নারী নির্যাতন বন্ধে সমস্যার মূলে না গিয়ে আইন সংশোধনের প্রস্তাবে নারীপক্ষের উদ্বেগ

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ এর সংশোধনকল্পে দ্রুত বিচার এবং মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে অন্তর্বর্তী সরকার যে অধ্যাদেশ জারি করতে যাচ্ছে, তা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে নারী অধিকার সংগঠন নারীপক্ষ।
আজ রোববার (১৬ মার্চ) সংগঠনটির আন্দোলন সম্পাদক সাফিয়া আজীমের সই করা এক বিবৃতিতে এ উদ্বেগের কথা জানায় সংগঠনটি।
বিবৃতিতে বলা হয়, এই উদ্যোগ আমাদের উদ্বিগ্ন ও শঙ্কিত করছে। সমস্যার মূলে না গিয়ে কেবল জনতুষ্টি আদায়ের জন্য তড়িঘড়ি আইন সংশোধন অবিবেচনা প্রসূত, যা নারী ও শিশু নির্যাতন এবং তাদের ওপর ধর্ষণ ও যৌন আক্রমণ বন্ধে কোনো সমাধান আনবে না। বরং অপরাধের সুবিচার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে নানা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে।
আরও বলা হয়, আইন-আদালতের মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ড প্রদান রাষ্ট্র দ্বারা হত্যার শামিল এবং মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। মৃত্যুদণ্ড দ্বারা কোনো অপরাধ দমন হয়েছে এমন কোনো প্রমাণ বিশ্বের কোথাও আজও মেলেনি। বিচারের দীর্ঘসূত্রিতা যেমন ন্যায় বিচার প্রাপ্তিতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে, তেমন তড়িৎ বিচারের ফলে বিচারের ফলাফল ত্রুটিপূর্ণ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আইন সংশোধনে আলোচনা প্রয়োজন উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশে নারীর ওপর সহিংসতামূলক অপরাধ সংক্রান্ত আইন ও বিধিবিধান দণ্ডবিধির আওতায় আছে। তারপরেও বিভিন্ন সময়ে নারী নির্যাতনের বিষয়ে বিশেষ বিশেষ আইন প্রণীত হয়েছে। এখন আবার এই আইনে কোন ধরনের অপর্যাপ্ততার কারণে সংশোধনের প্রয়োজন দেখা দিয়েছে, সে বিষয়ে যথেষ্ট আলোচনা-পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ আবশ্যক।
আরও বলা হয়, নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতার মূল কারণ কেবল আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির মধ্যে নিহিত নয়, বরং নারী-পুরুষের মধ্যে বিরাজমান অসমতা ও ক্ষমতার দ্বন্দ্বের মধ্যে নিহিত। তাই নারী ও শিশুর ওপর সহিংসতা প্রতিরোধ ও প্রতিকার স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি বহুমাত্রিক পদক্ষেপ গ্রহণ, বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণের মাধ্যমেই সম্ভব। নারীর প্রতি মানবিক মর্যাদার দৃষ্টান্ত স্থাপন এবং নারীকে নানা কায়দায় অবদমিত বা সঙ্কুচিত করার ঘটনাগুলো প্রতিরোধ করা রাষ্ট্রের অবশ্য দায়িত্ব ও কর্তব্য। নারীর পোশাকপরিচ্ছদ, চলাফেরা, পেশা, সম্পর্ক ইত্যাদির অজুহাতে 'মবসন্ত্রাস' বন্ধ করার দায়িত্ব রাষ্ট্রকেই নিতে হবে। নারী ও শিশুর ওপর নির্যাতন, ধর্ষণ ও যৌন আক্রমণের বিরুদ্ধে সংগঠিত আন্দোলনগুলোর ওপর রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়ন, হামলা-মামলা নারী-আন্দোলনকে অবদমিত করার ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র। এটা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। যেকোনো অন্যায়, অপরাধ ও অবিচারের বিরুদ্ধে সংগঠিত হওয়া বা সংঘবদ্ধ আন্দোলন তৈরি করা নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার।