), গোলাম সারওয়ার (সহযোগী অধ্যাপক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়), মিজানুর রহমান মিজান (গবেষক ও অ্যাক্টিভিস্ট), সামি আব্দুল্লাহ (ছাত্র নেতা), তসলিমা আক্তার বিউটি (শ্রমিক নেত্রী), আরিফ রহমান (লেখক), তানিয়াহ মাহমুদা তিন্নি (শিক্ষক, ইউআইইউ), সৈয়দুল হক (লেখক), সৈয়দ ফরহাদ (কবি ও সংগীত শিল্পী), মাসুদ জাকারিয়া (নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ পলিটি), অরুণাভ আশরাফ (শিক্ষার্থী), মাহির আহনাফ হোসেন (শিক্ষার্থী), সৌরভ চৌধুরী (উদ্যোক্তা সংগঠক, জুলাই নেটওয়ার্ক), সাজিদ উল ইসলাম (চিত্রশিল্পী), জাফর হোসেন (সভাপতি, নয়াগণতান্ত্রিক গণমোর্চা), তাওফিকা প্রিয়া (রাজনৈতিক সংগঠক), আকরাম খান (চলচ্চিত্রকার), কাজী আবদুর রহমান (অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ), সবুজ শহিদুল ইসলাম (রাজনৈতিক সংগঠক), ধ্রুব দাশ (চলচ্চিত্র নির্মাতা), আশিকুর রহমান অনিক (স্বাধীন চলচ্চিত্র নির্মাতা), মোহাম্মদ আলী হায়দার (থিয়েটারকর্মী), সজীব তানভীর (স্বাধীন চলচ্চিত্র নির্মাতা), সীমা দত্ত (নারী অধিকার নেত্রী), কাজী সফিকুল ইসলাম রাব্বী (পলিটিক্যাল অ্যাক্টিভিস্ট), পূরবী তালুকদার (অ্যাক্টিভিস্ট), সুস্মিতা রায় সুপ্তি (সংস্কৃতি কর্মী), ডা. নাজমুস সাকিব (দন্ত্য চিকিৎসক), সৈকত দে (গদ্যকার), রাফিকুজ্জামান ফরিদ (ছাত্রনেতা), মাসুদ রেজা (শ্রমিক নেতা), কাজী ফরিদ (অধ্যাপক, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়), স্বপন ইসলাম (সাংবাদিক), তানভীর তিয়াস (পরিবেশ আন্দোলন কর্মী), কামরুজ্জামান রিপন (উন্নয়ন কর্মী), মাইনুল হাসান (অধিকার কর্মী) এবং আজাদ হোসেন (রাজনৈতিক সংগঠক)।